নুতন কুমার চাকমার নির্বাচনী প্রচারে হামলা ও বাধাদানের লিখিত অভিযোগ পেশ

0

খাগড়াছড়ি : ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক  ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নুতন কুমার চাকমা প্রতিপক্ষ সমর্থক কর্তৃক তার নির্বাচনী প্রচারে বাধা প্রদান, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ও খুনের অভিযোগ দাখিল করেছেন।

আজ বুধবার, ২৬ ডিসেম্বর, খাগড়াছড়ি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তিনি লিখিতভাবে ৫ দফা অভিযোগ পেশ করেন। এতে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী বিধি মোতাবেক সব প্রার্থীর সমান সুযোগ ও অধিকার থাকলেও খাগড়াছড়িতে আমাকে ও আমার সমর্থকদেরকে প্রচারণায় পদে পদে বাধা দেয়া হচ্ছে, নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে দুই জনকে খুন করা হয়েছে এবং ভোটারদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছে।’

গত ১৬ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার প্রতি জেএসএস সংস্কারপন্থীদের সমর্থন জানানোর পর থেকে তার সমর্থকদের ওপর হামলা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন।

তার পাঁচ দফা অভিযোগগুলো হলো:

১। গত ১৫ ডিসেম্বর লক্ষ্মীছড়িতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার একটি নির্বাচনী প্রচারণা সভায় হামলা চালায়। এ সময় তারা নির্বাচনী পোস্টার, নির্বাচনী তহবিলের আনুমানিক এক লক্ষ টাকা, ডিগ্রী পাশের সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয় পত্র (স্মার্ট কার্ড) ও মোবাইল ফোন সেট জব্দ করে।

২। গত ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সমর্থকরা দেওয়ান পাড়ায় তার নির্বাচনী প্রচারপত্র বা বুকলেট ৪ হাজার কপি ও কার্ড বা আহ্বানপত্র ৩০ হাজার কপি ছিনিয়ে নেয়। এগুলো তার নির্বাচনী প্রচারণার জন্য খাগড়াছড়ি থেকে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে পানছড়ি নেয়া হচ্ছিল।

৩। গত ২১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার কুড়িদিয়া ছড়া এলাকায়  ইউপিডিএফ এর পানছড়ি  উপজেলা সংগঠক ও নির্বাচনে নুতন তার একজন সহকারী রূপায়ন চাকমার বাড়ীতে হামলা ও ভাঙ্গচুর করা হয়। নৌকা প্রতীকের অর্থাৎ আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার পক্ষের আনুমানিক ১৫ জন জ্যোলেয়া চাকমা (তরু), পাগলা বিধান, সাধু, জেকসন, আগমন ও দীপন আলোর নেতৃত্বে এই হামলায় অংশ নেয়। এই হামলারকারীরা একই সাথে একটি বিশেষ বাহিনীর মদদপুষ্ট সংগঠন ও জেএসএস সংস্কারবাদী দলের সদস্যও। তারা রূপায়ন চাকমার পরিবারের সদস্যদের বের করে দিয়ে বাড়ির আসবাবপত্রসহ সকল জিনিসপত্র তছনছ ও ভাঙ্গচুর করে। এছাড়া তারা গ্রামের জনগণকে নৌকায় ভোটা না দিলে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। একমাত্র তার অর্থাৎ নুতন কুমার চাকমার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার কারণে এবং এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে উক্ত হামলা চালানো হয়েছে।

৪। গত ২৩ ডিসেম্বর নৌকা প্রতীকের অর্থাৎ আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার পক্ষের লোকজন খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের মুনিগ্রামে ইউপিডিএফ নেতা ও নুতন কুমার চাকমার নির্বাচনী প্রচারণায় একজন সংগঠক অনি বিকাশ চাকমা ও পবন চাকমা (সাইক্লোন) এবং অপর একজন সাধারণ গ্রামবাসী মঙ্গল চাকমার বাড়িতে হামলা ও ভাঙ্গচুর চালায় এবং আমার নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে ও পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া তারা গ্রামের লোকজনকে নৌকায় ভোট না দিলে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। উপরে ১ নং ঘটনায় বর্ণিত হামলাকারীরাই এতে অংশ নেয়।

৫। গত ২৪ ডিসেম্বর সকাল ১১ টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সমর্থকরা পানছড়ি উপজেলার পুজগাং বাজারের পাশে অবস্থিত তার নির্বাচনী অফিসে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে একজন পাহাড়ি ও অপর একজন বাঙ্গলীকে হত্যা করে। এছাড়া তারা তার উক্ত নির্বাচনী অফিসটি পুড়িয়ে দেয়, ফাঁকা গুলি চালিয়ে জনগণকে ভীত সন্ত্রস্ত করে এবং উত্তর টিএনটি পাড়ার মৃত সন্তোষ মনি চাকমার ছেলে অনুত্তর চাকমা (৩৫),  পিআলীচরণ পাড়ার মৃত বড়পেদা চাকমার ছেলে তামুলুক্যে চাকমা (৪২) ও বিরেন্দ্র পাড়া র গগণ চন্দ্র চাকমার ছেলে নিরুপম চাকমাকে (৪৮) মারধর করে। হামলাকারীরা তার পক্ষে প্রচারণা চালালে ও সিংহ মার্কায় ভোট দিলে মেরে ফেলা হবে বলে গ্রামের লোকজনকে হুমকি দেয়। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুুরার সমর্থক বিধান চাকমা, দীপন আলো চাকমা ও লাম্বা সুজনসহ  ১২ জন সশস্ত্র ব্যক্তি এই হামলায় অংশগ্রহণ করে। এই হামলাকারীরা একই সাথে জেএসএস সংস্কারবাদী দলেরও সদস্য।

নুতন কুমার চাকমা বলেন, ‘উক্ত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ঘটনা বিষয়ে বিভিন্ন সময় ফোনে অভিযোগ করা হলেও প্রতিকারের জন্য আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আমি আশাকরি এই লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আমার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা এবং প্রত্যেক ভোটার যাতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বিঘ্নে, নিরাপদে ও ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More