বন্দুকভাঙ্গায় সেনাবাহিনীর তাণ্ডব : ৭ জনকে আটক, ৮ জনকে মারধর, ৯ জনের বাড়িতে তল্লাশি ও লুটপাট

0
সেনারা বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে জিনিসপত্র তছনছ করে দিয়েছে

রাঙামাটি প্রতিনিধি ।। রাঙামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের বামে ত্রিপুরাছড়া গ্রামে সেনাবাহিনী ধরপাকড়, ঘরবাড়িতে তল্লাশি, মারধরসহ ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ৭ জনকে আটক, ৯ জনের বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি, ৮ জনকে মারধর এবং নগদ অর্থ, মোবাইল ও ইঞ্জিনচালিত বোট লুটে নেওয়া হয়েছে বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন।

আজ শুক্রবার (২৬ নভেম্বর ২০২১) ভোররাতে এ তাণ্ডব চালানো হয় বলে স্থানীয়রা জানান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ ভোররাত ৩টার দিকে নান্যাচর জোন থেকে তিনটি জেট বোট ও দুইটি ইঞ্জিনচালিত বোট যোগে এবং খারিক্ষ্যং ক্যাম্প থেকে পায়ে হেঁটে বিপুল সংখ্যক সেনাসদস্য তাদের মদদপুষ্ট দুইজন সন্ত্রাসীকে সাথে নিয়ে বামে ত্রিপুরাছড়া গ্রামে হানা দেয়। সেনারা সকাল ৬টা পর্যন্ত ধরপাকড়, গ্রামবাসীদের ঘরবাড়িতে তল্লাশি, মারধর ও লুটপাট চালায়। সেনারা গ্রামের কার্বারী ও স্কুল ছাত্রসহ ৭ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। এছাড়া ৯ গ্রামবাসীর বাড়িতে তল্লাশি, ছাত্রসহ ৮ জনকে মারধর ও আড়াই লক্ষাধিক টাকা, মোবাইল ও একটি ইঞ্জিনচালিত বোট সেনারা লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যাদেরকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তারা হলেন– ১.প্রদীপ চাকমা, (৪০), পিতা – দয়াল কৃষ্ণ চাকমা, গ্রাম- বামে ত্রিপুরাছড়া; ২. মধু চন্দ্র চাকমা (কার্বারী) (৫৫), পিতা – লক্ষী কান্ত চাকমা গ্রাম- ঐ; ৩. শুভ রঞ্জন চাকমা (৪০) পিতা- নয়ন কান্ত চাকমা। গ্রাম- ঐ; ৪. বিজয় বাহু চাকমা (৪৭) পিতা – জ্ঞান চন্দ্র চাকমা। গ্রাম- ঐ; ৫. কৃষ্ণ জ্যোতি চাকমা/চিকন চান ( ৩৭) পিতা – মৃত চন্দ্রসেন চাকমা। গ্রাম –ঐ; ৬. আশু বিকাশ চাকমা (ছাত্র) ২৫ পিতা- নতুন জয় চাকমা। গ্রাম– ঐ; ৭. লাহর চাকমা ( কার্বারী) ৫৫ পিতা – মৃত গুলুঙ কার্বারী। গ্রাম -ডানে ত্রিপুরা ছড়া। এর মধ্যে মধুচন্দ্র চাকমা বামে ত্রিপুরা ছড়ি ও লাহর চাকমা ডানে ত্রিপুরাছড়ি গ্রামের কার্বারী (গ্রাম প্রধান) এবং প্রদীপ চাকমা আসন্ন ৪র্থ দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের একজন মেম্বার পদপ্রার্থী বলে জানা গেছে।

যারা মারধরের শিকার হয়েছেন তারা হলেন– ১. শান্তি বিকাশ চাকমা ( ৩৮), পিতা – কালিজয় চাকমা। গ্রাম – বামে ত্রিপুরা ছড়া; ২. উইন চাকমা (ছাত্র, বয়স-২৬), পিতা- মধুচন্দ্র চাকমা (কার্বারী), গ্রাম- ঐ; ৩. মাইন চাকমা (ছাত্র, বয়স-২৪), পিতা- মধুচন্দ্র চাকমা (কার্বারী) গ্রাম- ঐ; ৪. বিনয় চাকমা (ছাত্র, বয়স-২২), পিতা – বিজয় বাহু চাকমা। গ্রাম- ঐ; ৫. প্রভাত চন্দ্র চাকমা (৩৫), পিতা- মৃত এগান্যা চাকমা। গ্রাম- ঐ; ৬. সুর মোহন চাকমা (৫৫), পিতা- মৃত বক্র চাকমা, গ্রাম – ঐ; ৭. পবিত্র চাকমা (ছাত্র বয়স ২৪), পিতা – সুর মোহন চাকমা, গ্রাম- ঐ; ৮. নিপেল চাকমা (২২), পিতা- যতন চাকমা, গ্রাম- ঐ।

যাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়– ১. বিশ্ব বিজয় চাকমা, ২. বিবরন চাকমা, ৩. বিহাস চাকমা, ৪. চিকন চান চাকমা, ৫. সুবল চন্দ্র চাকমা, ৬. সুর মোহন চাকমা, ৭. জ্ঞান মুকুল চাকমা, ৮. রিপন জ্যোতি চাকমা ও ৯. নন্দ চাকমা ওরফে শক্ত (ইউপিডিএফ সদস্য)। সেনারা নন্দ চাকমার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ের জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে যায় এবং বাড়ির সকল জিনিসপিত্র তছনছ করে দেয়।

লুটপাট:

সেনারা মধু চন্দ্র চাকমা (কার্বারী)-এর বাড়ি থেকে সেগুনগাছ ও ফল বিক্রির আনুমানিক ১,৫০,০০০ টাকা, সুবল চন্দ্র চাকমার বাড়ি থেকে আনুমানিক ১ লক্ষ টাকার অধিক (বিহার উন্নয়নের জমা টাকা) লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া মাছ ব্যবসায়ী বিচয়ন চাকমার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিলেও পরে ৫০০ টাকা ফেরত দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। তিনি মাছ কিনতে আসার পথে সেনাদের ছিনতাইয়ের শিকার হন। এছাড়াও সেনারা গ্রামবাসীদের ব্যবহৃত একটি ইঞ্জিনচালিত বোট ও ৯টি মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে গেছে বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন।

সেনাদের সাথে তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দলের রিজুম ও রূপম চাকমা নামে দুইজন ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত (বিকাল সাড়ে ৩টা) আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে, সেনাবাহিনীর এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অবিলম্বে আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি ও লুটে নেওয়া টাকা ফেরত প্রদানসহ জনগণের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More