পানছড়িতে কারামুক্ত পিসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতা বিপুল চাকমা ও ৯ পিসিপি নেতা-কর্মীকে সংবর্ধনা

0

Bipul reception2, 16.01.17

পানছড়ি(খাগড়াছড়ি) : সেনা-পুলিশ-বিজিবি’র বাধার মুখে সদ্য কারামুক্ত বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা ও পানছড়ির ৯ পিসিপি নেতা-কর্মীকে পানছড়ি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার (১৬ জানুয়ারী ২০১৭) দুপুরে পানছড়ি কলেজ গেইট এলাকায় এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

অপরদিকে, নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদ ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে আজ সকালে পুজগাঙ স্কুল মাঠে গণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেও সেনা-পুলিশের বাধায় তা করা সম্ভব হয়নি।

পিসিপি নেতা বিপুল চাকমা খাগড়াছড়ি থেকে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় পানছড়ি কলেজে গেইটে পৌঁছলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকা পানছড়ি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থীরা ফুলের মালা ও রজনী গন্ধা ফুল দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। পরে সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা বিপুল চাকমাকে নিয়ে গাড়িবহরযোগে গণসংবর্ধনার ভেন্যু পুজগাঙ স্কুল মাঠের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। গাড়িবহরটি পানছড়ি বাজারে পৌঁছলে ওসি জব্বারে নেতৃত্বে পুলিশ-সেনা ও বিজিবি সদস্যরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে গাড়িবহরটি আটকিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা এতে কোন প্রকার সংঘর্ষে না গিয়ে গাড়িবহরটি নিয়ে পানছড়ি বাজার প্রদক্ষিণ করে শান্তিপুর অরণ্য কুটির গেইট হয়ে পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা ঘুরে কলেজ গেইটের বৌদ্ধ মন্দিরের মাঠে এক সমাবেশ করে।

সমাবেশে সদ্য কারামুক্ত পিসিপি’র সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা ও পানছড়ি ৯ পিসিপি নেতা-কর্মীকে পানছড়ি কলেজ ও পানছড়ি উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে ফুলের তোরা দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

Bipul reception,16.01.17

পানছড়ি ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাজীব চাকমার সভাপতিত্বে ও রুপেশ চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, লতিবান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমা, উল্টাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয় কেতন চাকমা, পিসিপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি চন্দ্রদেব চাকমা প্রমুখ। সদ্য কারামুক্ত পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমাও এতে বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশের শান্তি জীবন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপকহারে দমন-পীড়ন চলছে। সে দমন-পীড়নের হাত থেকে ধর্মীয় গুরুসহ জনপ্রতিনিধি, সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীরাও বাদ পড়ছে না। তার প্রমাণ হলো বিপুল চাকমাকে আটকের ঘটনা। তিনি শাসক গোষ্ঠীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

চন্দ্রদেব চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাইরে কোন অঞ্চল নয়। কিন্তু সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে সেনাবাহিনীকে দিয়ে এই পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসন-শোষণ চালাচ্ছে। তিনি সেনা-বিজিবি-পুলিশ বাহিনী কর্তৃক পুজগাঙ স্কুল মাঠে নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদ ও পানছড়ি এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত বিপুল চাকমা ও  ৯ পিসিপি নেতা-কর্মীকে গণ সংবর্ধনার জন্য তৈরিকৃত প্যান্ডেল ও মঞ্চ ভেঙ্গে দেওয়া ও রাস্তাঘাটে সেনা-বিজিবি-পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসা লোকজনকে বাধা প্রদানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

Bipul reception3, 16.01.17

সমাবেশে বিপুল চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, সেদিন ২৩ অক্টোবর ২০১৬ আমার অসুস্থ মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে যাবার পথে পানছড়ি থানার সামনে ওসি জব্বারের নেতৃত্বে আমাদের গাড়ী আটকানো হয় এবং অসুস্থ মায়ের সামনে গালিগালাজ করে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে থানায় নিয়ে আমাকে আটক করে। সেদিন ওসি জব্বারকে আমি অসুস্থ মায়ের সামনে আমাকে গালি গালাজ না করতে অনুরোধ করলেও তিনি তা শুনেননি।

তিনি তার আটকের প্রতিবাদ জানিয়ে সেনা-প্রশাসনের বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে পানছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে যারা আন্দোলন করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, আমার মাকে এই রাষ্ট্রের পুলিশের এক কর্মকর্তা হত্যা করেছে কিন্তু এই হত্যার বিচার আমরা পাইনি।

বিপুল চাকমা ছাত্রদের উদ্দেশ্য আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আনাচে কানাচে ব্যাঙের ছাতার মত অনেক ছাত্র সংগঠন গজিয়ে উঠছে। তারা জুম্ম জনগণের আন্দোলনের কথা, অধিকারের কথা বলেলেও বাস্তবে প্রতিক্রিয়াশীল ও শাসক গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তাই এদের ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি, দালাল প্রতিক্রিয়াশীল ও সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ছাত্র সংগঠন নামধারীদের প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রামের আপোষহীন ও আদর্শিক ছাত্র সংগঠন ইউপিডিএফ সমর্থিত বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পতাকাতলে সমবেত হয়ে জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলন জোরদার করার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

কলেজ ছাত্র রাজীব চাকমা বলেন, বিপুল চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ তথা জাতির একজন নেতা। এই ছাত্র নেতাকে আমরা পানছড়ি ডিগ্রী কলেজর পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দিয়েছি। তিনি, শাসক গোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে সোচ্চার হাওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

এদিকে “যে জাতি তার বীরদের সম্মান দেয় না, সে জাতি বেশী দিন টিকবে না ” এই শ্লোগানে নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদ ও পানছড়ি এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত বিপুল চাকমা ও পানছড়ির ৯ পিসিপি নেতা-কর্মীকে গণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সেনা-পুলিশ ভণ্ডুল করে দেয়। পরে সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশে চেঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কালা চাঁদ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন লোগাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রত্যুত্তর চাকমা ও চেঙ্গী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অনিল চন্দ্র চাকমা।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, আজ সকাল ১০টার সময় পানছড়ি সাবজোন কমান্ডার লে. সোহাগ, মেজর রেজা ও পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জব্বারের নেতৃত্বে সদ্য কারামুক্ত ছাত্র নেতা বিপুল চাকমা ও পানছড়ির ৯ পিসিপি নেতা-কর্মীকে গণসংবর্ধনার জন্য তৈরিকৃত মঞ্চ ভাঙচুর করে অনুষ্ঠান ভ-ুল করে দেয়। সংবর্ধনার মতো শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে বাধা প্রদানের মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর কীভাবে নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।

বক্তারা অবিলম্বে এ ধরনের অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ড বন্ধ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে সভা-সমাবেশের অধিকারসহ জনগণের প্রকৃত গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর ২০১৬ অসুস্থ মাকে নিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে পানছড়ি থানার সামনে ওসি জব্বারের নেতৃত্বে পুলিশ বিপুল চাকমাকে অমানবিকভাবে আটক করে। পরে তার বিরুদ্ধে ১২টি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়। দীর্ঘ ৭৯ দিন কারাভোগের পর গত ১০ জানুয়ারী তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More