পিসিপি নেতা বিপুল চাকমা’র মুক্তির দাবিতে ঢাবিতে প্রগতিশীল দুই ছাত্র জোটের বিক্ষোভ

0

wp_20161024_017

ঢাকা : বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সামাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের যৌথ উদ্যোগে আজ ২৪ অক্টোবর সোমবার দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সমাবেশ শুরুর আগে মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি কলা ভবন,একাডেমিক ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার প্রদক্ষিণ শেষে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি পারভেজ লেলিন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর যুগ্ন আহ্বায়ক ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবির, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াল ত্রিপুরা, ছাত্র গনমঞ্চের সভাপতি সায়িদ বিলাস।
এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিলানী শুভ, ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি নাইমা খালিদ মনিকা, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি পারভেজ লেনিন বলেন, মনে হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম কাশ্মীরের মতো অধিগৃহীত অঞ্চল। বাংলাদেশের জনগণ জাতিগত নিপীড়ণের হাত থেকে একটি দীর্ঘ সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে। সমগ্র জাতিসমূহের জন্য একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা নিয়ে এ রাষ্ট্র জম্ম লাভ করেছিলো। কিন্তু এর বিপরীতে আমরা দেখেছি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী শাসকশ্রেনী (যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে) পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের উপরে এই জতিগত নিপীড়ন উত্তোরত্তর বৃদ্ধি করেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সারাদেশ থেকে গরিব বাঙালিদের নিয়ে গিয়ে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৮০’র দশক থেকে জিয়াউর রহমান যে সেটলার পুণর্বাসন শুরু করেছিলেন সেই প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। এই গরিব বাঙালিদেরকে উস্কানি দিয়ে সেখানকার আর্মি প্রশাসন পাহাড়ি বাঙালি কৃত্রিম দ্বন্দ্ব জারি রেখেছে। এই জতিল পরিস্থিতি মাথায় রেখেই কমরেড বিপুল চাকমার গ্রেফতারের ঘটনাকে বিবেচনা করতে হবে।

তিনি ছাত্র নেতা বিপুল চাকমা’র নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানান। এবং একইসাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অঘোষিত সেনা শাসন রয়েছে, সেখানে মানুষের যে গণতান্ত্রিক অধিকার রুদ্ধ করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

wp_20161024_062

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ইকবাল কবির বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৫ বছর হলো। এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। সেখানে সেনাবাহিনীকে দিয়ে জমি দখল ও জাতিসত্তা জনগণের উপর নির্যাতন জারি রাখা হয়েছে।

এসময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আসলে কি তিনি (বিপুল চাকমা’র মা) মৃত্যু বরণ করেছেন? না, তিনি মৃত্যু বরণ করেন নি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। একজন মা’কে হত্যা করা হয়েছে। যে মায়ের সন্তান পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিসত্তাসহ সারাদেশে বসবাসরত সকল জাতি-গোষ্ঠীর স্বীকৃতি চায়, যে মায়ের সন্তান দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে চায়, যে মায়ের সন্তান দেশের শিক্ষা রক্ষার আন্দোলন করে, মৌলিক অধিকারের আন্দোলন করে, শিক্ষার বানিজ্যিকিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সেই মা’কে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এক বিপুল চাকমাকে গ্রেফতার করলে আন্দোলন থেমে থাকবে না। এক বিপুল চাকমা ও এক দিলীপ রায়কে কারাগারে আটক করে রেখে আন্দোলন দমন করা যাবে না। তিনি অবিলম্বে বিপুল চাকমা ও দিলীপ রায়কে নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানান।

সাঈদ বিলাস সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কি যুদ্ধাবস্থা চলছে? এর প্রশ্নের উত্তর সরকারকে দিতে হবে। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকশ্রেনী পূর্বপাকিস্তানের জনগণের সাথে যে ব্যবহার করেছে বর্তমান বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীও পার্বত্য চট্ট্রগামের জনগণের সাথে একই ব্যবহার করছে।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, বন্দুকের নল, লাঠির জোর কিংবা উন্নয়নের বিজ্ঞাপন দিয়ে বেশীদিন ক্ষমতায় ঠিকে যাবে না। এরশাদও এভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু পারে নি। তাঁকে জনগণ টেনে নামিয়েছিল।

img20161024130359

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন বলেন, বিপুল চাকমাসহ আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসাথে আন্দোলন করে আসছি। গত তাকে গ্রেফতার পানছড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ’৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের অনেক নির্যাতনের কাহিনী শুনি, বিপুল চাকমাকে এই গ্রেফতার এবং এরপর তাঁর মায়ের করুণ মৃত্যুর ঘটনা পাকিস্তানি হানাদারদেরও হার মানিয়েছে। এ মৃত্যুর জন্য তিনিও সরাসরি সরকার ও প্রশাসনকে দায়ী করেছেন এবং এটি একটি হত্যাকাণ্ড বলেও উল্লেখ করেছেন।

বক্তারা অবিলম্বে বিপুল চাকমাকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান।
———————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More