পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন ও গ্যাসের দাবিতে খাগড়াছড়িতে নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদের মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন ও মানিকছড়ির সেমুতাঙ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত গ্যাস পার্বত্য জেলাবাসীদের জন্য সরবরাহের দাবিতে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের সংগঠন নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদ।খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সামনে আজ ২২ জানুয়ারী ২০১২ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এক ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদের সভাপতি ও পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, খাগড়াছড়ি পৌর কাউন্সিল মিলন দেওয়ান মনাঙ, জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা, এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা, এ্যাডভোকেট রিপল চাকমা ওআদিবাসী জাতীয় কোয়ালিশনের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি নমিতা চাকমা। এছাড়া দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে আরো বক্তব্য রাখেনখাগড়াছড়ি ল‘ কলেজের অধ্যক্ষ জনাব খুরশীদ আলাম, খাগড়াছড়ি জেলা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব তৈয়ব আলী ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জনাব শাহাজ উদ্দিন। মানববন্ধনে বিভিন্ন উপজেলা থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, এলাকার মুরুব্বী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা অবিলম্বে তিন পাবত্য জেলা পরিষদে নির্বাচন ও সেমুতাং গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত গ্যাস পার্বত্য জেলাবাসীদের জন্য সরবরাহের দাবি জানান।
মানববন্ধন শেষে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।স্মারকলিপি দেয়ার সময় নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদের সভাপতি সর্বোত্তম চাকমা, সহ সভাপতি কাকলী খীসা, মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সোনা রতন চাকমা, খাগড়াছড়ি পৌর কাউন্সিলর মিলন দেওয়ান মনাঙ, মাইসছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শান্তশীল চাকমা, সিন্দুকছড়ি ইউপি চেয়ারমান সুইনুপ্রু চৌধুরী ও বাসন্তি চাকমা উপস্থিত ছিলেন।সর্বোত্তম চাকমা ও কাকলী খীসাস্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯৮৯ সালে গঠনের পর দীর্ঘ ২২ বছরেও জেলা পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না।কোন সরকারই পার্বত্য জেলা পরিষদকে জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করেনি।শুধু দলীয় স্বার্থ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার হাতিয়ার হিসেবেই জেলা পরিষদকে ব্যবহার করা হচ্ছে।যার কারণে কোন সরকারই জেলা পরিষদের নির্বাচন দেয়নি এবং বর্তমান মহাজোট সরকারও দিচ্ছে না।নির্বাচন না দিয়ে জেলা পরিষদকে সরকারের পছন্দের দলীয় লোক ও তাদের আত্মীয় স্বজনের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে।
স্মরকলিপিতে আরো বলা হয়, জেলা পরিষদের অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং নিয়োগ ও বদলী বাণিজ্য আজ সবার কাছে ওপেন সিক্রেট একটা বিষয়।চাকুরীতে নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে অযোগ্য অদ লোক এমনকি হিরোইন, গাঁজাখোর, সমাজের বখাটেরাও নিয়োগ পাচ্ছে।এলাকার উন্নয়নের নামে হাজার হাজর মেট্রিক টন গম, চাউল নিজেদের আরাম আয়েশের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে।সেজন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে জেলা পরিষদ নির্বাচন এখন সময়ের দাবি।পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ জেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দেখতে চায়।
সেমুতাঙের গ্যাস পাবত্য জেলাবাসীদের জন্য সরবরাহের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি সেমুতাং গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন চলছে এবং তা জাতীয় গ্রীডে যুক্ত করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে নেওয়া হচ্ছে।তেল, গ্যাস, কয়লাসহ সব খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর স্থানীয় জনগণের অধিকার সবচেয়ে বেশি।স্থানীয় জনগণের চাহিদা মেটানোর পরেই অন্যত্র সরবরাহ করা যে কোন গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।কিন্তু বর্তমান সরকার পার্বত্যবাসীর চাহিদা এবং দাবি তোয়াক্কা না করে সেমুতাংয়ের গ্যাস জাতীয় গ্রীডে নিয়ে যাচ্ছে।
স্মারকলিপিতে অবিলম্বে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন দেয়া, জেলা পরিষদের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ফান্ড জেলা পরিষদ থেকে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে ৫০% উন্নয়ন কাজে ফান্ড বরাদ্দ দেয়া, পার্বত্য জেলা পরিষদের উন্নয়ন কমটিতে সকল উপজেলা চেয়ারম্যানদের অন্তর্ভুক্ত করা, সেমুতাং গ্যাস ত্রে থেকে উত্তোলিত গ্যাস তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দাদের জন্য সরবরাহের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন বন্ধ রাখা, সেমুতাংয়ের গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ ও পার্বত্য চট্টগ্রামে গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কারখানা স্থাপন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার দাবি জানোনো হয়।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত দাবিকে সামনে রেখে নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদের উদ্যোগে গত ১২ জানুয়ারী সংবাদ সম্মেলন ও ২০ জানুয়ারী খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বিশিষ্ট মুরুব্বীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে।