পাহাড়ি জনগণের ওপর এখনো অন্যায়-অবিচার চলছে-সিএইচটি কমিশন

0

সিএইচটিনিউজ.কম
chtcommissionpressconferenceখাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন(সিএইচটি কমিশন) এর প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বলেছেন, বাবুছড়াসহ আশপাশ এলাকা পরিদর্শনের পর আমাদের মনে হয়েছে পাহাড়ি জনগণ এখনো হুমকির মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের ওপর অন্যায়-অবিচার চলছে। বাবুছড়া বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের কারণে যে ২১টি পরিবার উচ্ছেদের শিকার হয়েছে তারা খুব কষ্টে আছে। মামলায় আটক পাহাড়ি শিশু ও নারীরা জামিন পাচ্ছেন না। এখনো বহু ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী পরিবার জমিজমা ফেরত পায়নি। তারা সরকার ও প্রশাসনকে এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দেয়ার দাবী জানান। তারা পাহাড়ি জনগোষ্ঠির নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণ বসবাস এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। তাদের সফরকে কেন্দ্র করে আহুত অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসুচি আহ্বানকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তারা।

তিন তিনের সফর শেষে খাগড়াছড়ি স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে এক প্র্রেস ব্র্রিফিংয়ে সিএইচটি কমিশনের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

শুক্রবার সকাল ১১টায় খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিন দিনের সফরের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরেন কমিশনের কো-চেয়ার সুলতানা কামাল। এছাড়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন কমিশনের সদস্য খুশী কবীর, স্বপন আদনান, ড. ইখতেখারুজ্জামান।

সুলতানা কামাল বলেন, বাবুছড়ার সমস্যা বিরাজিত এলাকাগুলো আমরা ঘুরে দেখেছি।  বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া ২১টি পরিবারের সাথে কথা বলেছি ।  তাদের উপর  অন্যায়-অবিচার  চলছে। ভারতে আশ্রয় নিয়ে ফিরে আসা পাহাড়ি শরনার্থী পরিবারগুলোকে সরকারের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী পূর্নবাসন করা হয়নি । পাহাড়ের মানুষ এখনো নানা আশঙ্কার মধ্যে বসবাস করছেন । বিজিবি’র স্থাপনা গড়ে উঠছে পাহাড়িদের জমি বসতভিটায়। বাবুছড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ২১টি পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ায় তাদের মধ্যে গ্রেফতার আতংক বিরাজ করছে । ১৬ বছরের একটি পাহাড়ি শিশু এসএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হতে পারছে না । তাকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে, জামিন দেয়া হচ্ছেনা । জামিন পাওয়ার অধিকার সকলের রয়েছে ।

তিনি আরো বলেন, অস্ত্র দিয়ে একাধিক নিরীহ জনসাধারণকে আটক করে রাখা হয়েছে। সভ্য সমাজে এটি হতে পারে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়িরা রাতে প্রাকৃতিক কাজে পর্যন্ত ঘর থেকে বের হলে নিরাপত্তা বাহিনীর জবাবদিহিতায় পড়তে হচ্ছে । তিনি বলেন, নিরাপওা বাহিনীর নিজস্ব জীবন দর্শন থাকে। এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা ঠিক হবেনা শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে পাহাড়িদের অধিকার খর্ব হয়। পাহাড়ি বসতিদের জমি-বসতভিটায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। তারা স্বাভাবিক চলাচল করতে পারছেনা। তাদের মৌলিক নাগরিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে । এসব সমস্যা নিরসনে তিনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সিএইচটি কমিশন বিদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আমরা যখন নারী অধিকার, দারিদ্রতা নিয়ে কাজ করি তখনো আমাদেরকে বিদেশী এজেন্ট বলা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কেন শুধু বিদেশী এজেন্ট হবো। তিনি বলেন, কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন বা কারো বিরুদ্ধে কাজ করতে নয়,পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে কমিশন সফরে এসেছে।

খুশি কবির বলেন, পার্বত্য চট্রগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশনের আগমনে সমঅধিকার ও পার্বত্য বাংগালী ছাত্র পরিষদ অবরোধসহ নানা কর্মসূচি দিলেও কমিশনের কাজে কোন বাঁধা হয়নি। কর্মসূচি দেয়ার অধিকার সকলের আছে । কিন্তু তারা নিজেরা সম-অধিকার নিয়ে কথা বলেন আবার অন্যদের অধিকার ভঙ্গ করেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অন্য নাগরিকের অধিকার ক্ষুন্ন করা ঠিক নয়। যাদের বিরুদ্ধে প্রোগ্রাম দেয়া হয়েছে তারা কি চান সেটা না বুঝে একটি কর্মসূচী দিয়ে মানবাধিকার খর্ব করা হচ্ছে ।

উল্লেখ্য যে, বাবুছড়ায় বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের কারনে উদ্ভুত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বশেষ অবস্থা জানতে সিএইচটি কমিশনের প্রতিনিধি দলটি বুধবার পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর শুরু করে। ২-৪ জুলাই খাগড়াছড়ি অবস্থান করে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও বিভিন্ন সংগঠনের সাথে মতবিনিময় শেষে আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম হয়ে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে খাগড়াছড়ি ত্যাগ করেন তারা।
———–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More