বাঘাইছড়িতে সমর, সুকেশ, মনোতোষ ও রুপন চাকমার ২১তম শহীদ বার্ষিকী পালিত
বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি : ‘শহীদদের বীরত্বপূর্ণ আত্মবলিদান আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শক্তি যোগায়’ এই শ্লোগানে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সমর, সুকেশ, মনতোষ, রুপন চাকমা’র ২১তম শহীদ বার্ষিকী পালিত হয়েছে।
আজ ২৭ জুন, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপকারী মাঠে শহীদদের উদ্দেশ্য নির্মিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে চার শহীদের ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সামাজিক সংগঠন, শহীদ পরিবারবর্গ ও সাধারণ জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সকল শহীদদের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নিরবতা পালনের পর সেখানে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ চাকমার সঞ্চালনায় ও রিপন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পিসিপির রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আসেন্টু চাকমা, ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেট ফ্রন্ট ( ইউপিডিএফ) বাঘাইছড়ি ইউনিট সদস্য নিরত চাকমা, শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন শহীদ রুপন চাকমার বড় ভাই শুভ প্রিয় চাকমা,গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সদস্য জীবন চাকমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য নিউটন চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সেনা কমাণ্ডার লে. ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের দ্বারা হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণের প্রতিবাদে ২৭ জুন সড়ক ও নৌপথ অবরোধ পালন করতে গিয়ে সেনা-পুলিশ-সেটলার-ভিডিপি কর্তৃক সমর, সুকেশ, মনোতোষ ও রূপন চাকমা হত্যা ও গুমের শিকার হয়েছিলেন। সরকার ২১ বছরেও কল্পনা চাকমার অপহরণের যেমনি সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার এবং দোষি ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা করেনি, একইভাবে সমর, সুকেশ, মনোতোষ ও রুপনের খুনীদেরও আইনের আওতায় আনা হয়নি।
বক্তারা আরো বলেন, শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না। কল্পনা চাকমার অপহরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যারা নিজেকে আত্মোৎসর্গ করেছেন তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন।
বক্তারা কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌসও তার দোসরদের বিচারসহ সমর, সুকেশ, মনোতোষ ও রূপন চাকমার খুনীদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানান।
একই সাথে বক্তারা লংগুদুতে পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও এক বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের এবং নান্যাচরে কলেজ ছাত্র রমেল চাকমাকে হত্যাকারীদেরও আইনের আওতায় এনে বিচার ও শাস্তির দাবি করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ১৫দিন পর ২৭ জুন কল্পনা চাকমার মুক্তির দাবিতে পাহাড়ি গণপরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন বাঘাইছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। অপবরোধ চলাকালীন সেটলার বাঙালিরা পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে রুপন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে এবং অবরোধ কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করতে যাওয়া মনোতোষ চাকমা, সমর বিজয় চাকমা ও সুকেশ চাকমাকে সেটেলার বাঙালিরা রাস্তায় ধাওয়া করে ধরে হত্যা করে লাশ গুম করে। আজ ২১ বছরেও তাদের কোন খোঁজ মেলেনি।
————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।