বিপ্লবী নেতা হো চি মিনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সাজেক ও খাগড়াছড়িতে আলোচনা সভা

0

সিএইচটিনিউজ.কম
220px-Ho_Chi_Minh_1946ভিয়েতনামের কম্যুনিস্ট বিপ্লবী নেতা হো চি মিনের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাঙামাটির সাজেক ও খাগড়াছড়িতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ০৩ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে সাজেকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুবফোরামের উদ্যোগে উজো বাজারের সংগঠনের কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় হো চি মিনের বিপ্লবী  জীবন নিয়ে আলোকপাত করেন ইউপিডিএফ সাজেক ইউনিট সংগঠক মিঠুন চাকমা।

তিনি বলেন, ভিয়েতনাম বিপ্লব পৃথিবীতে অধিকার আদায়ের আন্দোলনকামী সংগঠন-জাতি ও নিপীড়িত শ্রেনীসমূহের জন্য এক অনুসরণীয় ও শিক্ষনীয় দৃষ্টান্ত। ভিয়েতনাম বিপ্লবের মূল নেতৃত্বে ছিলেন হো চি মিন। ভিয়েতনামী ভাষায় হো চি মিন মানে হলো আলোর দিশারী। তার আসল নাম ছিলো নগুয়েন সিন চুঙ বা নগুয়েন ভ্যান কুঙ। তার ছদ্মনাম ছিলো নগুয়েন আই কুয়োক। তবে পরে হো চি মিন হিসেবেই তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ’আংকল হো’ হিসেবেও ভিয়েতনামে তিনি সবার কাছে পরিচিত।

হো চি মিনের বোঝার মত বয়স হলে হো চি মিন বুঝতে পারেন যে, তাদের দেশ ভিয়েতনাম বিদেশী শাসকের দখলে। ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়া নামে দেশসমূহকে তৎকালীন সময়ে ফ্রেঞ্চ বা ফ্রান্স তার কলোনী করে রেখেছিল। ১৮৫৯ সাল থেকেই ফ্রেঞ্চ শাসকগোষ্ঠী ভিয়েতনামকে কলোনী করে রেখে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক সকল দিক থেকে পদানত করে রেখেছিল। একটি জাতিসত্তাকে ধ্বংস করতে হলে প্রথমেই তার নৈতিক শক্তিকে দুর্বল করতে হয়। ফ্রেঞ্চ শাসকগোষ্ঠী ভিয়েতনামের জনগণের নৈতিক শক্তিকে দুর্বল করতে চেয়েছিল। কিন্তু অধিকার আদায়ের আন্দোলনকামীরা তাদের অধিকার আদায়ের লড়াইকে অব্যাহত রেখে নৈতিক মনোবলকে চাঙ্গা করে রেখেছিল।

হো চি মিন জীবনের প্রথমে সেই বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন। তিনি ফান থিয়েট শহরে আসলে সেখানে বিপ্লবীদের গোপন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হন। তিনি সেই সংগঠনের কর্মী হয়ে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘূরে প্রচার প্রচারণা চালাতেন। অত্যাচারী ফরাসী সরকারকে উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত শান্তি আসবে না বলে প্রচারণা চালাতেন। পরে তিনি ১৯১১ সালের দিকে একটি জাহাজে রাধুনির সহকারী দায়িত্ব পালন করে টানা তিনবছর বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করেন। ফ্রান্সে আসলে তিনি ফ্রেঞ্চ কম্যুনিস্ট পার্টির সাথে কাজ করেন। ১৯২৩ সালে তিনি মস্কোতে কম্যুনিস্ট আন্তর্জাতিকের কংগ্রেসে যোগদান করেন।

এরপর তারই নেতৃত্বে ১৯৩০ সালে গঠিত হয় ইন্দোচিন কম্যুনিস্ট পার্টি। বিপ্লবী কাজে জড়িত থাকার কারণে তিনি হঙকঙ কিছুদিন ও চীনে  ১৩ মাসের মতো কারান্তরীণ ছিলেন।

১৯৩৭ সালে তিনি চীনে এসে ভিয়েতনামী প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করতে শুরু করেন। ১৯৪১ সালে জাপান সা¤্রাজ্য ভিয়েতনাম দখল কওে নিলে তিনি জাপানের বিরুদ্ধে ভিয়েতমিন সংগঠনের মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করেন।  ১৯৪৫ সালে তার নেতৃত্বে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা ঘোষনা করা হয়।  ফ্রেঞ্চ শাসকগোষ্ঠী ভিয়েতনামের স্বাধীনতার ঘোষনাকে অস্বীকার করে এবং ভিয়েতনামের স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালায়। প্রতিরোধ সংগ্রামে হো চি মি নেতৃত্ব প্রদান করেন। ভিয়েতনামী বিপ্লবী বাহিনীর সাথে কুলিয়ে উঠতে না পেরে পরাশক্তিসমূহ ভিয়েতনামকে দুইভাগ করে দেয়।

এবার ঐক্যবদ্ধ ভিয়েতনাম গড়ার জন্য লড়াই শুরু হয়। আমেরিকা তার সৈন্যবাহিনী দিয়ে এই ঐক্যবদ্ধ ভিয়েতনাম গড়ার সংগ্রামকে দমন করার উদ্যোগ নেয়। হো চি মিনের নেতৃত্বে আবার লড়াই সংগঠিত হয়।

হো চি মিন বিষয়ে আলোচনার সময় মিঠুন চাকমা বলেন, অধিকার আদায় করতে হলে সুমহান বিপ্লবী আদর্শকে ধারণ কওে কঠোর পরিশ্রম কওে যেতে হয়। জনগণের সাথে থেকে কাজ করতে হয়। পার্বত্য জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে সফল করতে হলে বিপ্লবী হো চি মিনের জীবন থেকে শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন। হো চি মিন শুধু রাজনৈতিক চিন্তা চেতনাকে আত্মস্থ করে বিপ্লবে নেতৃত্ব দেননি। তিনি নিজে বিপ্লবী কাজে সক্রিয় থেকে প্রতিদিন জনগণের সাথে থেকে সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সত্যিকারভাবে যারা নিপীড়ন অত্যাচার ভূমি বেদখল থেকে মুক্তি চায় তাদেরকে অবশ্যই হো চি মিনের বিপ্লবী জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে খাগড়াছড়িতেও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরস্থ হুয়াঙ বোইও বা হলরুমে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মূল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র অন্যতম সংগঠক নতুন কুমার চাকমা। এছাড়া ইউপিডিএফ-এর প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমাও হো চি মিনের জীবনীর উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন।

আলোচনা শুরুর আগে ভিয়েতনাম বিপ্লবের সময় মুক্তিবাহিনী কর্তৃক দিয়েন বিয়েন ফু ও সায়গন দখলের ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

আলোচনা সভায় ভিয়েতনামের বিপ্লব থেকে শিক্ষা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকারহারা নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাওয়ার ছাত্র-যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

বিপ্লবী হো চি মিন এর জন্ম হয়েছিল ১৮৯০ সালের ১৯ মে। মধ্য ভিয়েতনামের নঘেআন প্রদেশের নামদান জেলার কিম লিয়েন নামে এক গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। । ১৯৬৯ সালের ০২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  তিনি ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ ভিয়েতনাম গঠনের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন।  ৩ সেপ্টেম্বর  হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে  তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More