পার্বত্য চট্টগ্রামে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই-সিএইচটি কমিশন

0

সিএইচটিনিউজ.কম
CHTC Press conference2ঢাকা: পার্বত্য চট্টগ্রামে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। সেখানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানুষের অভিযোগগুলো নিরাপদভাবে খোঁজখবর নেয়ারও স্বাধীনতা নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সুপারিশমালার অনুসিদ্ধান্তে এসব কথা বলেছে সিএইচটি কমিশন।

আজ মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর ও সফরকালীন রাঙামাটিতে কমিশনের সদস্যদের উপর হামলার বিষয়ে পেশকৃত এক প্রতিবেদন ও সুপারিশমালায় এ অনুসিদ্ধান্ত জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা পেশ করেন কমিশনের সদস্য ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় কমিশনের কো-চেয়ার এড. সুলতানা কামাল, সদস্য খুশী কবির, ডঃ স্বপন আদনান, ডঃ ইফতেখারুজ্জামান, ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও  কমিশনের সমন্বয়কারী হানা শামস আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে পেশকৃত প্রতিবেদনের অনুসিদ্ধান্তে আরো বলা হয়, দুর্বল পাহাড়িদের অধিকার নিয়ে সিইচটি কমিশনের সদস্যরা দেখা সাক্ষাৎ ও মতামত প্রকাশ করতে চাইলে তাঁদের বিরুদ্ধে কথিত ‘বাঙালী‘ স্বার্থ রক্ষাকারী কিছু সংগঠন উগ্র সহিংসতা দেখাতে পিছপা হয়নি। তাঁরা এজন্যেই এটা করতে পারে যে র্পাবত্য চট্টগ্রামের পুলিশ প্রশাসন তাঁদেরকে এমন অন্যায় আচরণে কোনো বাধা দেয় নি। প্রশ্ন ওঠে, এক্ষেত্রে ‘বাঙালী’ স্বার্থ বলতে কি বোঝায়?

এতে আরো বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের জায়গাজমির একটা বড় অংশ সাধারণ পাহাড়ী বা বাঙালীর হাতে নেই। এগুলো চলে গেছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, নিরাপত্তাবাহিনী, প্রাইভেট কোম্পানী এবং সহিংস ভূমি দস্যুদের হাতে। তাঁরা চায় না যে এই স্থিতাবস্থা কিংবা তাঁর পেছনের ক্ষমতা বিন্যাসে কোনো পরিবর্তন আসুক। সে জন্য পাহাড়ীরা যদি তাঁদের জায়গাজমি বেদখলের ব্যাপারে প্রতিবাদ করে সেটা এই প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থে লাগে। এঁদের অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করেন না। যদিও এখানকার জায়গাজমি, রাবার বাগান, সেগুনবন এবং অন্যান্য ধরনের ব্যবসায়িক সম্পত্তি তাঁদের হাতে। সিএইচটি কমিশনের কর্মসূচী এসব স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যায়। এজন্যই এই প্রভাবশালী মহল কমিশনের কর্মকান্ডের ফলে ‘বাঙালীদের’ ক্ষয়ক্ষতির ধুয়া তুলে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করে। এই একই কারণে তাঁরা পার্বত্য চুক্তি, ভূমি কমিশন সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ধারার বাস্তবায়ন চায় না।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সিএইচটি কমিশনের কো-চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন,  খাগড়াছড়িতে পর্যটনের হোটেলে অবস্থান করার সময় পুলিশের উপস্থিতিতে বাঙালিদের সংগঠন সম-অধিকারের লোকজন আমাদের প্রতিহত করার কথা জানিয়ে শেলাগান দিয়েছে। রাঙামাটিতে পর্যটনের হোটেলেও পুলিশের সামনেই একই ঘটনা ঘটেছে। এমনকি  পুলিশের সামনেই আমাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের  নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘সমঅধিকার’ কথাটির অপব্যবহার করা হচ্ছে। সাংবিধানিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য সমঅধিকার প্রয়োজ্য। অথচ বাঙালি সংগঠনগুলো সমঅধিকারের কথা বলে সব ক্ষমতা নিজেদের কাছে রাখতে চায়।

এ হামলার ঘটনায় কমিশনের পাশাপাশি রাঙামাটি পুলিশ পৃথক একটি মামলা দায়ের করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

