পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এদিন : রক্তে লেখা ২২ এপ্রিল
সিএইচটিনিউজ.কম
২২ এপ্রিল ১৯৯৯
পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বজনহারা, শোকাবহ, হৃদয় মুষড়ানো অশ্রভেজা অসংখ্য দিনের মতো আরো একটি দিন ২২ এপ্রিল। ১৯৯৯ সালের এদিন খাগড়াছড়িতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন প্রতুল ও সুরমণি চাকমা।
সেদিন ছিল পাহাড়ি গণ পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পূর্ব নির্ধারিত যৌথ কেন্দ্রীয় সম্মেলন। খাগড়াছড়ি সদরের খেজুর বাগান মাঠে(উপজেলা মাঠে) এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সম্মেলনে যোগদানের জন্য সকাল থেকে খাগড়াছড়ি সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে গাড়িযোগে ও পায়ে হেঁটে হাজার হাজার জনতা জেলা শহরের দিকে আসতে থাকে। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে সম্মেলন স্থলে যেতে বাধা দেয়।
খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশ মুখে তিনটি পয়েন্টে (স্টেডিয়াম এলাকা, খাগড়াপুর ও জিরো মাইল) ব্যারিকেড সৃষ্টি করে সম্মেলনে আসা জনতাকে আটকানো হয়। তাছাড়া পানছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি ও দীঘিনালা সহ বিভিন্ন এলাকায় তাদেরকে পুলিশ আটকায়।
সকাল ১০টার দিকে পানছড়ি থেকে ২৫টি গাড়িকে করে সমাবেশে যোগ দিতে আসা ছাত্র জনতাকে পুলিশ স্টেডিয়াম এলাকায় আটকায়। সমবেত জনতা তাদেরকে সম্মেলন স্থালে যেতে বাধাদানের প্রতিবাদ জানাতে গেলে পুলিশের সাথে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় জনতা মুর্হুমুর্হু শ্লোগান দিয়ে তার তীব্র প্রতিবাদ জানালে এক পর্যায়ে পুলিশ বিনা উস্কাতে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রতুল চাকমা(১৯) শহীদ হন। অন্যদিকে জিরোমাইলেও একইভাবে পুলিশ জনতার উপর গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সুরমণি চাকমা শহীদ হন। সেদিন পুলিশের এই বর্বরোচিত হামলায় শতাধিক লোক আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয় ২৪ জন। খাগড়াছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি সহ বিভিন্ন স্থানে ২৫ জনকে আটক করা হয়।
পুলিশের এই বর্বর হামলা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। পাহাড়ি গণ পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের এই সম্মেলন ভণ্ডুল করে দেয়ার জন্য সরকার ও জেএসএস সন্তু চক্র নানা ষড়যন্ত্র চালায়। সরকার সন্তু চক্রকে দিয়ে সম্মেলনের একদিন আগে অর্থাৎ ২১ এপ্রিল একই দিন একই স্থানে একটি সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। যদিও তারা সে ধরনের কোন কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। তারা পানছড়ির লতিবান সহ কয়েকটি এলাকা থেকে দাগী আসামী মস্তান ও সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে জেলা সদরে নিয়ে আসে। ২১ এপ্রিল বিকালের দিকে ৫০/৬০ জনের সন্ত্রাসী দলটি দা, কিরিচ ও পাইপগানসহ সশস্ত্র মহড়া দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। স্বনির্ভর বাজারে জোরপূর্বক দোকানপাট বন্ধ করতে বাধ্য করে।
পুলিশের এই বর্বর হামলার প্রতিবাদে সেদিন (২২ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে স্বনির্ভর এর কাছাকাছি শহীদ অমর বিকাশ সড়কে হাজারো জনতার অংশগ্রহণে এক প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশ থেকে পুলিশী বর্বরতার নিন্দা এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি প্রদানের দাবি জানানো হয়।
২২ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসে রক্তে লেখা একটি দিন। সাহসিকতা ও বীরত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে শহীদ প্রতুল ও সুর মণির নাম। তাদের কীর্তি ও আত্মাহুতি চির অম্লান ও অক্ষয়।
————————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।