ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অভিমুখে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ

ফ্যাসিস্ট সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে কারাগারে পরিণত করেছে

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম
Dhaka2, 10.12.2015ঢাকা: পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন সংগঠন ( পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম) আজ ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ‘অবিলম্বে  পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে গণবিরোধী ১১ দফা নির্দেশনা তুলে নেয়া, খাগড়াছড়িতে ফিলিস্তিন সংহতি দিবসে বর্বরোচিত সেনা-পুলিশী হামলার প্রতিবাদ ও এইচডব্লিউএফ সভা নেত্রী নিরূপা চাকমাসহ গ্রেফতারকৃত এইচডব্লিউএফ, পিসিপি-ডিওয়াইএফ ও ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির’ দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেল দোয়েল চত্বরে গেলে পুলিশ বাধা প্রদান করে। সেখান থেকে বিক্ষোভ করে রাজু ভাস্কর্যে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে সভা শেষ করা হয়।  বিক্ষোভ কর্মসূচির আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা পাদদেশে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সিমন চাকমা।

উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)এর সংগঠক মিঠুন চাকমা, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভানেত্রী সীমা দত্ত, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ, ছাত্র গণমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক নূর সুুমন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রিনা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সদস্য থুইক্যসিং মারমা। এছাড়া সংহতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের অর্থ সম্পাদক নিজাম রহমান।

বক্তাগণ সমাবেশ থেকে একটি দেশে দুই ধরনের শাসনব্যবস্থা কেন চালু রাখা হয়েছে এ বিষয়ে প্রশ্ন রেখে বলেন, পুরো দেশের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও সেনাশাসন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং সভা সমাবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাামের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনরত ইউপিডিএফ ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহের কর্মীদের গ্রেপ্তার হয়রানী চালানো হচ্ছে। এমনকি সভা সমাবেশ করতেও বাধা প্রদান করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সারা দেশের জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানা নেতৃবৃন্দ।

বক্তাগণ মানবাধিকার দিবসের দিনে খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠনের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ করতে বাধাদান ও মানিকছড়ি উপজেলায় সেনা সহায়তায় সেটলার দ্বারা মানবাধিকার দিবস কর্মসূচিতে আগত প্রায় ৫ জন সাধারণ ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক আখ্যায়িত করেন। এই ধরণের কর্মকান্ড সরকারের ফ্যাসিস্ট চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন।

নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভানেত্রী সীমা দত্ত বলেন, পার্বত্য জনগণকে জন্মলগ্ন থেকেই লড়াই সংগ্রাম করে আসতে হচ্ছে। তিনি এ সময় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা ও সংগঠনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয়া চাকমাকে অবলিম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, আমাদের সংগঠন সবসময় পার্বত্য নিপীড়িত জনগণের পাশে রয়েছে।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে সরকার কারাগারে পরিণত করেছে। যে দেশের জনগণ দেশের নিপীড়িত জাতিসমূহের মুক্তি আন্দোলনের জন্য কাজ করে না সে দেশের জনগণেরও মুক্তি সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।  তিনি সমতলের জনগণকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে জানুয়ারি মাসে জারিকৃত ১১ দফা সরকারী নির্দেশনার উল্লেখ করে বলেন, শাসকশ্রেনীর এর পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে গভীর চক্রান্ত রয়েছে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেএই চক্রান্ত রুখে দাড়াতে হবে।

ইউপিডিএফ এর সংগঠক মিঠুন চাকমা সরকার রাষ্ট্র কারা পরিচালনা করে এই প্রশ্ন রাখেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় একটি বাহিনীর একজন কর্মকর্তা দেশের বা রাষ্ট্রের পরিচালনার কাজ যদি ঠিক করে দেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কী ধরণের শাসন চলবে, সেখানে সেনাশাসন চলবে নাকি চলবে না তা ঠিক করে দেন তবে দেশে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীমন্ডলী তথা সরকার গঠনের কীইবা প্রয়োজন রয়েছে?

উল্লেখ্য গত ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিন সংহতি দিবস উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে ৮ সংগঠন এক মিছিলের আয়োজন করলে সেনা ও পুলিশবাহিনী নির্বিচারে নারী-পুরুষসহ মিছিলে আগত সবার উপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। এতে আহত হয় প্রায় ১৪ জন। মিছিল থেকে আটক করা হয় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা ও সংগঠনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয়া চাকমাকে। উক্ত হামলা-লাঠিপেটা ও আটকের প্রতিবাদে ০১ ডিসেম্বর অবরোধের ডাক দেয়া হলে অবরোধের আগেপরে আরো আটক করা হয় তিন সংগঠনের আরো প্রায় ৭ জন কর্মীকে।

গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সেনা পুলিশ বাহিনী দিয়ে দমন পীড়ন বন্ধের দাবি, ১১ দফা গণবিরোধী নির্দেশনা প্রত্যাহার, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা ও সদস্য দ্বিতীয়া চাকমাকে মুক্তির দাবিসহ সভা সমাবেশের অধিকার সুরক্ষার দাবি জানিয়ে তিন সংগঠন আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভের কর্মসূচি প্রদান করে।
——————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More