পানছড়িতে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

0

খাগড়াছড়ি ।। খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাসের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে কমিশন বাণিজ্য, নিম্নদরের দরপত্র আহ্বান করে উচ্চদরে কার্যাদেশ দেয়া, কাজ না করে বিল উত্তোলন ও ঠিকাদারদের যোগসাজশে সরকারি অর্থ ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ এ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এ নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ঠিকাদার মো. গিয়াস।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে পানছড়ি উপজেলায় পিইডিপি-৪ এর আওতায় ছয়টি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, পাঁচটি বিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নদরের দরপত্রে কাজ পাওয়ার পরও তা আবার বাতিল করে স্থানীয় সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশে অন্য ঠিকাদারকে তা আবার পাঁচ শতাংশ উচ্চদরে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এতে প্রতি স্কুল নির্মাণ বাবদ ছয় লাখ টাকা করে ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন উপজেলা প্রকৌশলী। একইভাবে পাঁচটি বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে ১০ শতাংশ উচ্চদরে কার্যাদেশ দিয়ে ঘুষ হিসেবে ১০ লাখ টাকা উপজেলা প্রকৌশলীর পকেটে যায়। নিম্নদরে কাজ উচ্চদরে কার্যাদেশ দিলেও এ সংক্রান্ত সভা করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। এতে সরকারি কোষাগারের বিপুল অর্থ গচ্চা যাচ্ছে। এছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়ায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুর রহমানকে সদস্য সচিব হিসেবে দেখানো হয়েছে, অথচ তিনি চার বছর আগে পানছড়ি থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব অনিয়ম করে যাচ্ছেন উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস। নিম্নদরের কাজে উচ্চদরে কার্যাদেশ দেয়ার কারণে সরকারি অর্থ নয়ছয় হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- বাড়িতে বসেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

 টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াও পানছড়ি উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। পানছড়ি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতায় গত দুই অর্থবছরে মানিক্যপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ, তবলছড়ি রাস্তায় বল্লি প্ল্যাইনাডিং, সাঁওতালপাড়ায় রাস্তা রক্ষার জন্য সাইড ওয়াল নির্মাণ, পুকুর খনন ও সেচ ড্রেন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া জিএসআইডিপি প্রকল্পের ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা মসজিদ নির্মাণ, প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি বিদ্যালয়ে ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করে বাকি টাকা ঠিকাদারের যোগসাজশে উপজেলা প্রকৌশলী নিজে আত্মসাৎ করেন।

স্থানীয় ঠিকাদার ও পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল মোমিন জানান, ‘উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সরকারি অর্থের নয়ছয় করেছেন। সম্প্রতি স্কুল ভবন নির্মাণ ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের দরপত্র নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। নিুদরের একটি কাজ আরও ১০ শতাংশ বেশি দিয়ে এক ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেন। এতে সরকারি বিপুল অর্থ গচ্ছা যাবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস। দরপত্রে অনিয়মসহ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলে, ‘এসব কিছু আমি করিনি, যা হয়েছে অফিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছে।’ এ বিষয়ে প্রতিবেদকের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যা ইচ্ছে লিখে দেন।’

এদিকে উপজেলা প্রকৌশলীর অনিয়মের দায় অধিদফতর নেবে না বলে সাফ জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী। তিনি আরও বলেন, পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বেশকিছু লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এসব বিষয় তদন্ত করে দেখার জন্য সিনিয়র এক প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কোনো অনিয়ম বেরিয়ে এলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র: যুগান্তর

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More