বান্দরবানে সেনা ও বিজিবি কর্তৃক ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

0

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
Ctg 2 May 2014 rally against land grabbing in Bandarbanচট্টগ্রাম: বান্দরবানের রুমার সেংগুম মৌজায় সেনাগ্যারিসন স্থাপনের নামে ৯৯৭ একর, পাইন্দু মৌজায় বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের নামে ২৫ একর এবং রোয়াংছড়ির তারাছা মৌজায় বৌদ্ধদের পবিত্র স্থান রামজাদি’র নিজস্ব জায়গা থেকে বিজিবি কর্তৃক ১৫ একর ভূমি বেদখল বন্ধ এবং নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড়িদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

আজ শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটায় শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রক্ষিণ শেষে প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে রূপ নেয়। গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি জিকো মারমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক অংগ্য মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরমামের কেন্দ্রেীয় যুগ্ম সম্পাদক এসিংমং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রীনা দেওয়ান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি চন্দ্র দেব চাকমা, যুব ফোরামরে কেন্দ্রীয় সদস্য ও নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দা শুভ চাক, নাক্ষ্যংছড়ির থেকে মনুচিং মারমা ও ব্যুমং কার্বারী।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি এ্যাডভোকেট ভূলন লাল ভৌমিক। সভা পরিচালনা করেন সুমন চাকমা। সমাবেশে প্রায় ৬ শতধিক নারী পুরুষ অংশগ্রহন করেন।

ctg protest rally3সমাবেশে ড. জিনবোধী ভিক্ষু তার বক্তব্যে বলেন, নোয়াখালী, বরিশাল সহ সমতলের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঙালিরা এসে পাহাড়িদের জায়গা জমি বেদখল করছে। পাহাড়ে গিয়ে তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস সাধন করছে। তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের হত্যা ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন।

তিনি আরো বলেন, রামুতে আওয়ামী-লীগ বিএনপি ও জামায়াতের লোকজন সম্মিলিতভাবে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা, লুটপাট ও পুড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে সেখানে নতুন মন্দির তৈরী করে দিলেও সেখানকার শত বছরের ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে গেছে।

নাইক্ষ্যংছড়ির আংক্ষ্যং পাড়ার বুমং কার্বারী বলেন, আওয়ামী-লীগ বিএনপি জামাত সহ দলমত নির্বিশেষে সাধারণ বাঙালিরা ভূমি দস্যুদের পক্ষ হয়ে পাহাড়িদের উচ্ছেদের জন্য বিভিন্নভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে। তারা পাহাড়িদের বাজারে পর্যন্ত যেতে দিচ্ছে না। ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে যেতে পারছে না। এছাড়াও ভূমি দস্যুরা কতিপয় বনবিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ করে সাধারণ পাহাড়িদের বিরুদ্ধে কথায় কথায় বন আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। পাহাড়িদের বসতভিটা বাগান-বাগিচা ভূমি দস্যুরা দখল করে নিচ্ছে।  ঢাকা চট্টগ্রামের বিভিন্ন বড় বড় বেসরকারী প্রতিষ্ঠান রাবার বাগানের নামে হাজার হাজার একর ভূমি বেদখল করছে এবং সাধারণ পাহাড়িদের উচ্ছেদ করছে।

অংগ্য মারমা বলেন, জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সেনা স্থাপনা নির্মাণের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো পাহাড়িদেরকে তাদের ব্যক্তিগত ও যৌথ মালিকানাধীন জমি থেকে উৎখাত করা এবং তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন ধ্বংস করে দেয়া। ব্যক্তিগত ও যৌথ মালিকানাধীন জমি কেড়ে নেয়ার ফলে পাহাড়িদেরকে নিজ দেশে পরবাসীর মতো জীর্ণশীর্ণ, অসহায় ও সম্বলহীন অবস্থায় রাখা হয়েছে। সেনা স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্ন অজুহাতে ভূমি বেদখল প্রক্রিয়া বন্ধ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে বেশ কয়েকটি বিপন্ন জাতিসত্তা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে রোয়াংছড়িতে বিজিবির সেক্টর সদর দপ্তর স্থাপনের নামে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাম জাদি মন্দির ও রাম মহাবিজয় মন্দিরের ১৫ একরসহ মন্দির-সংলগ্ন পাহাড়িদের মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাবের অনুমোদন বাতিল করা, রুমায় সেনাবাহিনীর গ্যারিসন সম্প্রসারণের জন্য ইতিমধ্যে গৃহীত জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, নাক্ষ্যংছড়িতে ভূমিদস্যুদের দ্বারা ভূমি বেদখল ও পাহাড়ি উচ্ছেদ বন্ধ করা এবং উচ্ছেদ হওয়া পাহাড়িদের নিজ জমিতে আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন ও চিহ্নিত ভূমি দস্যুদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া এবং বান্দরবানে চাক, ম্রো ও খুমিসহ বিপন্ন সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
————————–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More