ইউপিডিএফ নেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমাসহ নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে

প্রধানমন্ত্রী বরাবরে খাগড়াছড়ির সামাজিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিগণের স্মারকলিপি প্রদান

0

dc-memo-photo-2খাগড়াছড়ি : ইউপিডিএফ নেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমাসহ গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে খাগড়াছড়ি জেলার সামাজিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিগণ আজ  সোমবার (২৮ নভেম্বর, ২০১৬) জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে গণস্বাক্ষর সম্বলিত এক স্মারকলিপি প্রদান করেছে। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি রণিক ত্রিপুরা, পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমাসহ একদল প্রতিনিধি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে ২১৮৪ জনের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি প্রদান করেন। এরপর নেতৃবৃন্দ শহরের একটি কনভেনশন সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান প্রকৃত সত্য ঘটনা আড়াল করে অসত্য, কাল্পনিক, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে সুকৌশলে পার্বত্য সমস্যা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

স্মারকলিপিতে ইউপিডিএফ নেতা এবং এলাকার পরিচিত ব্যক্তিত্ব উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমাকে গ্রেপ্তার করার সময় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়াবাড়ি নিয়ে এলাকার ব্যাপক জনগণসহ সুশীল সমাজ যথেষ্ট বিব্রত, ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হয়েছে বলে বক্তব্য প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা গত ১৩ নভেম্বর খাগড়াছড়ির পেরাছড়ায় শিক্ষা সংক্রান্ত সচেতনতামূলক সভায় অংশগ্রহণ করার সময় সেনাবাহিনী কর্তৃক তার ৫ সহকর্মীসহ বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার হন।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা গত ২৩ অক্টোবর পানছড়ি থেকে তার ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার সময় তার মায়ের সামনে থেকে তাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে অশ্রাব্য গালিগালাজ করে গ্রেপ্তার এবং ছেলের এই পরিণতি দেখে সইতে না পেরে তারপর দিন তার মায়ের মৃত্যুবরণ করা এবং দাগি খুনী আসামীর মত ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার ঘটনাকে অসভ্য বর্বর সমাজকেও হার মানায় বলে স্মারকলিপিতে সমালোচনা করা হয়।

সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষ এসকল ঘটনায় আহত ও ব্যথিত হয়েছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের নিকট সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াসহ অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে বলে স্মারকলিপিতে বলা হয়। এতে বলা হয়, সরকার আসে এবং সরকার যায়, যুগযুগ ধরে  জনগণ এইসব বাস্তব নাটক দেখে যাচ্ছে অসহায় ও নির্লিপ্তভাবে। জনগণ নীরবে নিভৃতে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে যাচ্ছেন।

স্মারকলিপিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আপোষহীন নেত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করে বলা হয়, প্রকৃত চিত্র ও অন্তর্নিহিত সমস্যা কৌশলে আড়াল করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বারবার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা বিষয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। সরকারের আন্তরিক চেষ্টা ও হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেও এজন্য সমস্যার প্রকৃত সমাধান করা এখনো সম্ভব হয়নি। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান জরুরী বলে স্মারকলিপিতে মত প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, জননেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমার উপর অমানবিক নির্যাতন, বিপুল চাকমার মায়ের মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে হাজারো মানুষের নিরব কান্না-আহাজারি, জনগণের হতাশা ও দীর্ঘশ্বাস দেশবাসী কারোর জন্যই মঙ্গলজনক, শুভ নয়। এতে আরো বলা হয়, আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নিইনা বলেই বার বার একই ভুল করতে থাকি আর বার বার তার পরিণতিও ভোগ করতে হয় করুণভাবে।  পূর্ববাংলার জনগণের প্রতি পাকিস্তানীদের বিমাতাসুলভ অমানবিক আচরণ, নির্যাতন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরাম্বিত করেছিল। সেই একই কায়দায় দমনপীড়ন নীতিতে পার্বত্য সমস্যা সমাধানের পুরোনো কৌশল সফলকাম হবে না। বরং এর পরিণতি সবার জন্য সুখকর নাও হতে পারে।

স্মারকলিপিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুঃসহ ও করুণ অবস্থার সুন্দর সমাধানের পথ বের করতে প্রধানমমন্ত্রীর প্রতি ৫ দফা দাবিনামা সম্বলিত  নিম্নোক্ত অনুরোধ জানানো হয়-
১.   দয়াকরে মানবিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত সমাধান করুন।
২.একপেশে রিপোর্টের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে নিরেপক্ষ ও বিশ্বস্ত প্রতিনিধিদলের মাধ্যমে সমস্যার কারণ ও তা চিহ্নিত করুন।৩.দমনপীড়নের নীতি পরিহার করে মানবিক দৃষ্টিকোণ ও স্নেহ মমতার ভিত্তিতে পার্বত্য সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিন এবং বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিন।
৪.ভুল নীতির কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে কোথায় যায় তার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করুন।
৫.জননেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা ও ছাত্রনেতা বিপুল চাকমার মত নীতিবান-সৎ নেতাকর্মীদের বিনাশর্তে মুক্তি দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতি করার পথ অবারিত করুন।
——————

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More