বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে পানছড়িতে তিন সংগঠনের আলোচনা সভা
পানছড়ি প্রতিনিধি ।। সংবিধানের বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে আলোচনা সভা করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
আজ ৩০ জুন ২০২১, বুধবার বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী’র ১ দশক উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সকাল ১১ টায় ‘বাঙালি জাতীয়তা নয়, স্ব স্ব জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিতে হবে’, পর্যটন-উন্নয়নের নামে ৫ তারা হোটেল-সড়ক নির্মাণ ও বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ চলবে না, বন্ধ কর” এসব শ্লোগানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি কৃপায়ন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফের পানছড়ি উপজেলা ইউনিটের সংগঠক দারুন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ন সম্পাদক বরুন চাকমা ও উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস মঙ্গল চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা এবং পানছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি ত্রিশ্নাঙ্কর চাকমা।
বক্তারা বলেন, বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীতে উগ্র বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সরকার দেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের অস্তিত্বকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। দেশের বাঙালি ভিন্ন অপরাপর সকল জাতিসত্তাসমূহকে ধ্বংসের নীলনক্সা হিসেবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালের ৩০শে জুন তড়িঘড়ি করে পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাস করে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে শুধু বাঙালিরা বসবাস করে না। এদেশে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, খিয়াং, ম্রো, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতাল, ওরাঁও, মুনিপুরি, গারো, খাসিয়াসহ ৪৫টির অধিক সংখ্যালঘু জাতি্ও তাদের স্ব স্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ভাষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে বসবাস করছে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে এসব জাতিসত্তাগুলোর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে বাংলাদেশ একটি একক বাঙালি জাতির রাষ্ট্র হিসেবে ফ্যাসিবাদি চরিত্র ধারণ করেছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ উগ্র বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেওয়া এই সংশোধনী মেনে নেয়নি। আমাদেরকে বিতর্কিত এই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে পাহাড় ও সমতলে ঐক্যবদ্ধভাবে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে কথিত উন্নয়নের নামে প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখল ও পাহাড়ি উচ্ছেদের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, সম্প্রতি গুইমারার সিন্দুকছড়িতে সনে রঞ্জন ত্রিপুরার বাড়ি ভেঙে দিয়ে তার ভোগদখলীয় জমি বেদখল করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এর রেশ কাটতে না কাটতেই গতরাতে আবারো এক গ্রামবাসীর জুম ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আরেকজন গ্রামবাসীর জুম ঘর ভেঙে দেওয়ার হয়েছে বলে আমরা জানতে পারছি। তারা বলেন, শুধু সিন্দুকছড়িতে নয়, সাজেক, চিম্বুক পাহাড়সহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়িদের উচ্ছেদে সরকার ও তার নিয়োজিত প্রশাসন নানা পাঁয়তারা চলমান রেখেছে। সরকারের এই জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বক্তারা বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে দেশের সকল জাতিসত্তাসমূহকে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল, জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।