পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্র’ নামে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ

0

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি জেলা সদরের জুম্ম ঠিকাদার সমিতি কনফারেন্স রুমে আজ শুক্রবার (০৭ এপ্রিল, ২০১৭) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দিনব্যাপী এক শিশু-কিশোর সভা আয়োজনের মাধ্যমে সিএইচটি এডভান্সড চিলড্রেন কোর (পার্বত্য চট্টগ্রাম অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্র) নামে একটি শিশু-কিশোর সংগঠন গঠন করা হয়েছে। শিশু-কিশোর সভার প্রতিপাদ্য শ্লোগান ছিল, ‘আগামী ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হও, নিজেকে দক্ষ যোগ্য করার জন্য প্রস্তুতি নাও!’।

# শিশু- কিশোর সভায় বক্তব্য রাখছেন ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক মাইকেল চাকমা।
# শিশু- কিশোর সভায় বক্তব্য রাখছেন ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক মাইকেল চাকমা।

সভায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দুই শতাধিক শিশু-কিশোর উপস্থিত ছিল। সভায় উদ্বোধনী সঙ্গীত হিসেবে ‘উই শ্যাল ওভারকাম, উই শ্যাল ওভারকাম’ এই আন্তর্জাতিক গানটি সকলে মিলে গাওয়া হয়। এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবৎ যারা অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে দুই মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। শিশু-কিশোর সম্মেলন আয়োজন প্রস্তুতি কমিটি’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)’র সংগঠক মিঠুন চাকমা। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা ও রিকো চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরুপা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুবফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জীবন চাকমা। অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বিধান চাকমা, অন্তরা চাকমা, শুক্রমনি চাকমা, বিকাশ চাকমা, সুবর্না চাকমা, প্রবীর ত্রিপুরা, রহেলা চাকমা, পূর্ণমোহন ত্রিপুরা, ছায়া চাকমা. পরান্তি চাকমা, ভাস্কর চাকমা প্রমুখ।

সভা পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগাড়ছড়ি জেলা শাখার সভাপতি তপন চাকমা।

# বক্তব্য রাখছেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা।
# বক্তব্য রাখছেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা।

আলোচনা সভায় বক্তাগণ বলেন, সুযোগ্য ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য শিশু-কিশোরদের যে উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করা দরকার কোনো সরকারই তার ব্যবস্থা করতে পারেনি। দেশের অন্য অঞ্চলে কিছুটা পরিমাণে ভয়হীন নিরাপদ পরিবেশ বিরাজ করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের নানা চাপের মধ্যে বেড়ে উঠতে হয়। ঘুরতে গেলে বেড়াতে গেলে পাহাড়ে উঠতে গেলে বা খেলতে গেলেই চোখ রাঙানি সহ্য করতে হয়, এমনকি নির্যাতন নিপীড়ন ও জেলজুলুমের সম্মুখীন হতে হয়।  শিক্ষার্থীদের রসাতলে নেয়ার জন্য হিরোইন ইয়াবাসহ ইত্যাদি মাদক ছড়িয়ে দেয়া হয়।

বক্তাগণ বলেন, উন্নত দেশের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই সেখানে শিশু-কিশোরদের সকল দিক থেকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য কর্তৃপক্ষ নানা ধরণের শিক্ষা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। একটি শিশুকে শিল্প বিজ্ঞান সাংস্কৃতিক ইতিহাস ইত্যাদি নানা জ্ঞানশাখাগত দিক থেকে অথবা শারীরিক দিক থেকে সক্ষম করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নত দেশে শিশু-কিশোরদের নিবিড় পরিচর্যা করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেই সুযোগ থাকে না। তাই শিশু-কিশোরদের মনন মেধার বিকাশ শুরুতেই রূদ্ধ হয়ে যায়। বক্তাগণ বলেন, আমাদের সরকার প্রশাসনের দিকে চেয়ে না থেকে নিজেদের সকল দিক থেকে আগামী ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের সাহস করে মহৎ ও উন্নত কিছু করার উদ্যোগ নিতে হবে। সেই উদ্যোগকে কার্যকর করার জন্যই দরকার শিশু-কিশোরদের নিজস্ব সংগঠন।

# সংগঠন গঠনের পটভূমি, লক্ষ্য উদ্দেশ্য, আশু কর্মসূচি, অঙ্গীকারনামার প্রতি হাত উঁচিয়ে সমর্থন জানাচ্ছেন শিশু-কিশোররা।
# সংগঠন গঠনের পটভূমি, লক্ষ্য উদ্দেশ্য, আশু কর্মসূচি, অঙ্গীকারনামার প্রতি হাত উঁচিয়ে সমর্থন জানাচ্ছেন শিশু-কিশোররা।

সভায় উপস্থিত সকল শিশু-কিশোর প্রতিনিধিদের সামনে সংগঠন গঠনের পটভূমি, লক্ষ্য উদ্দেশ্য, আশু কর্মসূচি, অঙ্গীকারনামা পড়ে শোনানো হয়। এরপর উপস্থিত সকল শিশু-কিশোর প্রতিনিধি হাত উঁচিয়ে ও হাততালি দিয়ে এ সকল বক্তব্যের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।

সভায় উপস্থিত সকল শিশু-কিশোর ৮ দফা অঙ্গীকারনামা একসাথে পাঠ করে মুষ্টিবদ্ধ হাতে উক্ত দফাসমূহ অক্ষরে অক্ষরে পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। অঙ্গীকারনামায় রয়েছে, আমাদের(শিশু-কিশোরদের) কথা ও কাজের মিল রাখতে হবে। সাধ্যমতো শিশু-কিশোরদের অপরের দুঃখে শরীক হতে হবে, তবে তার বিনিময়ে আমরা কোনো কিছু দাবি করতে পারবো না। শিশু-কিশোরদের সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য লড়তে হবে। অন্যায়কারী যতই ক্ষমতাধর হোক তার বিরুদ্ধে শিশু-কিশোররা রুখে দাঁড়াবে। নিজের মা-বোনের ইজ্জত সম্ভ্রম রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। নিজের জাতি বা জাতিসত্তা সম্পর্কে অপমান বা অবহেলাজনক কোনোকিছু সহ্য করা হবে না।

সভা থেকে সকলের সম্মতির ভিত্তিতে সংগঠনের নাম সিএইচটি এডভান্সড চিলড্রেন কোর বা অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্র রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই সংগঠনটি তিন পার্বত্য জেলার সকল শিশু-কিশোরদের সংগঠিত করার প্রচেষ্টা নেবে এবং শিশু-কিশোরদের আগামী  ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ-যোগ্য, সাহসী-উদ্যমি-শ্রমশীল-ন্যায়পরায়ণ হিসেবে গড়ে তুলতে কর্মসূচি নেবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। এরপর জিকো চাকমাকে আহ্বায়ক এবং ভাস্কর চাকমাকে সদস্য সচিব হিসেবে নির্বাচিত করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষনা করা হয়।

নবগঠিত সংগঠনের নেতৃত্বে আগামী ১২ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে বৈসাবি(বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু) উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত র‌্যালিতে শত শত শিশু-কিশোর একত্রিত হয়ে সুশৃংখলভাবে অংশ নেবে বলে উক্ত সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নবগঠিত সিএইচটি এডভান্সড চিলড্রেন কোর (পার্বত্য চট্টগ্রাম অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্র)-এর সদস্য মুক্তা চাকমা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
——————

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More