বাঘাইছড়ি ও দিঘীনালায় পাহাড়িদের উপর সেটলার হামলা
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি ও খাগড়াছড়ির দিঘীনালায় সেটলার হামলায় কমপক্ষে একজন নিহত হয়েছে। নিহতের নাম চিগোন মিলা চাকমা (৫০)। তার বাড়ি দিঘীনালার জোড়া ব্রিজ এলাকায় আজাছড়া হাঙারীমা ছড়া গ্রামে। হামলার সময় তিনি ও তার স্বামী জিতেন চাকমা দিঘীনালা হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন।
আজ ১৪ ডিসেম্বর সকালে মারিশ্যা ইউনিয়নের দুটি বাঙালি ও পাহাড়ি গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে এক বাঙালির লাশ পাওয়া যায়। তার নাম সাত্তার (৩০) পিতা ইদ্রিস ওরফে বুজ্যা। সেটলারদের অভিযোগ গতকাল মারিশ্যায় তার মোটর সাইকেলে করে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি নিঁখোজ হন। অপরদিকে পাহাড়ি গ্রামবাসীরা জানান গতকাল কোন পাহাড়ি সাত্তারের মোটর সাইকেলের যাত্রী হননি। তারা বলেন, পাহাড়িরা তাকে মেরে ফেলে লাশ নিজেদের গ্রামের পাশে রাখবে তা কোন মতেই সম্ভব নয় ও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাদের ধারণা, নিহত ব্যক্তির সাথে অন্য কোন সেটলারের শত্রুতা থাকতে পারে এবং তার রেশ ধরে তাকে খুন করা হয়েছে। আর পাহাড়ি-বাঙালি দাঙ্গা সৃষ্টি করে খুনের দায় থেকে বাঁচতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার লাশ পাহাড়িদের গ্রামের পাশে রেখে দেয়া হয়েছে।
উক্ত সেটলারের মৃত্যুকে ব্যবহার করে সেটলারদের মধ্যে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয় এবং এক পর্যায়ে সেটলাররা সকাল ১১টার দিকে মারিশ্যা বাজারে আসা পাহাড়িদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে বেশ কয়েকজন পাহাড়ি আহত হয়। ঠিক কতজন আহত কিংবা নিহত বা গুম হয়েছে তা এখনো স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে আহতদের মধ্যে সোনালী ব্যাংক বাঘাইছড়ি শাখার ম্যানেজার দমনা চাকমা এবং উন্নয়ন বোর্ডের ফিল্ড অফিসার মুকুট কান্তি ত্রিপুরাও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেটলাররা ৬ জন পাহাড়িকে মারিশ্যা বাজারে আটক করে রেখেছে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে জানা যায়নি।
সেটলাররা বাঘাইছড়ি সদরের বাবু পাড়ায়ও আক্রমণের চেষ্টা চালায়। কিন্তু পাহাড়িদের প্রতিরোধের মুখে তারা সরে যেতে বাধ্য হয়। হামলাকারীরা বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমার উপরও হামলা চালায়। তবে তিনি কোন রকমে পালিয়ে প্রাণ রা করতে সক্ষম হন। পাহাড়িদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হামলার সময় পুলিশ ও প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
এদিকে বাঘাইছড়ি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিঘীনালায়ও আক্রমন ছড়িয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলার কবাখালীতে সেটলাররা একই পরিবারের ৭ ব্যক্তির উপর আক্রমণ চালালে এতে এক মহিলা আহত ও পরে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া আহত হন যতীন চাকমা (৫৫), রূপায়ন চাকমা (৩০) ও তপন জ্যোতি চাকমা (২৫)। তারা কবাখালী ইউনিয়নের হাঙারীমা ছড়া গ্রামের বাসিন্দা। হামলার সময় তারা চিগোন মিলা চাকমার দিঘীনালা হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ী ফিরছিলেন। কবাখালী বাজারে পৌঁছলে সেটলাররা তাদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়।
ইউপিডিএফ রাঙামাটি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক ধ্রুব জ্যোতি চাকমা মারিশ্যা ও দিঘীনালায় পাহাড়িদের ওপর সেটলার হামলার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানান।
তিনি বলেন, যে সেটলারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়িদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে তার রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে এবং পাহাড়ি বাঙালি যেই হোক তার মৃত্যুর সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
ধ্রুব জ্যোতি চাকমা বলেন, কে বা কারা খুন করেছে সেটা না জেনে দাঙ্গা বাঁধিয়ে নিরপরাধ নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালানো সভ্য দেশে অনুমোদন পেতে পারে না। নানা অজুহাতে, মিথ্যা অজুহাতে, এমনকি বিনা অজুহাতে যখন তখন পাহাড়িদের ওপর হামলা চালানো আজ রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
তিনি হামলার সময় স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে বলেন, পুলিশ যদি তড়িৎ ব্যবস্থা নিতো তাহলে এ হামলা এড়ানো যেতো।