পিসিপি ফটিকছড়ি উপজেলা শাখার ৪র্থ কাউন্সিল সম্পন্ন
ফটিকছড়ি : “পূর্ণস্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামে একমাত্র সমস্যা সমাধান, জাতির ক্রান্তি লগ্নে অতন্ত্র প্রহরী বেশে আগুয়ান হও ছাত্র সমাজ” এই আহ্বানে আজ শুক্রবার (১১ আগস্ট ২০১৭) ফটিকছড়ি উপজেলা সদরে হল রুমে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ফটিকছড়ি উপজেলা শাখার ৪র্থ কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।
কাউন্সিল অধিবেশনে সুমন্ত চাকমার সঞ্চালনায় ও বিদায়ী কমিটি’র সভাপতি ক্যাচিং মং মারমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুনয়ন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সদস্য রেশমি মারমা, পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জিকু চাকমা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক অর্পন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কেমরন দেওয়ান প্রমূখ।
কাউন্সিল অধিবেশনে পর্যবেক্ষক হিসেবে খাগড়াছড়ি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা, কলেজ শাখার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অধিবেশন শুরুতে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে আত্মবলিদানকারী সকল শহীদদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িযে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
কাউন্সিল অধিবেশনের বক্তারা বলেন, প্রাকৃতিক বৈরি পরিবেশ ও প্রতিকূল পরিস্থির মধ্যে আজ ফটিকছড়ি উপজেলা কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পিসিপি’র অনেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে লড়াই সংগ্রামের অনেক সহযোদ্ধাকে হারিয়েছে। সরকার, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে, শত বাধা ডিঙ্গিয়ে পিসিপি তার গৌরবাজ্জ্বল পতাকাকে উড্ডীন রেখেছে। পিসিপি কেবল শিক্ষা সংক্রান্ত দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে না, নিপীড়িত ও অধিকার বঞ্চিত জাতি ও জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজপথে নেমে আন্দোলন করে যাচ্ছে।
বক্তরা বলেন, উন্নত মতাদর্শ ও নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে শাসকগোষ্ঠীর শত বাধা চুর্ণ করে ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তার সহিত সকল প্রতিকূল পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে আগামী দিনের দেশ, জাতি ও সমাজ পরিবর্তনে কান্ডারী হয়ে ছাত্রদেরকে দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে।
বক্তারা প্রযু্ক্তি ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বর্তমান অধিকাংশ ছাত্র মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় ইন্টারনেট ব্যবহারে সহজলভ্যতার কারণে অধিকাংশ ছাত্র ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে এবং দিনের বহু সময় অনলাইনে সময় ব্যয় করে। এতে করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে। এছাড়াও বহু ছাত্র সর্বনাশা মাদকে জড়িযে পড়ছে।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল ও নারী নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বলেন, পাহাড়ি জনগণ এখন নিজ ভূমিতে পরবাসী। বাংলাদেশ রাষ্ট্র জম্ম থেকে অদ্যাবধি যারাই ক্ষমতায় এসেছে প্রত্যেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়ন চালিয়েছে এবং এখনো চালানো হচ্ছে। অঘোষিত সেনা শাসন আজো জারি রয়েছে। বে-আইনি বসতিস্থপনকরী সেটলারদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় পাহাড়িদের জমি বেদখল অব্যাহত রয়েছে। সামরিক বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন, পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণসহ বিভিন্নভাবেও ভূমি বেদখল করা হচ্ছে। নারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা আশঙ্কজনকহারে বেড়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার পাহাড়িদেরকে নানানভাবে বিভক্ত করে শাসন শোষণ চালাচ্ছে। আন্তঃজাতি দ্বন্দ্ব সৃষ্টির মাধ্যমে বিভেদ ও অনৈক্যকে উস্কে দিয়ে সামাজিক ও জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করছে। বক্তারা এ ব্যাপারে সতর্ক থেকে জাতীয় ঐক্য সংহতিকে সুদৃঢ় করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ে একেকজন উন্নত আদর্শের সৈনিক হয়ে কাজ করে যাওয়ার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
এরপর সম্মেলনে আগত সকল প্রতিনিধিদের অধিবেশনের সর্বসম্মতিক্রমে মিন্টু চাকমাকে সভাপতি, উচাইরি মারমাকে সাধারণ সম্পাদক ও রুপান্তর চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে সাধারণ সদস্য সহ ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
নতুন কমিটিকে শপথনামা পাঠ করান পিসিপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুনয়ন চাকমা।
—————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।