নান্যাচর গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম
Nannyachar6নান্যাচর : পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, র‌্যালি ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে নান্যাচর গণহত্যার ২২তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে। সমাবেশ থেকে নান্যাচর গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং খুনী সেনা-সেটলারদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার সাথে জড়িত সেনা-সেটলার দুর্বৃত্তদের বিচারের দাবিও জানানো হয়।

মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সকালে ইউপিডিএফ, তিন গণসংগঠন, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে শহীদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। পিসিপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পক্ষে কেন্দ্রীয় সদস্য ধর্মসিং চাকমা, এইচডব্লিএফের পক্ষে সাংগঠনিক সম্পাদক রিনা চাকমা, ইউপিডিএফের পক্ষে রঞ্জন মেম্বার ও সেন্ট্রো মেম্বার, নান্যাচর উপজেলা পরিষদের পক্ষে ভাইস চেয়ারম্যান রণবিকাশ চাকমা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোয়ালিটি চাকমা, বরপুলপাড়া ইয়ং স্টুডেন্ট ক্লাবের পক্ষে বাবুল চাকমা ও নীল চাকমা এবং শহীদ পরিবারের পক্ষে অমূল্য রতন চাকমা ও চিগোন চাকমা পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করেন। পুষ্পার্ঘ্য অর্পনের পর দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করে শহীদদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) নান্যাচর থানা শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত র‌্যালি ও সমাবেশে ৫ শতাধিক লোক অংশগ্রহণ করেন। সকাল পৌনে ১১টায় উপজেলা মাঠ থেকে র‌্যালি বের হয়ে নান্যাচর বাজার প্রদক্ষিণ করে শহীদ সমাধিস্থল নান্যাচর সদর শ্মশানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে যায়। সেখানে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদবেদীতে সকাল ১১.১০ টায় পিসিপি নেতৃবৃন্দ ও সমবেত জনতা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন এবং শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানান। পরে সেখান থেকে ফিরে র‌্যালিটি আবার উপজেলা মাঠে সমবেত হয় এবং সেখানে ১১.৩০ টার দিকে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নান্যাচর থানা শাখার সভাপতি রিপন আলো চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি অনিল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডরেশন (এইচডব্লিউএফ) এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রিনা চাকমা ও নান্যাচর সদর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের  মেম্বার সেন্ট্রো চাকমা। সভা পরিচালনা করেন পিসিপি নেতা কুনেন্টু চাকমাNannyachar2

বক্তরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে সেনা-সেটলার কর্তৃক সুপরিকল্পিত নান্যাচর গণহত্যা একটি কুখ্যাত ঘটনা। ১৯৯৩ সালে আজকের এদিনে নান্যাচর হাট বাজারের দিনে সওদা করতে আসা শতশত পাহাড়ির ওপর চালানো হয়েছিল নারকীয় তা-বলীলা; হিংস্র হায়েনার মত সেনা-সেটলাররা নিরীহ নিরস্ত্র পাহড়িদের ওপর হামলে পড়ে শোভাপূর্ণ চাকমা, কালাবিজা চাকমা, অর্জুন মণি চাকমা, ধীরেন্দ্র চাকমাসহ ৩০ জনের অধিক পাহাড়িকে হত্যা করা হয়, অসংখ্য মানুষকে জখম করা হয়, অনেক ঘরবাড়ি জালিয়ে দেয়া হয়। সেদিন সেনারা বন্দুক এবং ৭/৮ শতাধিক সেটলার ধারালো অস্ত্র দা, কিরিচ, খন্তা, কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মেতেছিল রক্তের হোলি খেলায়, ফেটে পড়েছিল হিংস্র উল্লাস ধ্বনিতে। বক্তারা বলেন, ঘটনার দু’দিন আগে তৎকালীন নান্যাচর জোন কমান্ডার লে.কর্ণেল আবু নাঈম ও থানা নির্বাহী কর্মকতা হাবিবুর রহমান উধাও হয়েছিলেন, যা পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন  করে।

বক্তারা আরো বলেন, “১৭ নভেম্বর গণহত্যা”র সাথে জড়িত সেনা-পুলিশ ও সেটলারদের দীর্ঘ ২২ বছর পরও এখনো বিচার হয়নি। উক্ত হত্যাকা-ের সাথে জড়িত  সেটলার সর্দার আব্দুল লতিফ, আইয়ুব হাসান, ইউনুস সওদাগর, আহমদ মিয়া ও অন্যান্য সেটলাররা আজও বীরদর্পে সেনা-প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ায় এবং স্থানীয় জনগণকে হুমকি দিয়ে ত্রস্ত করে রাখে। এই সেটলার সর্দার ও তৎকালীন সময়ে নান্যাচরে দায়িত্বরত সেনা-পুলিশ-প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার রহস্য বেরিয়ে আসবে। কেন ঘটনার দু’দিন আগে তৎকালীন নান্যাচর জোন কমান্ডার ও থানা নির্বাহী কর্মকতা উধাও হয়েছিলেন সেই রহস্যও উন্মোচিত হবে বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।

Nannyachar1বক্তরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘৯৩ সালের ঘটনা পূনরাবৃত্তি করার পাঁয়তারা এখনো চলছে। গত বছর ২০১৪ সালে বগাছড়িতে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে সেটলাররা সেনাদের সাহয্যে অর্ধশতাধিক পাহাড়িদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে “বিজয় উল্লাস” করেছিল। ক্ষতিগ্রস্তরা সবকিছু হারিয়ে এখনো অসহায় অবস্থায় রয়েছে।

সভায় বক্তারা সরকারকে প্রশ্ন করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সংগঠিত গণহত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলার কি বিচার করা হবে না? স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী গণহত্যাকারীদের যদি চার দশক পর হলেও বিচার ও শাস্তি হয়; তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণহত্যাকারীদের কেন বিচার ও শাস্তি হবেনা? সেনা-সেটলারদের অপরাধ তো যুদ্ধাপরাধীদের চাইতে কোন অংশে কম নয়।

বক্তারা দাবি জানিয়ে বলেন, নান্যাচর “১৭ নভেম্বর” গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে এবং দোষীদের বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাছাড়া সমাবেশ থেকে পাহাড়ে ডজনের অধিক গণহত্যা ও বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক হামলার বিচারের দাবি জানান বক্তারা।

নান্যাচর গণহত্যার ২২তম বার্ষিকীর গণসমাবেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্র-যুবক, নারী ও বিভিন্ন পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে পিসিপি, যুব ফোরাম ও এইচডব্লিউএফের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
———————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More