পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়ক নির্মাণ কাজে ছাত্র লীগের চাঁদাবাজি!
সিএইচটিনিউজ.কম ডেস্ক:
খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের নির্মাণ-সংস্কার ও মেরামত কাজ চলকালে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পানছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীরা জানায়, সড়ক নির্মাণকাজের গুণগতমান খারাপ হচ্ছে ঠিক, তবে ছাত্রলীগের ছেলেদের প্রতিবাদের ভাষাটি অসৌজন্যমূলক হয়েছে।
জানা গেছে, ৫/৬টি মোটরসাইকেলযোগে ছাত্রলীগের ছেলেরা মহড়া দিয়ে কাজের তদারকিতে নিযুক্ত ৩ কার্য-সহকারী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেলিম কন্সট্রাকশনের সাইট ম্যানেজার সিদ্দিককে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় তারা আলাদা আলাদা স্পটে কাজের তদারকিতে ব্যস্ত ছিলেন। তাদেরকে পানছড়ি উপজেলা সদরে নিয়ে একটি চায়ের দোকানে আটকে রেখে হুমকি দেয়া হয় কাজ বন্ধ রাখার। এ সময় তারা চাবি কেড়ে নেন রোলারচালক কাশেমের কাছ থেকে।
এ ঘটনা জানাজানি হবার পর জেলার সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঘটনাস’লে পৌঁছান সদর ও পানছড়ি থানার ওসি।
জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. সেলিমের সাথে পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বাহার মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাথ দেবের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ঘটনাটির আইনি জটিলতা এড়ানো হয়। এদিকে মো. সেলিমকে তার মোবাইলে বারবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
সেলিম কন্সট্রাকশনের সাইট ম্যানেজার সিদ্দিক বলেন, সকাল ১১টার দিকে কিছু লোক ৫/৬টি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। এক পর্যায়ে জোর করে তাকেসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্য-সহকারী মন্টু তালুকদার, জীবনেশ্বর ত্রিপুরা ও যতীন চাকমাকে মোটরসাইকেলে তুলে পানছড়ি উপজেলা সদরে কিছুক্ষণ আটকে রাখে।
তবে সিদ্দিক চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তার কাছে যুবকরা কাজের মান ভালো করার পরামর্শই দিয়েছেন। অন্যথা কাজ বন্ধ রাখার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
পানছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শ্রীকান্ত দেব মানিক ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আমিন রুবেল জানান, তারা বিষয়টি জানেন না। মানিক বলেছেন, এলাকাবাসীই কাজের মান খারাপ হচ্ছে দেখে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জয়নাথ দেব বলেন, কাজের মান খারাপ হচ্ছে জেনে এলাকার মানুষ কিছুটা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইসমাঈল হোসেন সড়ক নির্মাণ কাজে চাঁদা দাবির কথা স্বীকার করে বলেন, ১০/১২ জন যুবক আকস্মিকভাবে কাজ চলাকালে ৯-১২ ও ১৩ কিলোমিটার এলাকায় নিযুক্ত ৩ কার্য-সহকারীকে তুলে নিয়ে যায়। যুবকরা একই সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট ম্যানেজারকেও নিয়ে গিয়ে হুমকি-ধামকি প্রদান করে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার শেখ মিজানুর রহমান চাঁদাবাজি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মৌখিক অভিযোগ পাবার সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ করিম ঘটনাটিকে স্রেফ চাঁদাবাজি আখ্যায়িত করে বলেন, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। তাই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা পাশাপাশি কাজ চলাকালে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হবে।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে চলমান ৬ কোটি টাকার কাজ চলতি মাসের মধ্যেই শেষ করতে হবে। তাই ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে কাজটি শেষ করতে চাচ্ছে।
সূত্র: সুপ্রভাত বাংলাদেশ