প্রশাসনের বাধার মুখে ইউপিডিএফ-এর ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম

১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকতে দেশবাসীকে সংগ্রামী অভিবাদন জানিয়ে আকাশে উড়ানো হয় বৃহৎ বেলুন। ছবিটি খাগড়াছড়ি থেকে তোলা।
১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকতে দেশবাসীকে সংগ্রামী অভিবাদন জানিয়ে আকাশে উড়ানো হয় বৃহৎ বেলুন। ছবিটি খাগড়াছড়ি থেকে তোলা।

নিজস্ব প্রতিবেদক (পার্বত্য চট্টগ্রাম) : প্রশাসনের বাধার মুখে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজ ২৬ ডিসেম্বর শনিবার খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল- দলীয় কার্যালয়সমূহে বিপ্লবী সংগীত বাজানো, দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, বিভিন্ন দৃষ্টিগ্রাহ্য স্থানে ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টার টাঙানো, দেয়াল লিখন ইত্যাদি। দেশবাসীকে সংগ্রামী অভিবাদন জানিয়ে উড়ানো হয়েছে বৃহৎ বেলুন। তবে প্রশাসনের বাধার কারণে খাগড়াছড়িতে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।

অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়
অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়

ব্যানার-ফেস্টুনে “অবিস্মরণীয় ২৬ ডিসেম্বর অমর হোক! জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে ইউপিডিএফ’র পতাকাতলে সমবেত হোন; আমাদের উচ্ছেদ ও পরিবেশ ধ্বংস করে মুনাফা লুটতে দেবন না; সাজেক-নীলগিরি-বগালেক-চিম্বুক থেকে সেনা চৌকি সরিয়ে নাও…” ইত্যাদি শ্লোগান লেখা ছিল।

খাগড়াছড়ি জেলা সদরে আসন্ন পৌর নির্বাচনের দোহাই দিয়ে প্রশাসন প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর অনুষ্ঠান পালনে অনুমতি দেয়নি। ফলে ছোট পরিসরে কর্মসূচি পালন করা হয়। সকাল ১০টায় স্বনির্ভরস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। এতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ইউপিডিএফ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ, শহীদ পরিবাবর্গ ও পার্টির কর্মী পরিবারবর্গ।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে বাধা দিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে ইউপিডিএফকে দেওয়া চিঠি
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে বাধা দিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে ইউপিডিএফকে দেওয়া চিঠি

পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে সমবেত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক রিকো চাকমা প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বড় ধরনের জমায়েত বা সমাবেশের আয়োজন করা হয় নি। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের ন্যুনতম আনুষ্ঠানিকতা পালনে প্রশাসন বাধা দিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে প্রশাসন একদিকে সংবিধান স্বীকৃত শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকারের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকারহারা মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি অসম্মান দেখিয়েছে, জনগণের আবেগ অনুভূতিতে আঘাত করেছে, তার পরিণতি শুভ হবে না। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে বাধা প্রদানের মাধ্যমে সরকারের ফ্যাসীবাদী রূপ আবারও খুলে পড়েছে। ইউপিডিএফের ওপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন নতুন নয় মন্তব্য করে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, দমন-পীড়ন চালিয়ে ইউপিডিএফকে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে  বিরত রাখা যাবে না। তিনি অবিলম্বে সভা-সমাবেশের ওপর থেকে বাধা-নিষেধ তুলে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।

সমাগত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান শেষে ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লাল রঙের একটি বড় বেলুন আকাশে উড়ানো হয়। এটি ছিল ইউপিডিএফ-এর পতাকার প্রতীক। বেলুনের সাথে জুড়ে দেওয়া ফেস্টুনের ক্যাপশন ছিল- “প্রতিষ্ঠার ১৭তম বার্ষিকীতে দেশবাসীকে সংগ্রামী অভিবাদন”। পতাকার প্রতিচ্ছবি হিসেবে বেলুনের গায়ে নীল জমিনের  ওপর সাদা তারকা স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও তাড়াহুড়োর কারণে তা করা যায় নি। উল্লেখ করা যেতে পারে, এ ধরনের বড় সাইজের বেলুন পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম বারের মত উড়ানো হয়েছে।

