পিসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতা বিনয়ন ও অনিল চাকমার মুক্তিলাভ
‘গ্রেফতার নির্যাতন করে আন্দোলন দমন করা যাবে না’ বলে দুই নেতার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত :
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’র কেন্দ্রীয় সহ:সভাপতি বিনয়ন চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক অনিল চাকমা ১৮ দিন জেলে অন্তরীণ থাকার পর গতকাল ২১ নভেম্বর (সোমবার) বিকাল ৫ টায় খাগড়াছড়ি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
গত ২ নভেম্বর স্বনির্ভরস্থ ইউপিডিএফ দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন চলাকালে সেনা গোয়েন্দারা উপস্থিত সংবাদদাতাদের মাঝ থেকে তাদের ধরে নিয়ে যায়। ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায় এবং পরে সেনা সদস্যরা তাদের পুলিশের নিকট সৌপর্দ করলেও মোবাইল ফোন নিজেরা রেখে দেয় (যা এখনও ফেরত পায় নি)। সরকারি কাজে বাধাদান ও পুলিশের ওপর হামলা সংক্রান্ত একটি কাল্পনিক অভিযোগে পুলিশ তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে জেলে পাঠায়। যা আসলে ‘অপারেশন উত্তরণ’ প্রজেক্টের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে জঙ্গী সম্পৃক্ত পাকিস্তানপন্থী একশ্রেণীর কায়েমী স্বার্থবাদী সেনা কর্মকর্তাদের অভিনীত একটি মেগা সিরিয়াল নাটক, যা বম্বে ফিল্মের ক্রাইম জগৎকে টেক্কা দিয়ে চলেছে! তা দেখতে দেখতে পার্বত্যবাসী ক্লান্ত, বীতশ্রদ্ধ ও ভীষণ ক্ষুব্ধ। স্বাভাবিকভাবে তার বিরুদ্ধে এখন প্রতিবাদী চেতনাসম্পন্ন ছাত্র-যুব-জনতা জেগে উঠছে।
আদালতে গ্রেফতারকৃত পিসিপি নেতৃদ্বয়কে হাজির করা হলে প্রমাণিত হয় যে, পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলেও ঘটনার সময় বিনয়ন চাকমা ও অনিল চাকমা কেউ খাগড়াছড়িতে ছিলেন না। অথচ বিনা দোষে এবং বিনা গ্রেফতারি পরোয়ানায় তাদেরকে ১৮ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। দেশে প্রকৃত আইনের শাসন থাকলে বিনাদোষে এভাবে নির্যাতন ও কারারুদ্ধ করার দায়ে সেনা কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত হয়ে সাজা পেতো হতো এবং রাষ্ট্র অন্যায়ভাবে তাদের আটক করার অপরাধে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হতো। কিন্তু দেশে এখন যারা ক্ষমতাসীন তাদের কাছ থেকে এ ধরনের উচ্চ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আশা করা যায় না।
এখানে উল্লেখ্য যে, গত ২ নভেম্বর (বুধবার) পিসিপি’র সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমার মুক্তির দাবিতে খাগড়াছড়ি সদরে স্বনির্ভর বাজারে অবস্থিত ইউপিডিএফ কার্যালয়ে পিসিপি এক সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পিসিপি’র সহ:সভাপতি বিনয়ন চাকমা। তার বক্তব্য শেষ হতে না হতে উপস্থিত সংবাদদাতাদের মাঝ থেকে ২ জন সাদা পোষাকধারী সেনা গোয়েন্দা সংস্থার লোক বিনয়ন চাকমা ও অনিল চাকমা কলার চেপে ধরে (এ ধরনের অশোভন আচরণে উপস্থিত অনেক সংবাদদাতাও উষ্মা প্রকাশ করেন) টেনে হেঁচড়ে অপেক্ষমান সেনা পিক-আপে উঠিয়ে সরাসরি খাগড়াছড়ি ক্যান্টমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁদের শারীরিকভাবে নির্যাতন আর জিজ্ঞাসাবাদের নামে আজগুবি প্রশ্ন করে। জেলে থাকাকালে তা পিসিপি’র আটক নেতা-কর্মীদের যথেষ্ট হাসির খোরাক যোগান দেয় এবং সেনা গোয়েন্দাদের প্রশ্ন ও জ্ঞানের বহর দেখে পিসিপি নেতা-কর্মীরা বেশ হাসি ঠাট্টাও করেন। জেল-জুুলুম মামলা-হুলিয়া দিয়ে পিসিপি নেতা-কর্মীদের ভয় পাইয়ে দেয়া যাবে না বলে বিনয়ন চাকমা ও অনিল চাকমা সিএইচটি নিউজ ডটকমের প্রতিনিধির কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে আরো বলেছেন পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন গ্রেফতার নির্যাতন করে দমন করা যাবে না।
এছাড়া এর আগে গত ২০ নভেম্বর পানছড়ি থেকে অন্যায়ভাবে আটক পিসিপি’র নেতা-কর্মীরাও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তিপ্রাপ্ত ছাত্র নেতারা হলেন, পিসিপি’র পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি হিমেল চাকমা, সহ:সভাপতি সমীরণ চাকমা, দপ্তর সম্পাদক সাধান চাকমা, সদস্য সোহেল চাকমা, সদস্য কল্যাণ জ্যোতি চাকমা, সদস্য সুপ্রিয় চাকমা, সদস্য বিটন চাকমা ও খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী রমেশ চাকমা।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।