পঞ্চদশ সংশোধনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ নির্দেশনার প্রতি ৮ গণসংগঠনের লাল কার্ড প্রদর্শন

0

সিএইচটিনিউজ.কম
ডেস্ক রিপোর্ট : সংবিধানের বিতর্কিত ‘পঞ্চদশ সংশোধনী আইন’ ও ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত দমনমূলক ১১ নির্দেশনা’র প্রতি লালকার্ড প্রদর্শন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনরত ৮ গণসংগঠন(গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, সাজেক নারী সমাজ, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ড)।

পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাসের ৪বছর পূর্তির দিন আজ ৩০ জুন মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ১১.৩০ টার মধ্যে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যতিক্রমধর্মী এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচিতে ব্যাঘাট ঘটাতে সকাল থেকে সেনাবাহিনী খাগড়াছড়ি সদর, মহালছড়ি, দীঘিনালা, সাজেক সহ বিভিন্ন স্থানে হুমকিমুলকভাবে টহলে নামে, পানছড়িতে আগের দিন বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়, সাজেক, বাঘাইছড়ি সহ বিভিন্ন স্থানে পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়। গুইমারায় প্রোগ্রাম করা যাবে না বলে সেনারা মাইকিং করে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় বাধা প্রদান ও পোগ্রামে আসা লোকদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

খাগড়াছড়ি জেলায় যেসব স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়:

খাগড়াছড়ি সদরের পেরাছড়ায় লাল কার্ড প্রদর্শন করছেন এলাবাসী
খাগড়াছড়ি সদরের পেরাছড়ায় লাল কার্ড প্রদর্শন করছেন এলাবাসী

খাগড়াছড়ি সদর:
পেরাছড়া: খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া বাজারে সকাল ১০টার দিকে প্রায় দুইশতাধিক এলাকার ছাত্র-যুব নারী-পুরুষ লাল কার্ড প্রদর্শন করে। এতে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রী ক্রিরা সম্পাদক বরুন চাকমা।

খাগড়াপুর:  ৮ গণসংগঠনের কর্মসূচির  স

মর্থনে খাগড়াপুরে লালকার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সকাল ১০.৩০টার দিকে খাগড়াপুর বাজার থেকে খাগড়াপুর এলাকার ছাত্র-যুব সমাজ এর ব্যানারে লাল কাড প্রদর্শন এবং বিক্ষোভ মিছিল করে কৃষি গবেষণার ধর্মঘরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন খাগড়াপুর এলাকার ছাত্র প্রসেনজিৎ ত্রিপুরা। লাল কার্ড প্রদর্শন ও বিক্ষোভ মিছিলে প্রায় অর্ধশত ছাত্র-যুব অংশগ্রহণ করেন।

মধুপুর: পানখাইয়াপাড়া চাবাই সড়ক মোড়ে সকাল ১১টার দিকে লালকার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি শুরু করতে গেলে সেনাবাহিনীর দুটি পেট্রোল দল বাধা প্রদান করে। পরে মধুপুর এর বাজারের শেষ মাথা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে পানখাইয়াপাড়ায় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার সহসাধারণ সম্পাদক জেসীম চাকমা।
এছাড়া সকাল ১০.৩০ টার দিকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দক্ষিণ খবংপুজ্জ্যা অমর বিকাশ সড়কের মোড় থেকে লাল কার্ড প্রদর্শন করে একটা বিক্ষোভ মিছিল খাগড়াছড়ি চেঙ্গী ব্রীজের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

দীঘিনালায় লাল কার্ড প্রদর্শন
দীঘিনালায় লাল কার্ড প্রদর্শন

দীঘিনালা:
সকাল ৭.৩০টার দিকে দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে লাল কার্ড প্রদর্শন ও বিক্ষোভ মিছিল করে মাষ্টার পাড়া ইউপিডিএফ এর অফিসের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দিঘীনালা উপজেলার শাখার সাধারণ সম্পাদক নয়ন চাকমার সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি দীঘিনালা উপজেলা শাখার সভাপতি জহেল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সহসভাপতি মঞ্জু চাকমা, ইউপিডিএফ এর দিঘীনাল উপজেলা সংগঠক কিশোর চাকমা। এছাড়া ৮.৩০ টার দিকে থানা বাজারে লাল কার্ড প্রদর্শন এবং বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