পেশকৃত প্রতিবেদনে ৭ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। সুপারিশগুলো হলো:
১. পাহাড়িদের জায়গাজমি বেদখল করা থেকে রাষ্ট্রীয় সংস্থা, প্রাইভেট কোম্পানী এবং যাবতীয় ভূমিদস্যুদের কর্মকান্ড প্রতিরোধের জন্য সরকারকে সংঘবদ্ধভাবে চাপ দেয়া হোক।
২. যেখানে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে ভূমি হুকুমদখল করা একান্তই অপরিহার্য সেখানে যতটুকু প্রয়োজন তার বেশী জায়গা যেন না নেয়া হয়।
৩. ‘বিজিবি’ সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থার বর্তমান এবং ভবিয্যৎ ভূমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে জনমত যাচাই করা হোক।
৪. পাহাড়ি বাঙালি নির্বিশেষে যাঁদের ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে তাঁদেরকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং বিকল্প জমি প্রদান সহ পূর্ণাঙ্গ পুর্ণবাসনের ব্যবস্থা করা হোক।
৫. ভূমি অধিগ্রহণের সময় সকল উচ্ছেদকৃত পরিবারক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের বিবেচনায় আনতে হবে- বিশেষ করে সেসব পাহাড়িদের, যাদের সরকারী কবুলিয়ৎ বা কাগজপত্র নেই, যদিও প্রথাগত ভূমি অধিকার আছে।
৬. ভূমি হুকুমদখলের সময় যেসব স্থানীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দমন করার জন্য মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করা হোক।
৭. পাহাড়ি ও বাঙালীর মধ্যে সংঘাত ও জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করার সকল অপচেষ্টা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করার ব্যবস্থা নেয়া হোক।

উল্লেখ্য, গত ২ জুলাই ২০১৪  কো-চেয়ার সুলতানা কামালের নেতৃত্বে সিএইচটি কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল খাগড়াছড়ি থেকে সপ্তমবারের মতো সরেজমিন পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর শুরু করেন। খাগড়াছড়ি সফর শেষে  ৪ জুলাই তাঁরা নির্ধারিত সফরসূচী অনুযায়ী খাগড়াছড়ি হতে রাঙ্গামাটি যান। এরপর তাঁদের বান্দরবানে গিয়ে কর্মসূচী সম্পন্ন করার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু ৫ জুলাই পুলিশি পাহারায় রাঙামাটির পর্যটন মোটেল থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথে শহরের ওমদামিয়া হিল এলাকায় সমঅধিকার সহ সেটলারদের কতিপয় সংগঠনের কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে সিএইচটি কমিশনের সদস্যদের বহনকারী গাড়িতে হামলা চালায়। এতে কমিশনের সফরকারী দলের সদস্য টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ডঃ ইফতেখারুজ্জামান, কমিশনের গবেষক ইলিরা দেওয়ান ও রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনু ইমতিয়াজ সোহেল আহত হন। এরপর কমিশনের প্রতিনিধি দলটি বান্দরবান সফর বাতিল করে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় ফিরে যায়।

নীচে সিএইচটি কমিশনের প্রদত্ত প্রতিবেদনের মূল অংশটি তুলে ধরা হলো:

…এ যাত্রায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরের জন্য কমিশনের লক্ষ্য ছিলো
১. ভূমি গ্রাস এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলী সরেজমিনে তদন্ত করে সেগুলোর কারণ ও ফলাফল প্রকাশ্যে জানিয়ে দেয়া।
২. পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত চুক্তির কি কি ধারা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি তা সনাক্ত করা এবং তার কারণ নির্দেশ করা।
৩. ভূমি বেদখল, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং চুক্তি বাস্তবায়নে অধিকতর বিলম্ব যাতে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে সুপারিশ প্রস্তাব করা।

উপরোক্ত সহিংস ঘটনাবলির কারণে কমিশনের কর্মসূচী শুধুমাত্র আংশিকভাবে পালিত হয়। ফলে এই সফরের লক্ষ্যসমূহের সবটুকু অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও কমিশন যেটুকু পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে পেরেছেন সেটুকু সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।

দিঘীনালার বাবুছড়ায় বিজিবির সেক্টর সদর নির্মাণের জন্য পাহাড়িদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ
২০০৫ সাল থেকে বিজিবি তার সেক্টর সদর স্থাপনের জন্য স্থানীয় পাহাড়ি অধিবাসীদের জায়গাজমি হুকুমদখল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি, ১০ই জুন ২০১৪ তারিখে এই এলাকার দখলদারী নিয়ে বিজিবি এবং পুলিশের সাথে স্থানীয় অধিবাসীদের সংঘাত হয়। এর ফলে বেশ কিছু স্থানীয় পাহাড়ি নর-নারী আহত হয়। ১১ই জুন বিজিবি ২৫০জন স্থানীয় পাহাড়িদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এর জন্য পুলিশ কয়েকজন বয়স্ক মহিলা এবং একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকেও গ্রেফতার করে। উচ্ছেদকৃত ২১টি পরিবার বর্তমানে গ্রামের কাছাকাছি একটি হাইস্কুলের দুটি কামরায় গাদাগাদি করে কোনমতে দিনযাপন করছে। কমিশনের সদস্যদের কাছে এই সর্বস্বান্ত পরিবারের সদস্যরা তাঁদের অভিজ্ঞতা ও দুদর্শা বর্ণনা করেন।

