ইতিহাস পরিক্রমা: মধ্যপ্রাচ্য অধ্যায়

ফিলিস্তিন সংহতি দিবস

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম
Palestine‘ফিলিস্তিন’ (যা প্যালেস্টাইন নামেও পরিচিত) ভূখণ্ডটি  আগে ছিল একটি রাষ্ট্র। সে সময় এর লোক সংখ্যা ছিল ১০ লাখের মত, যার অধিকাংশই ছিল আরব জাতিভুক্ত। মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের দু’ভাগ ছিল আরব জাতি গোষ্ঠীর, একভাগ ছিল ইহুদি। তখনকার লীগ অব নেশন্স-এর (জাতিসংঘের পূর্বের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘জাতিপুঞ্জ’) ম্যান্ডেট অনুসারে ব্রিটিশরা এ ভূখণ্ডটি শাসন করত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশরা ইহুদিদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনের গোপন অঙ্গীকারে আবদ্ধ ছিল। বিশ্ব যুদ্ধের পরে ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে জেরুজালেম শহরকে আন্তর্জাতিক শহরের মর্যাদা দিয়ে ‘ফিলিস্তিন’ ভূখণ্ডকে আরব ও ইহুদি অধ্যুষিত দু’টি রাষ্ট্রে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ব্রিটিশ ও মার্কিন সমর্থনের কারণে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য “ইস্রায়েল” রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের নানা প্রান্তের ইহুদিরা নতুন রাষ্ট্রে আবাসন গড়ে তোলে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠন তো দূরের কথা, তারা নিজ আদি নিবাস থেকে বিতাড়িত হতে থাকে। তখন থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে আরব ইহুদি দ্বন্দ্বের সূত্রপাত, বর্তমানে তা গুরুতর বিশ্ব সংকটের রূপ নিয়েছে।

১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২৯ নভেম্বরকে ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি প্রদর্শনস্বরূপ “আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিন সংহতি দিবস” হিসেবে গ্রহণ করে। এর দশ বছর পরে ১৯৮৭ সালের ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ‘ইউনাইটেড নেশনস পার্টিশন প্ল্যান ফর প্যালেস্টাইন’ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এরপর থেকে এ দিনটি “আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিনি সংহতি দিবস” হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ২০১২ সালে প্রথম বারের মত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়। ইস্রায়েলসহ পাশ্চাত্য শক্তির নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত মোকাবিলা করে জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্যপদ লাভের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিন। এ বছর ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশে ফিলিস্তিন পতাকা স্থান পেয়েছে। একই সময়ে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে ভ্যটিকান সিটির পতাকাও জাতিসংঘে উত্তোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সাধারণতঃ জাতিসংঘ দপ্তরে পূর্ণ সদস্য অর্থাৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের পতাকা উত্তোলনেরই রেওয়াজ রয়েছে। সেদিক থেকে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে এটি একটি বড় অগ্রগতি। সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রস্তাব পাস হবার সময় ইস্রায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আটটি দেশ বিরোধিতা করেছিল। আরও ৪৫টি দেশ ইস্রায়েলের অনুকূলে প্রস্তাব পাসের সময় অনুপস্থিত ছিল। এত বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ প্রস্তাব অনুযায়ী ইসরাইল ও ফিলিস্তিন- আলাদা দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও পাশ্চাত্য শক্তির ষড়যন্ত্র আর নিজেদের মধ্যকার দুর্বলতার কারণে এতদিন ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গঠিত হতে পারে নি। ১৯৯৬ সালে পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য নামমাত্র স্বায়ত্তশাসন কায়েম হয়েছে। “আল ফাতাহ” ও “হামাস” দু’গ্রুপে বিভক্ত হবার কারণে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের লড়াই যতটা জোরদার হতে পারত, তা হয় নি। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে ও নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে ফিলিস্তিনি জনগণ যাতে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা প্রাপ্ত হয়ে জাতিসংঘে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, সে লক্ষ্যে তাদের আরও কৌশলী হতে হবে। নিজভূমে প্রবাসী হয়ে মার খাওয়ার করুণ পরিণতির অবসান ঘটাতে দরকার ফিলিস্তিনি জনগণের ঐক্যবদ্ধ লড়াই।

নির্যাতিত লাঞ্ছিত জনগোষ্ঠী হিসেবে ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে বিশ্বের অপরাপর নিপীড়িত জনগণ সব সময়ই সংহতি জানিয়ে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকারহারা পাহাড়ি জনগণের দশাও ফিলিস্তিনি জনগণের অনুরূপ। সে কারণে ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে তারাও একাত্মতাবোধ করে এবং ইস্রায়েলের মানবতাবিরোধী ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানায়।

দিবসটি উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে সক্রিয় ৮ গণসংগঠন (গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পা.চ. নারী সংঘ, সাজেক নারী সমাজ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াড) খাগড়াছড়ি সদরে এক সংহতি সমাবেশের ডাক দিয়েছে। সমাবেশ থেকে তারা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করবেন এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানাবেন। এ ব্যাপারে ৮ গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটির পক্ষ থেকে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে অবগতি দেয়া হয়েছে বলে এ সংগঠনের মুখপাত্র জানিয়েছেন। অন্যদিকে দিবসটিকে ঘিরে খাগড়াছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের হুমকিমূলক তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রশাসনের নিকট অবগতি দেবার পরে পরেই ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে স্থানীয় সেনাবাহিনী টহল জোরদার করে হুমকিমূলক তৎপরতা দেখাচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খবংপুজ্জ্যার এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গণবিরোধী ১১দফা নির্দেশনা জারির পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী তাদের খবরদারি তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এক সূত্রে জানা গেছে, ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি সমাবেশ থেকে ৮ গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানকে ‘৭১সালে গণহত্যা সংঘটিত করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার আহ্বানও জানাবে। ইতিপূর্বে ৮গণসংগঠন সে ব্যাপারে বিবৃতিও দিয়েছে। খোদ সেনাবাহিনীর মধ্যকার একটি অংশ পাকিস্তানপন্থী বলে অভিযোগ রয়েছে। ভীতি সঞ্চার করে আগামী কালের সমাবেশে লোক সমাগমে বিরূপ প্রভাব ফেলানোর উদ্দেশ্যে নিরাপত্তা টহল বাড়ানো হয়েছে কিনা সে নিয়ে খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এখন লোকজন আগামী কালের সমাবেশে সেনাবাহিনী বা প্রশাসন বাধা দেয় কিনা সেটা দেখার অপেক্ষায় আছে।

এখানে আরও উল্লেখ্য, ঢাকায়ও একইদিনে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি জানিয়ে মিছিল বের করবে এবং সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করবে।
——————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More