মহালছড়ি:
মহালছড়ি উপজেলার ২৪ মাইলে লাল প্রদর্শন করার কথা থাকলেও সেনাবাহিনীর বাধার কারণে সম্ভব হয়নি। পরে সকাল ১০.১৫টার দিকে মাইসছড়ির বদানালায় লাল কার্ড প্রদর্শন ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক সর্বানন্দ চাকমা, মহালছড়ি উপজেলার সভাতি হৃদয় বিন্দু চাকমা।

পানছড়ি পুজগাঙে লাল কার্ড প্রদর্শন
পানছড়ি পুজগাঙে লাল কার্ড প্রদর্শন

পানছড়ি:
পানছড়ি উপজেলার ঐতিহাসিক ধুদুকছড়ি ব্রীজের সামনে সকাল ১০টার দিকে লাল কার্ড প্রদর্শন করা হয়। সেখানে স্থানীয় এলাকার কার্বারী, সাধারণ জনগণ ও ছাত্র-যুবরা অংশগ্রহণ করেন। সকাল ১০.৩০ টার দিকে পানছড়ির পুজগাং বাজারের পাশে স্কুলের সামনে লাল কার্ড প্রদর্শন করা হয়। এতে এলাকার জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় মুরুব্বী, স্কুল শিক্ষক এবং ছাত্র-যুবকসহ দুই শতাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। সেখানে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি চন্দ্রদেব চাকমা ও ইউপিডিএফ এর উপজেলা সংগঠক জগদীশ চাকমা। এছাড়া কলেজ গেট এলাকায়ও লাল কার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি পালিত হয়।

মাটিরাঙ্গা:
মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুইমারা ও বাইল্যাছড়িতে প্রোগ্রাম করার কথা থাকলেও সেনাবাহিনীর বাধার কারণে করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে সকাল ১০টার দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা  রিসাং ঝর্ণা এলাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও রিসাং ঝর্ণা এলাকার সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে লাল কার্ড প্রদর্শিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক দীপংকর ত্রিপুরা এবং সঞ্চলানা করেন পিসিপি মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাংগঠিক সম্পাদক ডালিম ত্রিপুরা।

রামগড়:
রামগড় সদরের মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্যের সামনে সকাল ১০.৩০টার দিকে প্রায় দুইশতাধিক এলাকার নারী-পুরুষ, ছাত্র-যুবকের অংশগ্রহণে লালকার্ড প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া রামগড় যৌথ খামার এলাকায় সকাল ১১টায়  লাল কার্ড প্রদর্শন ও মিছিল করা হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি গোলাপ ত্রিপুরা ও ইউপিডিএফ এর রামগড় উপজেলা সংগঠক জিতেন ত্রিপুরা।

মানিকছড়ি:
মানিকছড়ি উপজেলার জামতলায় সকাল ৯.৩০ টা লালকার্ড প্রদর্শন করা হয়। পরে সেখান থেকে  একটি বিক্ষোভ মিছিল পিষ্টতলায় পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সদস্য উক্রাচিং মারমা। মানিকছড়ি বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্র-যুব-নারী-পুরুষ এতে অংশগ্রহণ করেন।

লক্ষীছড়ি:
লক্ষীছড়ি উপজেলার দুইল্যাতলী ইউনিয়েনের দেওয়ান পাড়া, যতিন্দ্র কর্বাররী পাড়া, বর্মাছড়ি ইউনিয়নের বর্মাছড়ি বাজারে, কতুকছড়ি বাজারে লাল কার্ড প্রদর্শন করা হয়। সেখানে পৃথক পৃথক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খ্যচিং মারমা, হ্লাচিংম মারমা, কুতুকছড়ি স্কুলের ছাত্রী সামাউ মারমা, সচিব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উপজেলা সংগঠক দয়া ধন চাকমা, বিশিষ্ট মুরুব্বী সত্যপ্রিয় চাকমা, ইউপিডিএফ এর উপজেলা সংগঠক রন্টু চাকমা, রতন বসু চাকমা। সমাবেশে প্রায় দেড় থেকে তিনশতাধিক ছাত্র-যুব-নারী-পুরুষ যোগ দেয়।

