পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে ইউপিডিএফ

0

ডেস্ক রিপোর্ট
সিএইচটিনিউজ.কম
ইউনাইটেড পিপল্‌স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেল (Human Rights Monitoring Cell) ২০১২ সালের পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে
এতে বলা হয়েছে গত বছর ২২ – ২৩ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়িদের ওপর কমপক্ষে ১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছেনিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ইউপিডিএফের সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন ৩৬ জনজেএসএস সন্তু গ্রুপের হামলায় নিহত হয়েছেন ৮ জন ইউপিডিএফ সদস্য ও অপহৃত হয়েছেন ৩৮ জন সমর্থকলক্ষীছড়িতে বোরকা পার্টির হাতে নিহত হয়েছেন ২ জন ও অপহৃত হয়েছেন ১৪ জনএরা সবাই ইউপিডিএফ সমর্থক
জুম্ম নারী ধর্ষিত হয়েছেন মোট ১৯ জনএদের মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন ও ধর্ষণের পর খুন হয়েছেন ৪ জনএছাড়া ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হয়েছেন ১২ জন, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১ জন ও অপহৃত হয়েছেন ১ জনঅপরদিকে বাঙালি নারী ধর্ষিত হন ৮ জন ও ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার ২ জন
জমি বেদখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় একটি চা বাগান কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় ৫০০ জুম্ম পরিবারের মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করে
রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক হামলা
২০১২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে একটিএটি ঘটে ২২ – ২৩ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরেএতে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান, কলেজের শিক্ষক, ডাক্তার ও সাংবদিকসহ শতাধিক পাহাড়ি আহত হনএছাড়া হামলাকারী বাঙালিরা বনরূপায় পাহাড়িদের বেশ কয়েকটি দোকান পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালায় এবং একটি বাস ও ৫টি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়রাঙামাটি কলেজ বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে কলেজ ক্যাম্পাসে পাহাড়ি ও বাঙালি ছাত্রদের মধ্যে হাতাহাতি থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত হলেও, যেভাবে তা দ্রুত শহরে ছড়িয়ে পড়ে ও পাহাড়িদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়, তাতে স্পষ্ট যে এ ঘটনা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত
ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি রিপোর্ট প্রকাশ করলেও হামলার সাথে জড়িতদের কাউকে গ্রেফতার কিংবা শাস্তি দেয়া হয়নিঅধিকন্তু রিপোর্টে প্রকৃত অপরাধী ও তাদের মদদদাতাদের আড়াল করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের বিতর্কিত ভূমিকাকে কেবল চাপা দেয়া হয়েছে তা নয়, তাদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছেতাই রিপোর্টটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নিঅপরদিকে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার না হওয়ায় রাঙামাটিতে পাহাড়িদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছেএই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে রাঙামাটির নানিয়াচরে পাহাড়িদের সেনাবাহিনী কর্তৃক আয়োজিত নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা বর্জনের মাধ্যমে
বিভিন্ন স্থানে সেটলার হামলা
২০১২ সালে পাহাড়িদের উপর কমপক্ষে ১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছেএ সব হামলায় ১৫ ব্যক্তি আহত, ৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, একটি বৌদ্ধ মন্দির ও একটি হিন্দু শিব মন্দিরে ভাঙচুর এবং একটি পাহাড়ি পরিবার উচ্ছেদের শিকার হয়এছাড়া হামলাকারীরা অনেক ক্ষেত্রে পাহাড়িদের বাড়িতে লুটপাটও চালায়অধিকাংশ হামলা হয়েছে ভূমি বেদখলকে কেন্দ্র করে
গ্রেফতার
গত বছর ইউপিডিএফের ৩৬ জন সদস্য গ্রেফতার হয়এদের মধ্যে ২৫ জনকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং বাকি ১১জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেতাদের প্রায় সবার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয় এবং হত্যা, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়অবশ্য অনেকে আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্তি লাভ করেঅপরদিকে সেনা অপারেশন ও তল্লাশীর ঘটনায় ৯ জন নিরীহ গ্রামবাসী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে
সন্তু গ্রুপের হামলা
২০১২ সালে জেএসএস সন্তু গ্রুপের হামলায় নিহত হয় ৮ ইউপিডিএফ সদস্য, ১ জেএসএস এম এন লারমা গ্রুপের সদস্য ও তিন ইউপিডিএফ সমর্থকএছাড়া অপর ৬ ইউপিডিএফ সদস্য, ৬ জেএসএস এম এন লারমা গ্রুপের সদস্য ও ১ ইউপিডিএফ সমর্থকের ওপর হত্যা প্রচেষ্টা চালানো হয়এতে অনেকে গুরুতর আহত হনসন্তু গ্রুপ ৩৮ জনকে অপহরণ করেএদের মধ্যে কমপে ৪ জনকে গুম করা হয়েছে নিশ্চিতভাবে জানা গেছেবাকিদের অধিকাংশকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছেএদের বাইরেও ৪ নিরীহ ব্যক্তির ওপর নির্মম শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছেএছাড়া সন্তু গ্রুপ খাগড়াছড়ির স্বনির্ভরস্থ ইউপিডিএফ অফিসে আগুন দিয়ে আংশিক তি করে এবং সুবলং ও বান্দরবান অফিস দখলের ব্যর্থ চেষ্টা চালায়
বোরকা পার্টি
সেনা-সন্তু মদদপুষ্ঠ বোরকা পার্টির সন্ত্রাসীরা এক ইউপিডিএফ সদস্য ও অপর এক সমর্থককে খুন, ১৪ জনকে অপহরণ, ১১ ব্যক্তির ওপর শারীরিক নির্যাতন ও ৪ ইউপিডিএফ সদস্যের পরিবারকে গ্রাম থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে
ধষর্ণ
গত এক বছরে জুম্ম নারী ধর্ষিত হয়েছেন মোট ১৯ জনএদের মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন ও ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে ৪ জনকেধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হয়েছেন ১২ জন, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১ জন ও অপহৃত হয়েছেন ১ জনধর্ষিতাদের মধ্যে ১১ বছর বয়সী শিশু, প্রতিবন্ধী, গর্ভবতীও রয়েছেনএদের মধ্যে ২ জন পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে ধর্ষণের শিকার হনধর্ষিতা ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জন ধর্ষণের শিকার হন সেটলার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য কর্তৃক
অপরদিকে বাঙালি নারী ধর্ষিত হন ৮ জন ও ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হন ২ জনধর্ষণকারী বা ধর্ষণ প্রচেষ্টাকারীরা পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় সম্প্রদায় থেকে রয়েছে
ভূমি বেদখল
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ভূমি বেদখল সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটিপ্রধানত খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, রামগড়, দীঘিনালা, মহালছড়ি, রাঙামাটির বরকল, কাপ্তাই এবং বান্দরবানের লামা ও থানছিতে এসব ঘটনা ঘটেছেজমি বেদখলকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনাও ঘটে এবং দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়খাগড়াছড়ির বেতছড়িতে সেটলাররা দুই পাহাড়ির ১৫ একর জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালালে সংঘর্ষ বাঁধেএর জের ধরে পরদিন খাগড়াছড়ি বাজারে সেটলাররা দুই পাহাড়িকে মারধর করেকাপ্তাইয়ে একটি চা বাগান কর্তৃপরে দায়ের করা মামলায় ৫০০ পাহাড়ি পরিবার উচ্ছেদ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। (৩০ এপ্রিল,প্রথম আলো)অপরদিকে বান্দরবানের থানছি সদরে বিজিবির একটি ক্যাম্প নির্মাণের জন্য ৪০ একর জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।#

…………

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More