পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘের মিটিঙে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কমিটি গঠনের চেষ্টা ব্যর্থ, সন্তু লারমাসহ প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু অপদস্থ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিএইচটিনিউজ.কম
ঢাকা: গত ২৭ এপ্রিল শুক্রবার ঢাকায় শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারে পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘের মিটিঙে আদালতের রায় অমান্য করে অবৈধভাবে ও জোরপূর্বক কমিটি গঠনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জনসংহতি সমিতির সন্তু গ্রুপের প্রধান সন্তু লারমা কিছু গুণ্ডা পান্ডাসহ ওই মিটিঙে উপস্থিত ছিলেন। সংঘের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু সভাপতিত্ব করেন।
ইতিপূর্বে সভা পরিচালনার দায়িত্ব সব সময় সাধারণ সম্পাদক জ্ঞান বিকাশ চাকমা (মিতুগুলো) পালন করে থাকলেও এবারে তাকে কোন কথা বলতে দেয়া হয়নি। তিনি তার বক্তব্য দিতে চাইলে সন্তু লারমার গুণ্ডারা তাকে জোর করে থামিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে তিনি সভা কক্ষ ত্যাগ করলে দু‘একজন বাদে ঢাকাস্থ সকল মুরুব্বী ওয়াক আউট করেন। ফলে সভায় কমিটি গঠনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
এক পর্যায়ে সন্তু লারমা তার গুণ্ডা বাহিনীকে মেকি সমালোচনা করে বলেন, ‘এখানে যে আমি আছি তোমরা দেখ না? আমার সামনে মিতুগুলোর সাথে কেন এমন ব্যবহার করলে? তোমাদের এ ধরনের আচরণের কারণেই ঢাকার জুম্মরা আমাদের বিপক্ষে গেছে।‘সন্তু লারমা আরো বলেন, ‘আমি বৌদ্ধ সংঘের কোন সদস্য নয়। কিন্তু দায়িত্বের খাতিরে আমাকে এখানে উপস্থিত থাকতে হয়েছে। আমি উপস্থিত না থাকলে আজ মারামারি হতো।’ তিনি তার দেয়া বক্তব্য রেকর্ড না করারও অনুরোধ করেন।
সভায় উপস্থিত ঢাকাস্থ এক জুম্ম চাকুরীজীবী বলেন, মারামারি তো সন্তু লারমাই করতে গিয়েছিলেন। তিনি যেভাবে মাস্তান বাহিনী নিয়ে মিটিঙে উপস্থিত হন, তাতে তো তাকে একজন রাজনৈতিক দলের নেতা বলেই মনে হয় না। তিনি তো মাস্তানের সর্দার ছাড়া আর কিছু নন।‘
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য একজন বলেন, ‘পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘের ২০০৮ সালের কমিটিও সন্তু লারমা এভাবে জোর খাটিয়ে চাপিয়ে দিয়েছিলেন। ভণ্ড ভিক্ষু প্রজ্ঞানন্দকে সংঘের সভাপতি হিসেবে তাদেরকে মেনে নিতে বাধ্য করেছিলেন। সে সময় ঢাকাস্থ জুম্মরা তা নীরবে হজম করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এবারও সন্তু লারমা ষড়যন্ত্র করে ও জোর খাটিয়ে তার মনের মতো কমিটি করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। কিন্তু তিনি আগের মতো করতে পারছেন না। ঢাকাস্থ জুম্মরা এখন প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন। তারা আর সন্তুর অন্যায় খবরদারি ও মাতব্বরী মানতে রাজী নন।‘
বুয়েটে অধ্যয়নরত এক ছাত্র প্রশ্ন করে বলেন, ‘পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘের সভায় সন্তু লারমা কেন উপস্থিত থাকবেন? তিনি তো এই সংগঠনের কোন সদস্য নন। তার সাথে যে সব লোকজন ছিল তাদেরও তো কোন সদস্য পদ নেই। শুক্রবার যে সভা ডাকা হয়েছে তা তো কোন সমাবেশ বা অন্য কোন মিটিঙ নয় যে সন্তু লারমাকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে হবে। এর আগে সংঘের অন্য কোন মিটিঙে তো বাইরের কাউকে ডাকা হয়নি।‘
জানা গেছে, ভণ্ড ভিক্ষু প্রজ্ঞানন্দ ১৯৮০র দশকে মোনঘর নামে রাঙামাটিতে একটি আশ্রম খোলেন। ঢাকায় সরকারের দেয়া জমিতে জুম্ম বৌদ্ধ সম্প্রদায় যে মন্দিরটি নির্মাণ করেন তাও তিনি বেদখল করেন। এক সময় ওই মন্দিরে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে বের করে দেয়ার চেষ্টা চালান। অথচ তার রুমের পাশের পুরো একটা রুমে এক ছাত্রীকে থাকতে দিতেন, যা নিয়ে নানা গুঞ্জন ও চাপা ক্ষোভ ছিল।
এছাড়াও প্রজ্ঞানন্দের বিরুদ্ধে বহু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো বলে শেষ করা যাবে না। এসব দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও অভিক্ষুসুলভ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে খোদ তার আপন ভ্রাতৃষ্পুত্র বিমল চাকমা সমালোচনায় সোচ্চার হলে তাকে মীরপুর বিহারের কলেজ শিক পদ থেকে প্রজ্ঞানন্দ অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছেন। দায়ক-দায়িকাদের দান-দক্ষিণা ও নানা সংস্থার সাহায্য আত্মসাৎকারী প্রজ্ঞানন্দ রঙ বস্ত্রকে আত্মরক্ষার বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে এসেছেন। বৌদ্ধভিক্ষুর বিনয় আচারের লেশমাত্রও তিনি অনুসরণ করেন না। দায়ক-দায়িকারা তাকে আর ভিক্ষু হিসেবে মানতে রাজী নয়। এজন্য বিহারাধ্যক্ষ থেকে তাকে সরানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চলছে। পদ রক্ষার্থে প্রজ্ঞানন্দ হীন ঘৃণ্য পথ বেছে নিয়েছেন। তার ভূমিকা এখন রীতিমত সন্ত্রাসী গডফাদারের মত। তিনি মীরপুরের প্রভাবশালী আওয়ামী নেতাসহ রাঙ্গামাটির আঞ্চলিক পরিষদের সন্তু লারমার সাথে গোপন আঁতাত করেন। তাদেরকে মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে থাকেন। ক‘দিন আগে মীরপুর বিহারে কমিটি গঠন নিয়ে অনুষ্ঠিত মিটিঙে কমিটির সাধারণ সম্পাদক জ্ঞান বিকাশ চাকমা (মিতুগুলো)-কে ভাড়াটে গুণ্ডা দিয়ে লাঞ্ছিত করতে চাইলে পুলিশ দীপায়ন খীসা নামের এক ভাড়াটে গুণ্ডাকে ধরে নেয়। এতে গর্তের সাপ বেরিয়ে আসে। দীপায়নকে ছাড়াতে সন্তু লারমা বহুজনের নিকট ধর্ণা দেন। তার পীড়াপীড়িতে জ্ঞান বিকাশ চাকমা সমঝোতা করতে সম্মত হন। মুচলেকা দিয়ে দীপায়ন ছাড়া পায়। ইতিপূর্বে ঢাকাস্থ জুম্মদের পিকনিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে হাঙ্গামা সৃষ্টিসহ বহু অপকর্মের জন্য দীপায়নের নামে থানায় মামলা রয়েছে। তাকে ছাড়ানোর জন্য সন্তু লারমাসহ অপরাধী চক্রের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে বলে অভিজ্ঞমহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন।