বিলুপ্তির দাবি সত্ত্বেও থেমে নেই র‌্যাবের কার্যক্রম, এবার পুলিশের সাথে দ্বন্দ্ব

0

commentary।। সত্যদর্শী।।
নারায়নগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় সারা দেশে এলিট ফোর্স বলে কথিত র‌্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)-এর বিরুদ্ধে তীব্র জনমত গড়ে ওঠেছিল। এমনকী গণরোষের তীব্রতা দেখে র‌্যাব-এর স্রষ্টা বিএনপি পর্যন্ত সংস্থাটি বন্ধের দাবি করতে বাধ্য হয়। দলটির সভানেত্রী খালেদা ও তখনকার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফকরুদ্দিন আলমগীর প্রকাশ্য জনসভায় র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছেন। বুঝতে বাকী থাকে না এটি ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব হয়ে এবার নিজ স্রষ্টাকেও ছাড়ছে না। ফলে বিএনপিও সংস্থাটি বন্ধের দাবি জানাতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বড় আদর দিয়ে র‌্যাব’কে বাড়িয়ে তুলছে, আসলে অজান্তে খুঁড়ছে নিজের গর্তই! বিএনপি’র মত আওয়ামী লীগও ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হবে (চিরদিন কেউ ক্ষমতায় থাকে না)। সেদিন বিরোধী শিবিরে থেকে আওয়ামী লীগকেও কাতর স্বরে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন রূপী র‌্যাবকে বিলুপ্তি দাবি জানাতে হবে, হয়ত সেদিন বেশি দূরে নয়!

গতকাল বুধবার ২৬ অক্টোবর ডিএমপি (ঢাকা  মহানগর পুলিশ)-এর মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)-এর ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম দৃশ্যত র‌্যাবের কার্যক্রমের সমালোচনা করেছেন। র‌্যাব নিয়ে জনমনে অসন্তোষ বিশেষ করে রাজনৈতিক দলীয় কর্মীদের ছিল তীব্র আপত্তি। মানবাধিকার সংস্থাসমূহও র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে আসছিল। যদিও সাম্প্রতিক কালে জঙ্গী হামলা ও জঙ্গী দমন অভিযানের কারণে র‌্যাব বিলুপ্তির দাবিটি সাময়িকভাবে চাপা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনের ফলে বিষয়টি আবার সামনে চলে এসেছে। এবার খোদ পুলিশই র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। পুলিশের অভ্যন্তরে র‌্যাব সংস্থাটির ব্যাপারে গুরুতর আপত্তি ও অসন্তোষ রয়েছে, তা গত বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট হলো। এতে র‌্যাব নামক দানবসদৃশ খুনী সংস্থাটি বিলুপ্তির দাবি আরো জোরদার হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম গত শুক্রবারে র‌্যাব-এর প্রধান বেনজির আহম্মদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেয়া তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন। বিচারাধীন মামলার ব্যাপারে মন্তব্য করায় র‌্যাব প্রধান বেনজিরের সমালোচনাও করেছেন। মনিরুল ইসলাম র‌্যাবের তথ্যের সাথে পুলিশের সূত্রের তথ্যের মিল নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।

rab4

ইতিপূর্বে র‌্যাব প্রধান বেনজির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পুলিশ সদস্যদের বাড়াবাড়ির অভিযোগ এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে এ রকম আশঙ্কা ব্যক্ত করে পত্র দিয়েছিলেন। তাতে তিনি ডিউটিরত র‌্যাব সদস্যদের পুলিশ কর্তৃক মারধরের অভিযোগ আনেন। র‌্যাব পরিচয় জেনেও কোন জায়গায় পুলিশ সদস্যরা র‌্যাব সদস্যদের লাঠি ও রাইফেল দিয়ে মারধর করেছে বলে তিনি অভিযোগ দাখিল করেন। গতকালের ডিএমপি সদরে আয়োজিত পুলিশের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দু’টি সংস্থার দ্বন্দ্বের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটল।

পুলিশ সদর থেকে দু’টি সংস্থার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১০টি নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে। তাতে পুলিশ ও র‌্যাব’কে ভ্রাতৃসুলভ পেশাদারি সম্পর্ক বজায় রাখতে বলা হয়েছে। ডিউটিরত অবস্থায় অফিসারদের নিজেদের মধ্যে মারামারি না করতেও নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সতর্ক বাণীও উচ্চারণ করা হয়েছে।

দৃশ্যত পুলিশ সদরের ১০ নির্দেশনা জোড়াতালি দিয়ে বিতর্কিত র‌্যাব সংস্থাটিকে টিকিয়ে রাখার সরকারি প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। র‌্যাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীন পুলিশেরই একটি ভিন্ন সংস্থা হলেও এটির ব্যাপারে সাধারণ জনগণের মত পুলিশের লোকজনও ক্ষুব্ধ, তা প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। আসলে রাজনৈতিক কর্মীদের দমন পীড়নের জন্য বিএনপি সরকার এটি গঠন করে ক্রস ফায়ারের নামে বহু নিরপরাধ লোককে খুন করেছিল, যার বেশির ভাগই ছিল বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে বিএনপি’র দুর্নীতিসহ অনেক অনিয়মের সমালোচনা করলেও র‌্যাব গঠনের ব্যাপারে আশ্চর্য রকমের নিরব এবং র‌্যাবকে বিরোধী শিবির দমনের হাতিয়ার হিসেবে বেশ মুন্সিয়ানার সাথে ব্যবহার করছে। সংস্থাটির উর্ধ্বতনদের মন রক্ষার্থে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ শ্রাদ্ধ করে র‌্যাবকে হেলিকপ্টারসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আসলে তার কোন প্রয়োজন নেই। র‌্যাব-এর সদস্যরা নারায়নগঞ্জসহ বহু জায়গায় ভাড়াটে খুনী, ইয়াবা পাচার ও চোরাকারবারিতে যুক্ত হয়ে দেশের আইন শৃঙ্খলার বারোটা বাজিয়ে চলেছে, ঐসব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কোন কাজে আসছে না।

শুধু পুলিশ সদস্যদের হাতে কেন, বিভিন্ন স্থানে নানা সামাজিক অপরাধ ও চাঁদাবাজিতে জড়িত হবার কারণে সাধারণ এলাকাবাসীর হাতেও র‌্যাব সদস্যরা মারধরের শিকার হয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত কমিটি গঠন করে র‌্যাব সদস্যদের অপকর্মের তথ্য জনগণকে অবহিত করা এবং দোষীদের শাস্তি দিয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আর অবনতি ঘটতে না দেয়া। এবং অবিলম্বে সংস্থাটি বিলুপ্ত করা। ক্ষমতার দম্ভে মদমত্ত আওয়ামী লীগের চেলাচামুণ্ডাদের কর্ণকুহরে এসব কথা ঢুকবে না এটা জানা কথা। তবে অপকর্মেরও শেষ আছে, পাপ বাপকেও ছাড়ে না–এ সতর্ক বাণী জনগণের পক্ষে বারে বারে উচ্চারণ করে যেতে হবে।#
—————-

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More