পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ৩য় বর্ধিতসভা অনুষ্ঠিত

0

খাগড়াছড়ি : নিজেদের লক্ষ্য স্থির রেখে সকল ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে কর্মী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।

গতকাল বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)  খাগড়াছড়ি জেলা সদরে অনুষ্ঠিত জেলা শাখার ৩য় বর্ধিত সভায় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা এ আহ্বান জানান।

বর্ধিত সভাটি সকাল ১১ টায় শুরু হয়ে দিনব্যাপী চলে।  পিসিপি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সভায় খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সারাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও সংগঠনের নানা কার্যক্রম বিষয়ে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা আলোচনা ও পর্যালোচনা করেন।

আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নানান অনৈতিক কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। তাদের কর্তৃক হামলা, চাঁদাবাজি, হত্যা, নারী ধর্ষণ-নির্যাতন প্রভৃতি ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। তাদের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকার-প্রশাসন যথোপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয়ায় দিন দিন এসব ঘটনা ব্যাপকহারে বেড়ে যাচ্ছে। এসবের পাশাপাশি দুর্নীতি চলছে অবলীলায়। ক্ষমতাসীন দলসহ প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিরাও  দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়ছে।

কয়েক মাস আগে খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের  দুর্নীতিবাজদের সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দেয়া এবং  দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদস্থ দুই কর্মকর্তা গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা থেকে এটা বুঝতে বাকী থাকেনা যে দুর্নীতি কত বিস্তৃত পর্যায়ে চলে গেছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থী ও বাম ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই কায়দায় হামলা হয়েছে। এসব হামলার মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের ফ্যাসীবাদী উগ্রতা আবারো প্রকাশিত হয়েছে।

বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি বিষয়ে বলেন, অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা-সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। বর্তমানে তা আরো ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেনা-প্রশাসন দুর্বৃত্তদের দিয়ে নব্য মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছে। সেনাসৃষ্ট এই বাহিনী ইতিমধ্যে ইউপিডিএফ অন্যতম সংগঠক ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মিঠুন চাকমাসহ ৫ জনকে হত্যা করেছে। খুনিরা প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ঘুরা-ফেরা করা সত্ত্বেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

এছাড়াও প্রতিনিয়ত চলছে সেনা টহল-তল্লাশী। রাতে-বিরাতে পাাহাড়িদের গ্রামে গ্রামে ঢুকে সন্ত্রাসী খোঁজার নামে পাহাড়িদের ঘর-বাড়িতে তল্লাশি করে জনগণকে হয়রানি-নির্যাতন করে চলেছে। এই নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় সেনা কর্তৃক ধর্ষণেরও ঘটনা ঘটেছে। গত ২১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে রাঙ্গামাটি জেলা বিলাইছড়ি এলাকায় সেনারা হানা দিয়ে ঘর তল্লাশির নামে মা-বাবাকে বাইরে এনে বন্দুক তাক করে ঘরে অবস্থানরত দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে সেনা-প্রশাসন পাহাড়িদের মধ্যকার কুলাঙ্গার বিলাইছড়ি আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমাকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেনা-প্রশাসন চরম নগ্নভাবে হাসপাতালে চাকমা রানী য়েন য়েনসহ ভলান্টিয়ারদের  হামলা-মারধর করে নির্যাতিত দু’বোনকে ছিনিয়ে নিয়েছে। এ নিষ্কৃষ্ট ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিবাদ-নিন্দার জড় উঠেছে।

খাগড়াছড়িতে ব্যাপক ধরপাকড়-নির্যাতন চলছে-এমন অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, খাগড়াছড়িতে সেনা-প্রশাসন ব্যাপক ধরপাকড় করে চলেছে। গুইমারা বাইল্যাছড়িতে পিসিপি মাটিরাঙ্গা উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রেহেনা চাকমাসহ আরো ৪ জনকে রাতের আঁধারে বাড়িতে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে তুলে নিয়ে মিথ্যা মামলা জড়িয়ে কারাগারে প্রেরণের ঘটনা ঘটেছে (বর্তমানে জামিনে রয়েছেন)। ’১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে শান্তিপূর্ণ মিছিল শেষে ফেরার পথে সেনা-প্রশাসনের যৌথ হামলা ও রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হতে হয়েছে পিসিপি কর্মী স্বপন লারমা, রমেশ ত্রিপুরাসহ আরো অনেককে। এছাড়া উক্ত হামলার সময় পিসিপি জেলা নেতা সুমন্ত চাকমা ও পিসিপি কর্মী ধনীময় ত্রিপুরাকে আটক করা হয়। বর্তমানের তারা কারাগারে রয়েছে।

পাহাড়িদের অস্তিত্ব ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সরকার প্রশাসন পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের অধিকারের লক্ষ্যে আন্দোলনরত জনগণ ও ইউপিডিএফসহ তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপর দমন-পীড়ন-নির্যাতন-ধরপাকড়-হত্যা করে আন্দোলন ধ্বংস করার জন্য সুগভীর পরিকল্পনা-ষড়যন্ত্র করে চলেছে। সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বদা সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বক্তারা।

বক্তারা বলেন, সরকার-সেনা-প্রশাসন ও জনগণের শত্রু দালাল-প্রতিক্রিয়শীল-বেঈমান-বিশ্বাসঘাতকদের সকল ধরনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে সকল ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। ছাত্র সমাজ ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের মুক্তির সনদ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের লক্ষে সংগঠনকে শক্তিশালী করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

বর্ধিত সভা থেকে আটক সকল নেতা-কর্মীকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়।
—————–
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্রউল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More