পিসিপি’র খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শাখার ৫ম কাউন্সিল সম্পন্ন
খাগড়াছড়ি : “সরকার ও দালাল-সুবিধাবাদীদের মিলিত ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে ঐক্যবদ্ধ হোন, সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আদর্শিকভাবে সংগঠনকে শক্তিশালী করুন” এই শ্লোগানে আজ শনিবার (১৪ অক্টোবর ২০১৭) বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শাখার ৫ম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০ টায় কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। কাউন্সিল শুরুতে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রাম করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন সেইসব বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া গনতান্ত্রিক যুব ফোরামে, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা-উপজেলা-কলেজ-ইউপি কমিটির নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।
কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ডেবিট চাকমা’র সঞ্চালনায় আহ্বায়ক সোহেল চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তেতুশা ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রেশমী মারমা, পিসিপি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানিত সভাপতি বিনয়ন চাকমা, ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর সংগঠক মিঠুন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কৃষ্ণচরণ ত্রিপুরা প্রমূখ।
কাউন্সিল অধিবেশনেকৃষ্ণচরণ ত্রিপুরা বলেন, তথাকথিত পিসিপি নামধারী বিভ্রান্তী সৃষ্টিকারী প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্রসমাজের একটি অংশকে নেশাদ্রব্য সেবন, আমোদ-প্রমোদ সহ ভোগবিলাসে মত্ত রেখেছে। জাতীয় ছাত্রসংগঠনগুলোর মত তারাও লেজুরবৃত্তি করছে। এই সুবিধাবাদী ধারাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
অতিথি বক্তব্যে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মিঠুন চাকমা বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে জেএসএস এর সাথে চুক্তি করার জন্য সরকার তৎপর হয়েছিল। সেসময় আপোষনামা চুক্তি সম্পর্কে ছাত্রসমাজ জানতে পেরেছিল। ৯০ দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকা সত্তেও সেনা-পুলিশের চোখ রাঙানি, দুই নাম্বারীদের বাধার মুখে, খুন-ঘুম হওয়ার মুখে আমরা প্রকাশ্য সমাবেশ কাউন্সিল করেছি। অবরূদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে সংগ্রামী চেতনা লালন করতে হবে। বড় বড় বুলি আওড়াতে আমরা সংগ্রামে আসিনাই। আদর্শিক শক্তি না থাকলে অধিকার অর্জন সম্ভব নয়। জেএসএস তার আদর্শিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। প্রশাসনের উদ্দেশ্যে দেয়া ঊষাতন তালুকদারের দুর্বল বক্তব্যে তা প্রতীয়মান হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সরকারের রাস্ট্রনীতি ঠিক নেই। দেশের ৩ টি শাসন বিভাগ পেশিতন্ত্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী একজন সুস্থ মানুষকে অসুস্থ বানিয়েছেন। প্রতিবারই জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বিষয়ে তদন্ত কমিটির সাথে বোঝাপোড়া হয়ে থাকে। পুলিশ-আর্মির চোখ রাঙানি খেয়ে, জেলে গিয়ে হলেও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম বেগবান করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
পুরাতন কমিটির বিলুপ্তি, নতুন কমিটি ঘোষণাসহ শপথবাক্য পাঠ করান পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা। সর্বসম্মতিক্রমে সোহেল চাকমাকে সভাপতি, ডেবিট চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
দ্বিতীয় অধিবেশনে নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন বিনয়ন চাকমা। এতে সঞ্চালনা ও সভাপতিত্ত্ব করেন যথাক্রমে ডেবিট চাকমা ও সোহেল চাকমা। এসময় নবগঠিত কমিটির সভাপতি পূর্ণস্বায়শাসনের সংগ্রাম সফল করতে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিনয়ন চাকমা বলেন, রাতে বিরাতে পাহাড়ি বাড়িঘরে তল্লাশি চালিয়ে বিনা অপরাধে আটক-হয়রানির মাধ্যমে নাগরিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। উগ্র শাসকগোষ্ঠী সংবিধানে বাঙালি জাতি ভিন্ন অন্য জাতিসত্তাদের অস্বীকার করেছে। তারা প্রকৃত গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ভূলে গেছে। বাংলাদেশ এখন ফ্যসিবাদী শাসনে পরিণত হয়েছে। ফ্যাসিবাদ গণতন্ত্র ও মানুষের ন্যায্য অধিকার স্বীকার করে না। ফ্যাসিবাদের সকল বৈশিস্ট্য বর্তমান সরকারের মধ্যে রয়েছে। তিনি পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রাম বেগবান করা নেতা-কর্মী ও ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান জানান
কাউন্সিল শেষে একটি শুভেচ্ছা মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি স্বনির্ভর এলাকা থেকে শুরু হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার প্রদক্ষিণ করে উপজেলা হয়ে ঘুরে পানছড়ি স্টেশনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা, সাধারণ সম্পাদক ডেবিট চাকমা ও পিসিপি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা।
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।