পানছড়িতে শিশু ধর্ষণ, গ্রেফতার ও শিক্ষা

0

॥ মন্তব্য প্রতিবেদন ॥
গত ২৭ মে পানছড়ির খামার পাড়ায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া এক পাহাড়ি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। এই ঘটনার বিরুদ্ধে পানছড়িসহ সারা পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পুলিশ ঘটনার পর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গতকাল ২৯ মে মাটিরাঙ্গা থেকে সন্দেহভাজন ধর্ষক মোঃ ইব্রাহীম ওরফে ইকবালকে আটক করে। এজন্য পুলিশ ও প্রশাসন ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। তাছাড়া যারা বা যে সব সেটলার বাঙালি অভিযুক্ত বা অপরাধীকে আইনের কাছে সমর্পন করতে সহযোগিতা করেছেন আমরা তাদেরকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। অপরাধী যে জাতি বা সম্প্রদায়ের হোক তাকে অবশ্যই অপরাধী হিসেবে দেখতে হবে।

Commentaryবলা বাহুল্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের মতো নারীর বিরুদ্ধে সহিংস জঘন্য অপরাধ দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর একটি প্রধান কারণ হলো অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া। ব্যতিক্রম হিসেবে কদাচিৎ গ্রেফতার হলেও তাদের শাস্তি হতে দেখা যায় না। ফলে এটাও দেখা গেছে যে, ধর্ষণের অভিযোগে কয়েকদিন জেলে আটক থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়ে অভিযুক্ত ধর্ষক আবার একই ধরনের অপরাধ সংঘটিত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়েক দশক ধরে যে ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজমান তাতে সেটলারদের অনেকের মনে এমন ধারণার জন্ম নেয়া স্বাভাবিক যে, তারা পাহাড়িদের বিরুদ্ধে যে ধরনের অপরাধ করুক না কেন প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী জুম্ম বিরোধী নীতির কারণে তাদেরকে সব সময় রক্ষা করবে। অপরদিকে যুগ যুগ ধরে নিপীড়িত-নির্যাতিত পাহাড়িদেরও এটা মনে করা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে, প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী সব সময় সেটলারদের পক্ষ নিয়ে থাকে, সেটলাররা পাহাড়িদের বিরুদ্ধে যত বড় জঘন্য অপরাধ করুক না কেন তার কোন বিচার হয় না, বরং অপরাধীদের রক্ষা করা হয়। অর্থাৎ এদেশে তারা সরকার, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কেবল বিমাতাসুলভ আচরণই পায়। আমরা আশা করি, সন্দেহভাজন ধর্ষক ইব্রাহীমকে গ্রেফতারের পর পাহাড়ি ও সেটলারদের মনে গেড়ে বসা এ ধরনের মনোভাব কিছুটা হলেও দূর হবে।

দৃষ্টান্ত হিসেবে সরকারের এটা খুব ভালোভাবে দেখানো উচিত যে, অপরাধী সে পাহাড়ি কিংবা বাঙালি যেই হোক তাকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। যদি বিচারে প্রমাণ সাপেক্ষে ধর্ষক ইব্রাহীমের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা হয় তাহলে সবার কাছে এই বার্তা যাবে যে, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে অপরাধ মোকাবিলায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় ও দলের উর্ধ্বে নিরপেক্ষ হয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছে।

ধর্ষণের প্রতিবাদে পানছড়িতে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর বিক্ষোভ
# ধর্ষণের প্রতিবাদে পানছড়িতে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর বিক্ষোভ।

ধর্ষণসহ নারীর বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধ দমনে সেনাবাহিনীরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বহু ধর্ষণ ঘটনার সাথে সেনা সদস্যও জড়িত। কিন্তু এ যাবত তাদেরকে কোন ধরনের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। অপরদিকে এক্ষেত্রে উল্টো অপরাধী সেনা সদস্যদের রক্ষা করা হয়। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় নয়, সম্প্রতি ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায়ও তাই দেখা গেছে। অথচ সেনাবাহিনী যদি কল্পনা চাকমাকে অপহরণের সাথে জড়িত লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের রক্ষা না করত, তনুর সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে সাহায্য করত, তাহলে জনগণের মনে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হত। তাদের মনে রাখা উচিত অপরাধীকে রক্ষা করাও একটি অপরাধ।

ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ বন্ধে কেবল পুলিশের ভূমিকা যথেষ্ট নয়। বস্তুত দেখা যায়, জনগণের সংগঠিত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-আন্দোলন না হলে পুলিশকে এ ধরনের ঘটনায় সাধারণত তৎপর হতে দেখা যায় না। অবশ্য আন্দোলনের পাশাপাশি মিডিয়ারও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। পানছড়িতে আলোচ্য ধর্ষণ ঘটনার পর প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংঘটিত না হলে আসামীকে গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর হতো কীনা সন্দেহ থেকে যায়। তবে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, পানছড়ি ও খাগড়াছড়িতে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাসহ সব সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ সন্দেহভাজন ধর্ষককে গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। এছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। পানছড়ির এই ঐক্য থেকে আমাদের অবশ্যই সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে। #
—————–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More