এরপর কমিশন দখলকৃত জায়গায় বিজিবির ৫১তম ব্যাটালিয়নের দপ্তরে যান এবং সেখানে উপস্থিত ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক (II-IC) মেজর কামাল ও তাঁর সহকর্মীদের সাথে কথা বলেন। পাহাড়িদের বাস্তুচ্যুত ও ভূমি থেকে উৎখাত করার ক্ষেত্রে বিজিবির কোনো দায়িত্ব নাই বলে তাঁরা দাবী করেন। বিজিবির এই কর্মকর্তার মতে পাহাড়ি নারীরাই বিজিবির সদস্যদের লাঠিসোঠা নিয়ে আক্রমণ করে। এই মহিলাদের আঘাতেই বিজিবির সদস্যদের কয়েকটি রাইফেল ভাঙচুর হয় বলেও তাঁরা দাবী করেন এবং পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইডে এগুলোর ফটো দেখান। কিন্তু বিজিবির অফিসার ও তাঁর সহকর্মীদের এই ভাষ্য কমিশনের সদস্যদের কাছে মোটেই বিশ্বাসযোগ্য (Credible) মনে হয়নি।

তদেকমারা কিজিঙে ভাবনা কুটির নির্মাণে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের বাধা
গত ২৭এপ্রিল ২০১৪ বাঘাইছড়ি উপজেলার তদেকমারা কিজিঙে অজলচুগ বা দুইটিলায় পাহাড়ি বৌদ্ধরা একটি ভাবনা কুটির নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এই কাজে সাথে সাথে আপত্তি জানান স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের প্রধান। পরবর্তীতে কাজ চলতে থাকলে বাঘাইছড়ির ইউএনও ১মে ২০১৪ তারিখে ভাবনা কুটির ও তার আশেপাশের জায়গায় ১৪৪ধারা জারি করেন। এর ফলে এ স্থানে কয়েকজনের বেশী বৌদ্ধ ভক্ত কুটির এলাকায় যেতে পারছেন না। এখানে উল্লেখ্য যে কুটির এলাকাটি বনবিভাগের রির্জাভ ফরেস্ট সীমানার অভ্যন্তরে। এই সূত্র ধরে বনবিভাগ ২৯এপ্রিল ২০১৪ তারিখে অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জন স্থানীয় মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সিএইচটি কমিশনের সদস্যরা দুইটিলায় গেলে স্থানীয় পাহাড়িরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে একটা মৌন মিছিলে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁরা তাঁদের বৌদ্ধ ধর্ম পালনের জন্য ভাবনা কুটিরে আসা যাওয়ার স্বাধীনতা দাবী করেন। সে নিমিত্তে তাঁরা চান যে ১৪৪ ধারা যেন তুলে নেয়া হয়। এবং তাঁদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করে তাঁদের হয়রানী থেকে নিস্তার দেয়ার ব্যবস্থা করার দাবীও জানান।

অন্যান্য কার্যক্রম ও দেখাসাক্ষা
সিএইচটি কমিশনের সদস্যরা ২-৪ জুলাই ২০১৪সময়কালে খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটির স্থানীয় প্রশাসন এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধি ও সংগঠনের সদস্যদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন। তাঁদের মধ্যে খাগড়াছড়ির ডিসি মোঃ মাসুদ করিম এবং পুলিশ সুপার শেখ মোহামদ মিজানুর রহমান রয়েছেন। ৪ঠা জুলাই রাঙ্গামাটিতে যাবার পর আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু লারমা) এবং গৌতম দেওয়ানের নেতৃত্বে নাগরিক কমিটির সদস্যবৃন্দের সাথেও মতবিনিময় হয়। চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়ের সাথে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে কমিশনের সদস্যদের ঘরোয়া আলাপ হয়। পরবর্তীতে, ৫ই জুলাই রাঙ্গামাটির ডিসি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল এবং পুলিশ সুপার আমেনা বেগমের সাথেও কমিশন সদস্যদের সাক্ষাৎ হয়।

বান্দরবানেও কমিশনের বিস্তারিত কর্মসূচী ছিলো কিন্তু সহিংসতার কারণে তা পালন করা যায়নি। সেখানেও সরকারি প্রশাসন ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা ছিলো। বান্দরবান জেলাতেও বিজিবির ভূমি হুকুমদখলের কারণে পাহাড়িদের উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনার কর্মসূচী ছিলো। এছাড়া কমিশনের সদস্যরা চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির সাথেও সাক্ষাৎ করেছেন।

