বগাছড়িতে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ২বছরপূর্তিতে আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

0

15555704_1698942123769665_386289809_n

নান্যাচর: রাঙামাটি জেলার নান্যাচর উপজেলার বগাছড়িতে পাহাড়িদের উপর সেনা-সেটলার কর্তৃক উগ্রসাম্প্রদায়িক হামলার ২বছরপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেছে হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গ।

আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬, শুক্রবার দুপুরে বগাছড়ির সুরিদাশ পাড়ায় এই কর্মসূচি পালিত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ২ শতাধিক লোকজন অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনা সভাটি সকাল ১০টায় শুরুর কথা থাকলেও লাঠিসোটা নিয়ে একদল সেনা সদস্য এসে সভার জন্য প্রস্তুতকৃত শামিয়ানা খুলে দেয়। পরে সেনাবাহিনীর বাধার মুখে দুপুর ১২টায় আলোচনা সভা শুরু হয়ে বেলা ২টায় শেষ হয়।

উক্ত সভায় রাম চাকমার সভাপতিত্বে ও তোষ মণি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বুড়িঘাট ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনন্দ চাকমা, ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার নমিতা চাকমা, মুলুক্কী ছড়া গ্রামের কার্বারী মিশন চাকমা, দাজ্যাছড়া গ্রামের কার্বারী রণজিত চাকমা ও এলাকার মুরুব্বী মঞ্জুলাল চাকমা। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন কাজলী ত্রিপুরা, সুবিন্টু চাকমা, প্রীতিবালা চাকমা, শান্তিরাণী চাকমা ও শ্যামল চাকমা(ছাত্র)।

15577491_1698942110436333_1497569459_n

সভায় মিশন চাকমা বলেন, আনারস বাগান কেটে দেয়ার অজুহাত সৃষ্টি করে সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় সেটলাররা ২০১৪ সালের বিজয় দিবসে পরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলায় সেনাবাহিনী কেন বার বার জড়িত হয়ে পড়ে? বিজয় দিবসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে পাহাড়িদের উপর এই হামলা কেন করা হলো? তিনি হামলাকারীদের শাস্তি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

নমিতা চাকমা বলেন, আজ আমরা দিনব্যাপী কালো ব্যাজ পরেছি। আজকের দিনটি আমাদের জন্য কালো দিবস। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।

আনন্দ চাকমা বলেন, বিহার নির্মাণ করার জন্য যে টাকাগুলো বিহারে জমা ছিল সেদিন সেগুলোও লুট করে নিয়েছিল সেটলাররা। তাই আমরা এখনো বিহার নির্মাণ করতে পারিনি। ঘর পুড়ে গিয়ে পাহাড়িরা এখন সর্বশান্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রশাসন ঘর তুলে দেয়া, ক্ষতিপুরণ প্রদান ও ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনো পুরোপুরি বাস্তাবায়ন করেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

15591951_1698964307100780_73389884_n

কাজলী ত্রিপুরা বলেন, আর্মিদের সহযোগীতায় সেটলাররা আমাদের বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। শুধু এখানে নয় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে। আমাদের জায়গা দখল করেই আমাদেরকে উচ্ছেদ করছে এ কেমন দেশ, কেমন রাষ্ট্র? তিনি সবাইকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যতদিন পর্যন্ত প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সম্পুর্ণ ঘরবাড়ি তুলে দেয়া না হয়, যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া না হয় ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চলতেই থাকবে। প্রয়োজনে আরো কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সুবিন্টু চাকমা বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে আমাদের ঘর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। ঘটনার ২ বছর পার হলেও আমাদেরকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি করেন।

প্রীতিবালা চাকমা বলেন, সেদিন একদিকে আর্মিরা ফায়ার করেছে, অন্যদিকে সেটলাররা আমাদের ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।  তিনি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।

ঘটনার স্মরণে বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
——————

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More