বগাছড়ি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক সমাজ

0

সিএইচটিনিউজ.কম
Press Breefing 1খাগড়াছড়ি : রাঙামাটি জেলার  নান্যাচর উপজেলার বগাছড়িতে সেটলার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও অতি দ্রুত পুনর্বাসনসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক সমাজ।

শনিবার (৭ মার্চ) খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরস্থ ঠিকাদার সমিতি ভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান। গতকাল শুক্রবার বগাছড়ি ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে এ প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উত্থাপিতত অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে-ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা তুলে নেয়া এবং হামলাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা; ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত সরকারী ত্রাণের ব্যবস্থা করা; ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের হামলার ঘটনা না ঘটে তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা’ বগাছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল বন্ধ করা ও বেদখলকৃত জমি পাহাড়িদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া; ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করা এবং জিজ্ঞাসাবাদের নামে ক্ষতিগ্রস্তদেরকে হয়রানি বন্ধ করা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি জারি করা পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত ১১টি নির্দেশনা বাতিল করা।

শনিবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সচেতন নাগরিক সমাজের সভাপতি কিরণ মারমার সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সচেতন নাগরিক সমাজের সাধারণ সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি পৌর কাউন্সিলর মিলন দেওয়ান।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ তিনটি বুড়িঘাট ও সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের বগাছড়ি, সুরিদাস পাড়া ও নবীন তালুকদার পাড়ায় সংঘটিত হামলায় ৫০টি বাড়ি, ৭টি দোকান ও একটি ক্লাবঘর পুড়ে যায়। এছাড়া করুণা বনবিহারে ভাঙচুর ও বুদ্ধমূর্তি লুট করা হয়।  প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বাড়ি তৈরি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো পর্যন্ত মাত্র ১০টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তবে ২২¢´১১¢ সাইজের বাড়িগুলো নির্মাণে অত্যন্ত নিম্ন মানের টিন ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাকিগুলো নির্মাণ করতে কত সময় লাগবে তাও কেউ জানে না।

লিখিত বক্তব্যে মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে হয়রানির অভিযোগ করে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ২০০ জনের অধিককে আসামী করে মামলা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১ জন ৭ বছর আগে মারা গেছে এবং ৫ জন অল্প বয়সী কিশোরও রয়েছে। [তুষণ চাকমা (১৫), বাবলু চাকমা(১৫) ও তার যমজ ভাই এপোলো চাকমা, পবন চাকমা(১৬) ও রিকু চাকমা(১৫)]। যারা মামলা করেছে তারা সকলেই অনুপ্রবেশকারী ভূমি বেদখলকারী সেটলার। এ হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় তাদেরকে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়। গত ৫ মার্চ রাঙ্গামাটিতে হাজিরা দেয়ার পর ফেরার সময় গাড়ির ছাদ থেকে পড়ে তুষণ চাকমা নামে ১৫ বছরের এক কিশোর নিহত হয়। সে বেতছড়ি জেনারেল ওসমানী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। অন্যদিকে হামলাকারী সেটলারদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হলেও, তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আবার হামলার হুমকি দিচ্ছে।

সরকারী ত্রাণের অপ্রতুলতা ও ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্বষহ জীনের কথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারী ত্রাণ ও সাহায্য নিতান্তই অপ্রতুল। জেলা পরিষদ থেকে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কেবল ১ বস্তা চাউল (৫০ কেজি), ১টি লুঙ্গি ও ১টি গামছা দেয়া হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা বর্তমানে অনাহারে অর্ধাহারে ঝুপড়ির মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। গ্রীষ্মের তাপ ও বর্ষা মৌসুমে তাদের জীবযাত্রা আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্তরা ঠিকমত চিকিৎসা ও শিক্ষা সুবিধা পাচ্ছে না। বাড়ি পুড়ে যাওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমত পড়াশুনা করতে পারছে না। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ২৪ ঘন্টা সেনা পাহারা বসানো হয়েছে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের নামে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনার সমালোচনা করে বলা হয়, কোন দেশী-বিদেশী নাগরিক যদি পাহাড়িদের সাথে কথা বলতে চায়, তাহলে তাকে স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতিতে কথা বলতে হবে। এটা পাহাড়িদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক, অসাংবিধানিক এবং অবমাননাকর। যে সরকার পাহাড়ি সহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে/আদিবাসীদেরকে সাংবিধানিকভাবে বাঙালি বলে অভিহিত করতে পারে, সে সরকারই একমাত্র এ ধরনের ফ্যাসিস্ট ও বর্ণবাদী নির্দেশ জারী করতে পারে।

প্রেস ব্রিফিং-এ অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদ সভাপতি এবং পানছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, লক্ষীছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা, মা’জন পাড়া সমাজ উন্নয়ন কমিটির সভাপতি রবিশংকর তালুকদার এবং হেডম্যান এসোসিয়েশন সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা প্রমুখ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক সমাজের সভাপতি কিরণ মারমা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
——————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More