রাঙামাটির সাফছড়িতে টাঙানো ফেস্টুন
রাঙামাটির সাফছড়িতে টাঙানো ফেস্টুন

শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে আনুষ্ঠানিকতা পালনের সময় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়ন্দো সংস্থার লোকজনের হুমকিমূলক টহল ও কঠোর নজরদারি লক্ষ্য করে স্থানীয় লোকজন অনেক শঙ্কিত ছিল। উপস্থিত অনেকে নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের এ ধরনের হুমকিমূলক অবস্থানকে দখলদার পাক বাহিনীর কার্যকলাপের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। উৎসাহী ছাত্র-ছাত্রীরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে না পারায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছে। প্রতি বছর স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থী ও আশে-পাশের গ্রামের শিক্ষার্থী ও সাধারণ লোকজন অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে থাকে। এ বছর প্রশাসন বাধা দেয়ায় তা সম্ভব হয় নি।

প্রশাসনের বাধার কারণে বিকালে নারানখিয়াস্থ কালচারেল ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কর্মসূচিও স্থগিত করতে হয়েছে। এতে শিল্পীসহ সাধারণ লোকজন সরকার-প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

জেলা সদর ছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি, দীঘিনালা, মহালছড়ি, মাটিরাংগা, গুইমারা, মানিকছড়ি, রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায়ও ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টার টাঙানোসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মহালছড়িতে ২৪ মাইল এলাকায় লাগানো পোস্টারগুলো সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

রাঙামাটির কুদুকছড়িতে পোস্টারিং করা হয়
রাঙামাটির কুদুকছড়িতে পোস্টারিং করা হয়

অন্যদিকে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, সাজেক, কুদুকছড়ি, নান্যাচর ও কাউখালীতেও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালিত হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর রাতে রাঙামাটি সদর উপজেলার মানিকছড়ি, সাপছড়িসহ কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ,খামার পাড়া, আবাসিক, ধর্মঘর, হুদুকছড়ি এবং নান্যাচর উপজেলার ঘিলাছড়ি, সরিদাশ পাড়া, বেতছড়ি ১৮ মাইলে পোস্টারিং এবং ফেস্টুন টাঙানো হয়। দেয়াল লিখন করা হয় মানেকছড়ি গোল চত্বর, সাপছড়ি, কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এলাকায়। নান্যাচর উপজেলা সদরের ডাক বাংলা, বাজার, উপজেলা, টিএন্ডটি, বড়পুল পাড়াতে পোস্টারিং ও ফেস্টুন টাঙানো হয়। রাতেই সেনাবাহিনীর একটি দল সরিদাশ পাড়ার “সাজেক-নিলগীরি-বগালেক-চিম্বুক-সরিদাশ পাড়া থেকে সেনা চৌকি সরিয়ে নাও” লেখা ফেস্টুনটি নামিয়ে দেয়। কাউখালীতে পোস্টারিং এবং ফেস্টুন টাঙানোর পর রাতেই স্থানীয় সেটলাররা ছিঁড়ে ফেলে দেয়।

বান্দরবান সদরে টাঙানো হয় ফেস্টুন
বান্দরবান সদরে টাঙানো হয় ফেস্টুন

অপরদিকে বাঘাইছড়ি ও সাজেকে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে সেনাবাহিনী ব্যাপক হুমকিমলূক তৎপরতা চালায়। ফলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক কোন কর্মসূচি পালন করা সম্ভব না হলেও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা নিজেদের মত করে পার্টি পতাকার প্রতি সম্মান জানিয়েছে এবং শহীদদের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।

প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বান্দরবান জেলা সদরের বালাঘাটা বাজার, প্রাইমারী স্কুলের সামনে, রোয়াংছড়ি স্টেশন ও মহিলা কলেজ এলাকায় ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। উৎসুক পথচারিরা ফেস্টুন দেখতে কয়েকটি স্থানে জড়ো হয়েছে বলে জানা গেছে। ফেস্টুনের ক্যাপশন পড়ে স্থানীয় লোকজনকে নিজেদের মধ্যেও ভবিষ্যত আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে নানা আলোচনা করতে দেখেছেন বলে সিএইচটি নিউজের প্রতিবেদক বান্দরবান থেকে জানিয়েছেন। পৌরসভা নির্বাচন শেষে আগামী ৩ জানুয়ারি বান্দরবানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রোগ্রাম করার কথা জানিয়েছে ইউপিডিএফ।
———————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More