পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের বিকল্প নেই
।। পারদর্শী ।।
পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের কোন বিকল্প নেই। ১৮ বছর ধরে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে দিন দিন নিপীড়ন-নির্যাতন, ভূমি বেদখল ও নারী ধর্ষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই যৌক্তিকতাকে আরো বেশি জোরালো করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
পার্বত্য চুক্তি একটি দুর্বল চুক্তি। এ চুক্তিকে সন্তু লারমা ও শাসক চক্রের একটি অংশের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি বলাই যুক্তিসঙ্গত। ফলে এ চুক্তি সমগ্র জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তবে সরকার তথা শাসকগোষ্ঠির জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কারণ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিরোধ শক্তিকে ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে। যার কারণে এটি এখন জনগণের স্বার্থের বিপরীতে সরকার ও তার দালালদের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই চুক্তিকে মূল খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে সরকার তথা শাসকচক্র উন্নয়নের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি উচ্ছেদের নীল-নক্সা নির্বিঘ্নে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
পার্বত্য চুক্তিটি এখন এমন অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যে, সন্তু লারমা নিজেও তাঁর স্বাক্ষর করা চুক্তির উপর ভরসা রাখতে পারছে না। সেজন্য তিনি চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই নানা গোঁজামিল কথাবার্তা বলে আসছেন। কখনো বলছেন কাগুজে চুক্তি, কখনো বলছেন সরকার প্রতারণা করেছে, কখনো বলছেন অস্ত্র কাড়তেই সরকার চুক্তি করেছে…. ইত্যাদি ইত্যাদি।
মুলতঃ পার্বত্য চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী সমাধানের কোন সুযোগ নেই। প্রথমত: চুক্তিতে অবমাননকার ‘উপজাতি’ শব্দটি মেনে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত: চুক্তির সাংবিধানিক কোন গ্যারান্টি নেই। তৃতীয়ত: পাহাড়িদের ভূমি অধিকারের বিষয়টি অস্পষ্ট। চতুর্থত: সেটলারদের প্রত্যাহারের কোন কথা লেখা নেই। পঞ্চমত: অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের কথা বলা হলেও, ৬টি স্থায়ী সেনানিবাস মেনে নেওয়া হয়েছে (অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার হলেও ওইসব ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা সকলে স্থায়ী সেনানিবাসগুলোতে অবস্থান করবে)। ষষ্ঠত: সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিডিআর(বর্তমানে বিজিবি) নিয়োজিত থাকার স্বীকার করা হয়েছে (যারা বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে জুম্মদের জায়গা-জমি বেদখল করে ব্যাটালিয়ন স্থাপনে তৎপর রয়েছে)। সপ্তমত: জেলা পরিষদ আইনকে ঘষেমজে তার উপর নির্ভরশীল করে চুক্তিটিকে অত্যধিক দুর্বল করা হয়েছে (যে পরিষদে জনগণের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই, ক্ষমতাসীনরাই এ পরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে) …।
কাজেই, পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন (অর্থ, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও ভারী শিল্প ব্যতিত সরকারের সকল প্রশাসন ব্যবস্থা পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত স্থানীয় সংস্থার নিকট হস্তান্তর করা) ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি ও অস্তিত্ব রক্ষা তথা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পূর্বশর্ত হচ্ছে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত]
—————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।