ফ্যাসিবাদ ও জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান
ঢাকা : ফ্যাসিবাদ ও জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ঢাকায় এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার (১১ জুলাই) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় কমিটি এই বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে বদরুদ্দীন উমরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সি আর আবরার, প্রকোশলী ম ইনামুল হক, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, নয়া গণতান্ত্রিক গনমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন, জাতীয় গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান, বাসদ মার্কসবাদীর কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, মানবধিকার কর্মি শিরিন হক, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরি, ব্যারিষ্টার সাদিয়া আরমান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমাসহ আরো অনেকে।
গোল টেবিল বৈঠকে জাতীয় কমিটির লিখিত প্রস্তাবনা পাঠ করেন, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক হাসিবুর রহমান।
ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় কমিটির সভাপতি বদরুদ্দীন উমর বলেন, দেশে ক্ষমতায় রয়েছে লুটপাটকারী ব্যবসায়ী শ্রেণী। বর্তমানে দেশের রাজনীতি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে নিয়ন্ত্রণ নেই; লুটপাটকারী ব্যবসায়ীদেরই হাতেই রয়েছে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ। এই ব্যবসায়ী শ্রেণী বাংলাদেশে চুরি-লুটপাট চালাচ্ছে। শেখ হাসিনা তাদের চুরি-লুটপাটের প্রধান মদদদাতা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা হওয়ার মূল কারণ হল দেশে প্রতিরোধ নেই। পূর্বে মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলত কিন্তু মানুষের সে অভিব্যাক্তি আর সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। মানুষের নিরবতার কারণে ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী রক্ষা পাচ্ছে। বুদ্ধিজীবী-শিক্ষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ নিরব রয়েছে।মিডিয়া নিরব ভূমিকা পালন করছে। কিন্ত তা সত্ত্বেও মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে, অচিরেই সেই ক্ষোভ বিষ্ফোরণে পরিণত হবে। বাংলাদেশ দাবানলের অবস্থায় রয়েছে এবং সামান্য স্ফুলিংগ থেকে দাবানল ছড়িয়ে পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন দুর্বৃত্ত গুণ্ডাবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সরকার-পুলিশ তাদের পাশে রয়েছে একারণে অপরাধ করেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা পালা বদলের সম্ভাবনা আর দেখা যাচ্ছে না। শেখ হাসিনা নির্বাচন ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের অনুগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
সরকারের ফ্যাসিবাদকে উচ্ছেদ করতে হলে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। তিনি আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, সরকার জনবিচ্ছিন্ন। একারণে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অন্যায়ভাবে পেটানো-জেল-রিমান্ড নেয়া হয়েছে। সরকার নৈতিকভাবে দূর্বল বলে এমন আচরণ করছে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা বলেন, সারা দেশে ফ্যাসিবাদ চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। সেখানে সেনা শাসন চলছে। একদিকে অব্যাহত দমনপীড়ন চলছে অন্য দিকে সেনা সৃষ্ট মুখোশবাহিনীসহ সেনা মদদে তাদের দালালরা অব্যাহতভাবে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে সভাসমাবেশসহ যে কোন গণতান্ত্রিক কর্মসূচী সেনা-প্রশাসন কর্তৃক হস্তক্ষেপ-হামলা হচ্ছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার পরিবেশ পার্বত্য চট্টগ্রামে নেই। রাজনৈতিক দমনপীড়নের অংশ হিসেবে সেনা-প্রশাসন মামলা-হুলিয়া, গ্রেফতার, হয়রানিমূলক টহল-তল্লাশি অব্যাহতভাবে চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, এ সরকার চরম উগ্রজাতীয়তাবাদী। একারণে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী করে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বসবাসকারী জাতিসত্তাদের ওপর।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা-সেটলার দ্বারা অব্যাহত নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে। এ বছর সেনা কর্তৃক বিলাইছড়িতে দু্ই পাহাড়ি বোন ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। রাঙামাটি হাসপাতালে তাদের চিকিৎসারত অবস্থায় সেনারা কি ধরণের জঘন্য আচরণ করেছে তা সবারই জানা। তিনি মুখোশ বাহিনী কর্তৃক তাদের অপহৃত হওয়ার কথাও তুলে ধরেন।
গোল টেবিল বৈঠকে প্রারম্ভিক বক্তব্য ও পরিচালনা করেন, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আকমল হোসেন।
এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি পারভেজ লেলিন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিনয়ন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরুপা চাকমাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
———————
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।