নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার দাবি প্রসিত খীসার

0

সিএইচটিনউজ.কম

P1040446খাগড়াছড়ি: আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮ নং খাগড়াছড়ি আসনে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী প্রসিত বিকাশ খীসা আজ  ২ জানুয়ারি ২০১৪ বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের সাথে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক বিশেষ দলের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা, প্রচারণায় বাধাদান ও হুমকি ধামকি, প্রার্থীদের আচরণবিধি লংঘনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। এসময় তিনি ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েও আশংকা প্রকাশ করেন।

প্রসিত বিকাশ খীসা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের শত্রুতামূলক নীতির সমালোচনা করে বলেন, যে দেশের জনগণের মধ্যে ঐক্য সংহতি সুদৃঢ় নয় সে দেশের সার্বভৌমত্ব শুধু অস্ত্র বা সেনাদল নিয়ে রক্ষা করা সম্ভব নয়। সৈন্যবাহিনীর অস্ত্রই শুধু শক্তি নয়, জনগণের ঐক্য সংহতিই হচ্ছে প্রভাবক শক্তি। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই একটি অংশ, এই অঞ্চলের নিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলা অটুট থাকবে যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় জনগণকে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষার কাজে লাগানো হয়।

তিনি বলেন, গুটিকয়েককে ক্ষমতার সুযোগ সুবিধা দিয়ে কোনো জাতিসত্তাকে দাবিয়ে রাখা হলে তাতে আখেরে দেশের এবং দেশের জনগণেরই ক্ষতি হয়।

নির্বাচনে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষপাতিত্ব নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনার বিবরণ শুনেছি। অতি উৎসাহের বশে আইন প্রয়োগকারী লোকজন সরকারী চাকুরিতে বহাল থাকা অবস্থার একটি বিশেষ দলের হয়ে প্রচার চালাচ্ছে, জনগণকে ভয়ভীতি হুমকি ধামকি দিচ্ছে, প্রচারকার্যে নিয়োজিত কর্মীদের ধরপাকড় করছে। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এ ধরণের তৎপরতা গ্রহণযোগ্য নয়। এ সময় তিনি গত কয়েকদিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ও বিভিন্ন প্রার্থী কর্তৃক যে নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘিত হবার অভিযোগ এসেছে তা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, এ অবস্থায় নির্বাচনে কারচুপি ও ইলেক্শন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে এলাকার জনগণের মতো আমরাও শংকিত। আগামী ৫ জানুয়ারী নির্বাচন সুষ্ঠূ নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সরকার ও নিরাপত্তার রক্ষার কাজে নিয়োজিত সংস্থাসমূহ কতখানি ভূমিকা রাখবেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।P1040440

তিনি বলেন, নানা অনিয়ম অভিযোগের পরেও আমরা নির্বাচন করছি। আমাদের পার্টি থেকে একজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে চাইলেও তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়নি। অন্য এক প্রার্থীর প্রার্থীতা বিধি মোতাবেক হবার পরেও বাতিল করা হয়েছে। সরকারী দলের প্রার্থীতা নিয়ে টালবাহানা করা হয়েছে। এতকিছুর পরেও আমরা এখনো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।

তিনি আরো বলেন, এমনিতেই বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা লংঘিত হয় তবে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক তা পুরোপুরিই প্রমাণিত হয়ে যাবে।

আসন্ন নির্বাচন নিষ্ঠু আবাধ ও নিরপেক্ষ করার দাবি জানিয়ে প্রসিত খীসা বলেন, অন্যান্য ক্ষেত্রে না হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল কথা ও কাজের সামঞ্জস্য দেখাতে পারে। আগামীতে গঠিতব্য জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসমূহের প্রতিনিধিগণ প্রতিনিধিত্ব করলে সংসদীয় কার্য্যক্রমে ভিন্ন মতের প্রতিফলন ঘটবে। দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামের সুষ্ঠূ ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করা সরকারে অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত বলে তিনি মত দেন।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বাতন্ত্র্য স্বকীয়তাকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ভৌগোলিক-সাংস্কৃতিক-ঐতিহ্যগত দিক বিবেচনা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে জাতিসত্তার প্রতিনিধি নির্বাচিত হবার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোটা দেশ আজ দুর্বৃত্ত-দুষ্টচক্রের কবলে নিপতিত। এই দুর্বত্ত দুষ্টচক্র থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

প্রেস ব্রিফিংকালে প্রসিত বিকাশ খীসার সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ও  সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা, উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, বিশিষ্ট মুরুব্বী কিরণ মারমা, ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা, পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা ও মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সোনারতন চাকমা।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More