খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠনের আলোচনা সভায় বক্তারা
পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্রবাদী সংকীর্ণ বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি খবংপুজ্যাস্থ ইয়ং স্টার ক্লাবের কনফারেন্স রুমে আজ শুক্রবার (৩০ জুন, ২০১৭) বিকালে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তাগণ বলেছেন, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্রবাদী সংকীর্ণ বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৬ বছর উপলক্ষে “যে ‘আইনে’ জাতিসত্তার স্বীকৃতি নেই, তা মানতে বাধ্য নই!” এই শ্লোগান এবং ‘জাতিসত্তার পরিচিতি হরণ ও ‘১১দফা নির্দেশনা’ জারির মাধ্যমে দমন-পীড়ন জ¦ালাও পোড়াও খুনখারাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী যুবসমাজ গর্জে উঠো!’ এই আহ্বানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অংগ্য মারমা। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা। এছাড়া আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা।
প্রধান আলোচক মিঠুন চাকমা তার আলোচনায় বলেন, ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা জাতীয় পরিষদে দাঁড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে জনগণের সকল অংশের মতামত না নিয়ে সংবিধান প্রনয়নের বিরোধিতা করেছিলেন। নিপীড়িত জাতি ও বাংলাদেশের আপামর জনগণের মতামত ও তাদের কথা যেন সংবিধানে লেখা থাকে তার দাবি তিনি জানিয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার এই দাবি অগ্রাহ্য করার ফলে যে সরকারই আসুক না কেন সেই সরকার নিজের ইচ্ছেমত সংবিধান কাটাছেঁড়া করে থাকে। এতে দেখা যায় সংবিধানকে তারা কার্যত ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হীন উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করে যাচ্ছে। এভাবে সংবিধানকে তারা নিজেরাই না মানার ফলে ১৬ কোটি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী ও আস্থা অর্জনকারী হিসেবে সংবিধান হিসেবে বর্তমান সংবিধান বিবেচিত হতে পারছে না। সংবিধানে দেশবাসী আজ জাতি হিসেবে বাঙালি ও নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশী এই দুইভাগে বিভক্ত। পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জাতিসত্তার অস্তিত্বকে মুছে দিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্রবাদী সংকীর্ণ বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বলে তিনি আলোচনা সভায় উল্লেখ করেন।
আলোচনা সভার সভাপতি অংগ্য মারমা বলেন, ১৯৭২ সালে যে ভূল দিয়ে সংবিধান প্রণয়ন হয়েছিলো সেই ভূলের মাশুল এখনো জনগণকে দিতে হচ্ছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘূ জাতিসমূহের নিজ নিজ পরিচয়ে পরিচিতি প্রদানের সুযোগ আওয়ামীলীগ পেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামীলীগ জাতিসত্তার স্বীকৃতি প্রদান করেনি। তিনি আরো বলেন, একদিকে সংবিধানের চার স্তম্ভ হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাখা হয়েছে, অথচ অন্যদিকে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার মূলস্তম্ভ পদদলিত করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা এই চার মূলনীতি এক অপরের সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থায় বিরাজমান তা দেখা যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আলোচনাসভা থেকে বক্তাগণ পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সংখ্যালঘূ জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভুমি অধিকার নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবি জানান।
এছাড়া চলমান দমন-পীড়ন-নির্যাতন বন্ধ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা-সেটলার প্রত্যাহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক এল্টন চাকমা।
এছাড়া মানিকছড়ি, রামগড়, দীঘিনলা, সাজেক, বাঘাইছড়ি বিক্ষোভ মিছিল ও পানছড়ি, মহালছড়িতে আলাচনা সভা করা হয় বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।