১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রকাশিত প্রচারপত্রে ইউপিডিএফ’র আহ্বান

ফাঁকা প্রতিশ্রুতিতে বিভ্রান্ত হয়ে শত্রুর ফাঁদে পা দেবেন না, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই জোরদার করুন!

0

নিজস্ব প্রতিবেদক : পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বিবৃতি শিরোনামে একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করেছে। গত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ দলটির প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত প্রচারপত্রে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে ‘ফাঁকা প্রতিশ্রুতিতে বিভ্রান্ত হয়ে শত্রুর ফাঁদে পা দেবেন না, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই জোরদার করুন’।

প্রচারপত্রে বলা হয়,…পাহাড় এবং সমতলের নির্যাতিত জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে অবিচল থাকার কারণে ইউপিডিএফ ক্ষমতাসীন সরকার তথা শাসকচক্রের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময় ইউপিডিএফ এবং ইউপিডিএফভুক্ত সংগঠনসমূহের আহূত শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে সেনা-পুলিশের হামলা, ধরপাকড় ও নির্যাতনের তালিকা বেশ দীর্ঘ। তার মধ্যে গুরুতর হচ্ছে ২০১৪ সালে সার্বজনীন মহান ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি র‌্যালিতে হামলা-ধরপাকড়, ফিলিস্তিন সংহতি দিবসে হামলা ও গ্রেফতার (২৯ নভেম্বর ২০১৫), বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধাদান ও হামলা (খাগড়াছড়ি ও মানিকছড়ি ১০ ডিসেম্বর ২০১৫)। সাম্প্রতিক সময়ে ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের অধিক নেতা-কর্মী কারাগারে অন্তরীণ রয়েছে। অত্যন্ত অমানুষিকভাবে উজ্জ্বল স্মৃতিসহ পাঁচ নেতা-কর্মীকে শারীরিকভাবে মারধর করে ছবি তুলে মিডিয়ায় দাগী আসামির মত উপস্থাপন করা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়,…পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ‘১১দফা নির্দেশনা’ জারি থাকায় সেনা দমন-পীড়ন নির্বিচারে ধরপাকড় নির্যাতনের মাত্রা অবর্ণনীয় রূপ নিতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। সাজেকের উজোবাজার ও মাজালং বাজার সেনা সৃষ্ট অবরোধের কারণে এলাকায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়ার উপক্রম হয়েছে। কৃত্রিমভাবে খাদ্য সংকট ঘটিয়ে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাঘাইহাটের সেনা কর্মকর্তারা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের কারণে যদি সাজেকে অভুক্ত অবস্থায় কারোর জীবন হানি ঘটে, তাহলে তার দায়-দায়িত্ব অবশ্যই বাঘাইহাট সেনা অধিনায়ককে নিতে হবে।

ভূমি কমিশন পুনর্গঠন এবং এ সংক্রান্ত কিছু বিধি তৈরি করে ক্ষমতাসীন সরকার কালক্ষেপণের দুরভিসন্ধিতে লিপ্ত রয়েছে বলে প্রচারপত্রে অভিযোগ করা হয়।

প্রচারপত্রে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের নাজুক অবস্থার পাশাপাশি সারা দেশের পরিস্থিতিও এক জটিল সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের গদি নিরাপদ রাখতে ভীষণ মরিয়া। সভ্য গণতান্ত্রিক রীতি নীতি তোয়াক্কা না করে একে একে নাগরিকগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছে। ক্ষমতাসীন সরকারের দুর্বলতা ও ভ্রান্ত নীতি অবলম্বনের কারণে জঙ্গীগোষ্ঠী ধর্মীয় অনুভূতির নাটক সাজিয়ে দেশে সংখ্যালঘু হিন্দু-খৃস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর একের পর এক আক্রমণ পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছে। ‘ফেইসবুকে’ ধর্মীয় ‘অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার’ নাটক মঞ্চস্থ করার সাথে খোদ আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা যুক্ত তারও প্রমাণ মিলেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামেও ফেইসবুক ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এখানে পিসিপি’র কর্মীকে জড়িয়ে ধর্মীয় অবমাননার নাটক মঞ্চস্থ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মী। ভিন্ন নামে হলেও এরা হলো একই গর্তের শেয়াল। ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি ও উপসনালয়ে আক্রমণ পরিচালিত হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জের সান্তাল অধ্যুষিত গ্রামে পুলিশের যোগসাজশে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের মত ঘৃণ্য ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। গোবিন্দগঞ্জে সান্তাল জনগণের ওপর পরিচালিত আক্রমণে পুলিশের যোগসাজশ উম্মোচিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে নিয়োজিত সেনাবাহিনী কর্তৃক বগাছড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট (১৬ ডিসেম্বর ২০১৪)সহ বহু ঘটনা জনগণের অগোচরে রয়ে গেছে। ‘বিজয় দিবসের’ মত জাতীয় গৌরবময় দিনে যারা নিজ দেশের জনগণের উপর হামলা চালাতে দ্বিধা করে না, তারা আসলে কাদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত সে প্রশ্ন না জেগে পারে না।

প্রচারপত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘অপারেশন উত্তরণ’ বাতিল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দমনমূলক ‘১১-দফা নির্দেশনা’ প্রত্যাহার পূর্বক নির্বিচারে ধরপাকড় বন্ধ করা; অবিলম্বে উজ্জ্বল স্মৃতি-বিপুলসহ গ্রেফতারকৃত ইউপিডিএফ নেতা-কর্মী-সমর্থক ও নিরীহ লোকদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা; বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিল কর, সংখ্যালঘু জাতির উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপানো চলবে না, সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং ভূমি বেদখল বন্ধ করা ও গণ-বিরোধী পর্যটন প্রকল্প গুটিয়ে ফেলার দাবি জানানো হয়।

এতে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়,
* গোবিন্দগঞ্জের সান্তাল জাতিসত্তাসহ দেশের সকল সংখ্যালঘুদের জান-মাল নিশ্চিত করতে আন্দোলন গড়ে তুলুন।
* সংগ্রামী বন্ধুদের মধ্যকার ঐক্য সংহতি জোরদার করুন।
* আন্দোলনে বিভেদ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির সকল অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সজাগ থাকুন।
* শত্রুর অপ্রচারণায় বিভ্রান্ত হবেন না, ফাঁদে পা দেবেন না, লড়াই সংগ্রামে নিজেদের সঠিক অবস্থানে অবিচল থাকুন।
* সুবিধাবাদী নীতিহীনদের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থান গ্রহণ করুন।
* ইউপিডিএফ-এর পতাকাতলে সমবেত হোন।

নীচে ইউপিডিএফ’র প্রচারিত প্রচারপত্রটি দেওয়া হলো:

updf-leaflet-page1

updf-leaflet-page2

আরো পড়ুন:
<<খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় ইউপিডিএফ’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
<<নান্যাচরে ইউপিডিএফ’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
<< শিশু র‌্যালিসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ইউপিডিএফ’র ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
<< ইউপিডিএফ-এর দেড় যুগ পূর্তিতে বিবৃতি : পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান
<<ঐতিহাসিক ৭ দফা রাজনৈতিক প্রস্তাবনা গৃহীত
<<পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এদিন : পূর্ণস্বায়ত্তশাসন ডাক

———————-

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More