রাঙ্গামাটি জেলায় যেসব স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়:

কুদুকছড়ি, রাঙামাটি
কুদুকছড়ি, রাঙামাটি

কুদুকছড়ি:
রাঙামাটি সদর উপজেলার কৃষি ইনস্টিটিউট এলাকা, কুদুকছড়ি বাজার এলাকা, নান্যাচর উপজেলার ঘিলাছড়ি বাজার ও বেতছড়ি বাজারে লালকার্ড প্রদর্শন করা হয়। সেখানে পৃথক পৃথক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অনীল চাকমা, সহ-সভাপতি কুমেন্টু চাকমা, তথ্য প্রচার সম্পাদক নিকন চাকমা ঘিলাছড়ি নারী নির্যতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কাজলী ত্রিপুরা।

নান্যাচর:
নান্যাচর উপজেলা মাঠে সকাল সাড়ে ১০টায় লালকার্ড প্রদর্শন করা হয়। এতে নান্যাচর ইউপি মেম্বার সেন্টু চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাবেক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুশীল জীবন চাকমা ও ইউপিডিএফ প্রতিনিধি বকুল চাকমা। লাল কার্ড প্রদর্শন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নান্যাচর বাজার প্রদক্ষিণ করে শেষ হয়।

বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি
বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি

বাঘাইছড়ি:
বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপকারী মাঠে লাল কার্ড প্রদর্শন করার কথা থাকলেও সেনারা তা নিজের দখলে নেয়। পরে রূপকারী ইউনিয়নের বড়াদাম, বিজয়ঘাট, বঙ্গলতলী ইউনিয়নের বটতলা বাজার ও বাঘাইছড়িতে পৃথক পৃথক জায়গায় লাল কার্ড প্রদর্শন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উপজেলা সংগঠনিক সম্পাদক শুভ শান্তি চাকমা, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক সিক্কোধন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের মুক্ত সোনা চাকমা, পিসিপি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আসেন্টু চাকমা ও ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় সদস্য দেবদন্ত ত্রিপুরা।

সাজেক: 
সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, সাজেক নারী সমাজ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে উজো বাজার সংলগ্ন ডিপু পাড়ায় সকাল ১০টায় লাল কার্ড প্রদর্শন করা হয়। এতে সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির দশরথ চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সুপন চাকমা ও লক্ষ্মীমিত্র চাকমা বক্তব্য রাখেন। কর্মসূচিতে এলাকার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

কাউখালী, রাঙামাটি
কাউখালী, রাঙামাটি

কাউখালী:
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের সামনে সকাল ৯.৪০টার দিকে লালকার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি পালিত হয়। এতে এলাকার ছাত্র-যুব-নারীরা অংশগ্রহণ করেন। বিমল চাকমার সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য রূপন মারমা।  এছাড়া সকাল ১০.৩০টার দিকে কাউখালী উপজেলার সদরের প্রেস ক্লাবের সামনে লাল কার্ড প্রদর্শন করা হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উপজেলা সভাপতি কংচাই মারমা, ইউপিডিএফ এর সংগঠক পুলক জ্যোতি চাকমা।

এছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারে পৃথকভাবে লালকার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

পৃথক পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত এসব সমাবেশে বক্তারা পঞ্চদশ সংশোধনীতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। বক্তারা অবিলম্বে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলপূর্ব সংখ্যালঘু জাতিসমূহত জাতিগত সাংবিধানিক স্বীকৃতি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা দমনমূলক ১১ নির্দেশনা বাতিল ও  গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩০ জুন বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করে আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতিসমূহের উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়।

অন্যদিকে, সরকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক অগণতান্ত্রিক দমনমূলক “১১ নির্দেশনা” জারি করে পার্বত্য চট্টগ্রামে দমন-পীড়ন বাড়িয়ে দিয়েছে।
——————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More