সমঅধিকার আন্দোলন ও অন্যান্য বাঙালী সংগঠন
২০০৮ সাল থেকে শুরু করে সিএইচটি কমিশন ছয়বার পার্বত্য চট্টগ্রামে সরেজমিনে সফরে এসেছে এবং সে সময় বাঙালী সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করেছে। বিশেষ করে, সমঅধিকার আন্দোলনের সাথে কমিশনের সদস্যদের সরাসরি মতবিনিময় হয়েছে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান শহরে এবং এছাড়াও রাজধানী ঢাকাতেও তাঁদের প্রতিনিধিরা কমিশনের সাথে কথা বলতে এসেছেন। এবারও ৪জুলাই ২০১৪সাল সকালে সমঅধিকার আন্দোলনের সাথে রাঙ্গামাটিতে বৈঠকের প্রস্তাব করেছিলো সিএইচটি কমিশন। কিন্তু, প্রথমে রাজী হলেও পরবর্তীতে সমঅধিকার আন্দোলনের কাছ থেকে আলোচনার ব্যাপারে আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি।

বরঞ্চ, খাগড়াছড়ি থেকেই সমঅধিকার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সিএইচটি কমিশনকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিতাড়ন করার হুমকি দিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা শুরু করে। আরও কয়েকটি তথাকথিত বাঙালি সংগঠনের সাথে মিলে কমিশনের রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবানের কর্মসূচীকে প্রতিহত করার ডাক দেয়। এই বিরোধিতা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে যখন এই সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা কমিশনের সদস্যদেরকে রাঙ্গামাটির পর্যটন মোটেলে ঘেরাও করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ হুমকি দিতে থাকে। লক্ষ্যণীয় যে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর মোঃ ইউসুফ ও তাঁর ফোর্সের উপস্থিতিতেই তাঁরা বিনা বাধায় এই আক্রমণাত্ত্বক আচরণ করে। কমিশনের সদস্যরা একবার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে এই পুলিশবৃন্দ তাঁদের সাথে এসকর্ট হিসেবে যায় না। পথে বাধা পেয়ে কমিশন সদস্যরা মোটেলে ফিরে আসেন। তারপর জনৈক নারীকর্মী নূরজাহানের নেতৃত্বে উপস্থিত বাঙালি ক্যাডারা কমিশনকে পুণরায় গালিগালাজ ও হুমকি দিতে থাকে। তাঁরা উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথেও কমিশনের সদস্যদের কথা বলতে দেয়নি। এএসআই ইউসুফের অধীনে পুলিশবৃন্দ এবারও নির্বিকার ছিলো এবং কোনো বাধা দেয়ার চেষ্টাও করেনি।

দুপুরের দিকে রাঙ্গামাটির কোতওয়ালী থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মোঃ ইমতিয়াজ সোহেল মনু এসে পুলিশী প্রতিরক্ষার আশ্বাস দিয়ে সিএইচটি কমিশনের সদস্যদের রাঙ্গামাটি শহরের দিকে নিতে থাকেন। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ এসকর্ট থাকা সত্ত্বেও রাস্তার পাশের একটি টিলা থেকে কমিশনের গাড়ীর ওপর অবিরাম ইটপাটকেল বর্ষণ করা হয়। এর আঘাতে গাড়ীর উইন্ডস্ক্রীণ এবং পাশের ও পেছনের কাঁচগুলো ভেঙে যায় এবং ভাঙা কাঁচের টুকরো আরোহীদের গায়ে মাথায় ছিটিয়ে পড়ে। ইলিরা দেওয়ানের মাথা ফেটে যায়, ইফতেখারুজ্জামানের আঙুল কেটে যায়, সারা হোসেন গলায় আঘাত পান, সুলতানা কামাল ও হানা শামস আহমেদের গায়ে ভাঙা কাঁচ ছিটকে পড়ে। স্বয়ং পুলিশের ওসির মুখে আঘাত লাগে, গাড়ী চালকও আহত হয়। এই পর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আক্রমণকারীদের ধরার চেষ্টা করেনি।

সিএইচটি কমিশনের সদস্যদের প্রথমে কোতওয়ালী থানায় নেওয়া হয়। পরে ইলিরা দেওয়ানকে সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয় এবং তার মাথায় চারটি ’স্টিচ দেয়া হয়। এরপর কমিশনের সকলকে পুলিশ এসকর্ট দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছে দেয়। সে রাতে আহত ইলিরা দেওয়ান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হয়।
———-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More