পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউপিডিএফ’র উদ্বেগ প্রকাশ

0
  • পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে অবিচল থাকতে কর্মীবাহিনী ও জনগণের প্রতি আহ্বান
    [divider style="normal" top="10" bottom="10"]

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় কমিটি আজ শনিবার ৫ মে ২০১৮ সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দলীয় কর্মী-সমর্থক ও জনগণকে শান্ত থেকে ধৈর্য্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলাপূর্বক পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে অবিচল থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার খপ্পড় থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে চিহ্নিত দুর্বৃত্তদের সংশ্রব পরিত্যাগ করে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যুক্ত হতে জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)-এর কর্মীবাহিনীর উদ্দেশ্যেও আন্তরিক আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাঙ্গামাটির নান্যাচরে আততায়ীর হাতে ৩ মে উপজেলা চেয়ারম্যান জেএসএস (লারমা)-এর নেতা শক্তিমান চাকমাকে হত্যা এবং পরের দিন ৪ মে একই এলাকায় বেতছড়িতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের হামলায় নব্য মুখোশবাহিনীর সর্দার তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাসহ নব্য মুখোশবাহিনী ও জেএসএস (লারমা)-এর চার সদস্যের মৃত্যু ও আট জনের জখম হওয়ার ঘটনাকে দুঃখজনক, অনভিপ্রেত এবং রহস্যজনক বলে বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়েছে। তা মেনে নেয়া বিশেষতঃ পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনের নিকট কঠিন হতে পারে বলে মন্তব্য করে ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটি বিবৃতিতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে এবং দোষীদের ধরার নামে নিরপরাধ কাউকে হয়রানি না করতেও সরকার-প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটনার সাথে ইউপিডিএফ’কে দায়ী করে অপরিণামদর্শী ভাবাবেগতাড়িত বক্তব্য-বিবৃতি দেয়ারও তীব্র নিন্দা ও আপত্তি জানিয়েছে ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে অশ্রু-রক্তপাত, সংঘাত ও ভূমি বেদখল বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়, তা নীলনক্সা মাফিক বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, শক্তিমান ও তপন জ্যোতি বর্মাসহ ছয় জনের মৃত্যুর পেছনে আসলে সরকার-কায়েমী স্বার্থবাদী একশ্রেণীর সেনা কর্মকর্তাই দায়ী। শক্তিমান-বর্মাও একসময় জনগণের হয়ে কাজ  করেছিল, দুর্বল মুহুর্তে টোপ দিয়ে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে গোয়েন্দা সংস্থা তাদের গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছে, এটাই হচ্ছে বড় ট্র্যাজেডি।

মিঠুন-প্লুটো-সুনীল বিকাশ ত্রিপুরাসহ ১০ জনকে খুন, বিভিন্ন অপকর্ম বিশেষতঃ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রী মন্টি-দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণের ঘটনায় নিজেদের যোগসাজশ অপকর্ম ফাঁস হয়ে পড়লে কায়েমী স্বার্থবাদী সেনাচক্র বেকায়দায় পড়ে যায়। নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে যে পন্থায় শাসকচক্র নিজেদের সৃষ্ট দালালদের বলি দিয়ে থাকে, শক্তিমান-বর্মার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না।

সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত ইউপিডিএফ-এর বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত মন্টি-দয়াসোনা ছাড়া পেয়ে ২৯ এপ্রিল ঢাকায় ১৯নারী-ছাত্র-যুব সংগঠনসমূহের সহায়তায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অপহরণকারীদের পরিচিতি ও প্রকৃত ঘটনাবলী জানিয়ে দেয়। এতে দেশব্যাপী অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে জনমত জোরদার হবার সম্ভাবনা তৈরি হলে, মন্টি-দয়াসোনা’র সংবাদ সম্মেলনের চার-পাঁচ দিনের মাথায় ৩ মে ও ৪ মে রাঙ্গামাটির নান্যাচরে পর পর দু’টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি জটিল করে ঘোলা জলে মাছ শিকারের মতলবে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডসহ নানা ঘটনা সংঘটিত করা হচ্ছে বলে ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটি মন্তব্য করেছে এবং গণশত্রুদের গুজব-অপপ্রচার ও সকল অপতৎপরতা ব্যর্থ করে দিয়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও ইউপিডিএফ-এর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে গত বছর ১৫ নভেম্বর বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত দাগী আসামী ও পার্টি থেকে বহিঃষ্কৃত কর্মীদের দিয়ে সেনা-পুলিশ প্রহরায় নামকাওয়াস্তে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক একটি তথাকথিত সংগঠনটি খাড়া করানো হয়, যাকে জনগণ ‘নব্য মুখোশবাহিনী’ নাম দিয়েছে। রাতের আঁধারে সেনা জিপ-এর সাহায্যে এদের নান্যাচরে মোতায়েন, অত্যাধুনিক মারাণাস্ত্র অস্ত্র তুলে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া, সেনা আশ্রয় প্রশ্রয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ; অন্যদিকে সংবিধান স্বীকৃত শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের ওপর সেনা-পুলিশ বাধা প্রদান, নান্যাচর উপজেলা সদরে ইউএনও কার্যালয়ে আইন শৃঙ্খলা সভা থেকে ফেরার পথে জনপ্রতিনিধিদের অপহরণের প্রচেষ্টা–এসবের বিরুদ্ধে দাবি জানানো সত্ত্বেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তাতে অতিষ্ঠ হয়ে নান্যাচর ও খাগড়াছড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা ‘নব্য মুখোশবাহিনী প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করে। বাঘাইছড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনতার আহ্বানে সড়ক অবরোধ, বাজার বয়কট ইত্যাদি কর্মসূচিও সফলভাবে পালিত হয়।

১৮ মার্চ রাঙ্গামাটির কুদুকছড়িতে প্রকাশ্য দিবালোকে এদের দ্বারা হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী মন্টি-দয়াসোনা’কে অপহরণ ও ছাত্রদের মেস-এ অগ্নিসংযোগ লুটপাটের ঘটনা দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় তোলে। চিহ্নিত অপহরণকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান-মেম্বারদের স্মারকলিপি পেশ, বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের বিবৃতি প্রদান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনসহ দেশের ১৯টি নারী-যুব-ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ, মশাল মিছিল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়া হয়। দেশব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভের মুখে দুর্বৃত্তরা মন্টি-দয়াসোনা’কে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল।
—————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More