পার্বত্য চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধের প্রথম দিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত: আটক ৬

নিজস্ব প্রতিবেদক,সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে এবং পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ডাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বতঃস্ফুর্তভাবে সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচী পালিত হয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা খাগড়াছড়ির গুইমারায় ৪ জন ও বান্দরবানে ২ জনকে আটক করেছে।

বান্দরবান: পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল বান্দরবানে সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। বান্দরবান সদর থেকে চট্টগ্রাম ও জেলাভ্যন্তরের অন্যান্য উপজেলায় সড়ক ও নৌ পথে কোন যান চলাচল করেনি৷ অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং করার সময় সেনা সদস্যরা বান্দরবানের মেঘলা থেকে দুই স্কুল ছাত্রকে আটক করে৷ পরে তাদেরকে বান্দরবান সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়৷ আটককৃত দু‘জনই টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের (টিএসসি) ছাত্র৷ তারা হলেন হাচিং মারমা (১৫) ও অংসাথুই মারমা (১৫)৷

উত্তর ও মধ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম : এদিকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে দু‘দিন ব্যাপী সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচীর প্রথম দিন স্বতঃস্ফুর্তভাবে পালিত হয়েছে। দুই জেলার সকল উপজেলায় অভ্যন্তরীণ ও দুরপাল্লার কোন যান চলাচল করেনি। তবে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় পিকেটারদের বাধা প্রদান এবং কয়েকজনকে আটক করেছে। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়ায় আর্মিরা হামলা চালিয়ে ইউপিডিএফ কর্মী ও সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। খাগড়াছড়ি সদরের মহাজন পাড়ায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য রিনা চাকমার নেতৃত্বে পিকেটিং করার সময় পুলিশ বাধা দেয় এবং তার কাছ থেকে ইউপিডিএফ-এর লিফলেট কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়।

অপর এক ঘটনায় সকাল পৌনে ৯টার দিকে খাগড়াছড়ির গুইমারার যৌথ খামার এলাকা থেকে আর্মিরা ৩ নারীসহ চার জনকে আটক করে৷ আটককৃতরা হলেন আপুচু মারমা (২২) পিতা- অংশে মারমা, আক্রইমা মারমা (১৬) পিতা- রিনাচাই মারমা, ম্রাচাং মারমা (৪৫),স্বামী- চাজাইঅং মারমা, নাহংচি মারমা (১৮) পিতা- চাজাইঅং মারমা৷ এরা সবাই যৌথ খামার পাড়ার বাসিন্দা। আর্মিরা তাদেরকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে গুইমারা থানায় নিয়ে যায়। পরে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে থানা থেকে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

:
নিন্দা ও প্রতিবাদ :ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা ও বান্দরবান ইউনিটের সংগঠক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলাকালে সেনাবাহিনী কর্তৃক বান্দরবানে স্কুল ছাত্র ও খাগড়াছড়ির গুইমারায় নিরীহ গ্রামবাসীদের আটকের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছেন।

ধন্যবাদ জ্ঞাপন : ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা ও বান্দরবান ইউনিটের সংগঠক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা অবরোধ কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা করায় তিন জেলার সকল সড়ক ও নৌ পরিবহন (ট্রাক, বাস, মিনিবাস, জিপ, সিএনজি, অটো রিক্সা, লঞ্চ, নৌ-যান ইত্যাদি) মালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিক সংগঠনসহ পাহাড়ি-বাঙালি সাধারণ জনগণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এছাড়া আগামীকাল একইভাবে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে চলমান অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে দুই জেলার সকল পরিবহন মালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিক সংগঠনসহ পাহাড়ি-বাঙালি সাধারণ জনগণের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

তারা সরকারের প্রতি পাহাড়ি জনগণকে জোর করে বাঙালি বানানোর প্রচেষ্টা পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে বহু জাতি ও ভাষাভাষীর লোকের বসবাস৷ তাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ জাতীয় পরিচয়, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে বাস করার অধিকার আছে৷ এক-জাতি রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি।

“দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিবর রহমান সংবিধানে পাহাড়িসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতির জনগণকে বাঙালি হিসেবে পরিচিত করে যে ঐতিহাসিক ভুল করেছিলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করলেন” মন্তব্য করে ইউপিডিএফ নেতারা বলেন, “এই ভুল অবিলম্বে সংশোধন করা না হলে তার খেসারত একদিন দিতে হবে।“

তারা বলেন, পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে যোগাযোগ ও আদান-প্রদানের ইতিহাস বহু শতাব্দী পুরনো৷ আমাদের পূর্ব পুরুষরা অতীতে কেউ নিজেদের বাঙালি বলে পরিচয় দেননি; অপরদিকে বাঙালিদের পূর্ব পুরুষরাও পাহাড়িদের কোন দিন বাঙালি বলে সম্বোধন করেননি বা এখনো কেউ করেন না৷ কাজেই সাংবিধানিকভাবে জোর করে পাহাড়িদেরকে বাঙালি জাতির মধ্যে বিলীন করার মাধ্যমে সরকারের চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিস্ট চরিত্রই ফুটে উঠেছে।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় ২০ ও ২১ জুলাই দুই দিন (৩৬ ঘন্টা) এবং বান্দরবানে ২০ জুলাই সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেয়।