বিলেইছড়ির ওরাছড়ি গ্রামের ধর্ষণ ও যৌন আক্রমণ বিষয়ে রাজা দেবাশীষ রায়ের ফেসবুক স্ট্যাটাস

0

[পার্বত্য রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ওরাছড়ি গ্রামের ধর্ষণ ও যৌন আক্রমণ বিষয়ে রাজা দেবাশীষ রায়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু এখানে তুলে ধরা হলো– সম্পাদক মণ্ডলী]

সাম্প্রতিক পার্বত্য চট্টগ্রামের বিলেইছরি উপজেলার ওরাছড়ী গ্রামের ধর্ষণ ও যৌন আক্রমণ

গতকাল দুপুরে – এখন থেকে ঘণ্টা আটেক আগে – গিয়েছিলাম রাঙামাটির সদর হাসপাতালে। ২২-শে জানুয়ারি ২০১৮ তারিখের ভোর-রাতে ধর্ষণ ও যৌন হামলার শিকার দুই বোনকে দেখতে ও তাদের সাথে কথা বলতে।

সাথে ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য প্রফেসর বাঞ্চিতা চাকমা ও সহধর্মিণী রাণী য়েন য়েন।

ঘটনায় আক্রান্তদের সাথে কথা বলাট সম্ভব হল “নিরাপত্তা” বাহিনীর বিশেষ পোশাকধারী ও ওয়াকি-টকি-ওয়ালা ও ওয়াকি-টকি-বিহীন বিশেষ পোশাক-বিহীন ব্যক্তিদের বিরোধিতার মুখে।

প্রথমে দর্শনার্থীদের সংখ্যা ছিল সমস্যা। ঠিক আছে। আমরা বললাম কেবল কয়েকজন পালা পালা করে যাবো। কেবল তিনজন যাবো, প্রথমে। প্রফেসর বাঞ্চিতা, রাণী য়েন য়েন ও আমি।

দ্বিতীয় বাধা ছিল ভাষা নিয়ে। কেন “জড়ায়ে-ফড়ায়ে“ ভাষায় কথা বলা হচ্ছে (অর্থাৎ মারমা ভাষা বুঝতে না পারায় তাঁদের অস্বস্তি ও বিরক্তি)। আমি বললাম, “মাতৃভাষায় কথা বলা মৌলিক অধিকার। আপনারা কি যিনি বাংলা বলতে জানেন না তাঁকে জোর করায়ে বাংলা বলাবেন?”

তৃতীয় বাধা ছিল আমাদের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলার অনুমতি আছে কি না, সেই প্রশ্নে। আমি বোললাম, চাকমা সার্কেলের প্রধান হিশেবে অবশ্যয় আমার অধিকার আছে আমার সার্কেলের অধিবাসীর খোঁজ-খবর নেওয়ার। আর মানিবাধিকারের বিষয়ে প্রফেসর বাঞ্চিতার রয়েছে দেশের যে কোন নাগরিকের মানবাধিকার বিষয়ে তদারকি করার। পালটা প্রশ্ন করলাম যে আমাদের দেখা করার ও কথা বলার বিপক্ষে কি কোন আইন-আদেশ আছে কিনা?

উত্তপ্ত ব্যক্তি পরামর্শ দিলেন, এস্পি বা ওসি সাহেবের অনুমতি নিতে। আমিও উত্তপ্তভাবে বললাম, তাঁদের আপত্তি থাকলে যেন তাঁরাই জানান আমাকে তাঁদের আপত্তির কথা। গরজ তাঁদের। আমাদের নয়। আমাদের অধিকার নেই সেটা দেখানোর দায়িত্ব তাঁদের। আমাদের অধিকার আছে সেটা দেখানোর দায়িত্ব আমাদের নয়। তারপর সেই ব্যক্তির আর দেখা মেলেনি।

দুই বোনের মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা যে আতঙ্কগ্রস্ত, তা স্পষ্ট। ভাগ্যিস রাণী য়েন য়েন মারমা ভাষা-ভাষী। এতে অন্তত জড়তা পুরোপুরি দূরীভূত না হলেও, তাঁরা কিছুটা মাত্রায় হলেও স্বস্তি বোধ করছিলেন।

তাঁদের ভাষ্য অনুসারে, যা আমি অনুবাদের মাধ্যমে জানলাম, তাঁদের একজন ধর্ষিত হয়েছেন দুইজন সেনা সদস্য দ্বারা (প্রাপ্ত বয়স্ক বড় বোন, যিনি কেবল মারমা ভাষায় কথা বললেন) এবং অপরজন যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছেন, একই ব্যক্তিদের দ্বারা (অপ্রাপ্ত-বয়স্ক ছোট বোন, যিনি কিছু বাংলা ও ভাঙ্গা-ভাঙ্গা চাকমা বলতে পারেন)।

তবে তাঁদের ভাষ্যের সাথে ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে রাঙামাটির প্রেস ক্লাবে দেয়া রাশেল মারমার সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের সাথে কোন মিল পেলাম না। তাঁরা সেই সংবাদ সম্মেলন ও এতে তাঁদের বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের উপস্থিতি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞাত। তাঁদের সাথে তাঁদের বাবা-মা এর কোন সংযোগ নেই।

তাঁরা ভিত-সন্ত্রস্ত। তাঁদের প্রয়োজন নিরাপত্তার। নির্ভয়ের। তাঁদের প্রয়োজন আইনি সহায়তার। দক্ষ দোভাষীর। এবং কোন ধরণের বাধা ও হস্তক্ষেপ ছাড়া যথাযথ তদন্ত, মামলা, দোষীদের শাস্তি ও তাঁদের পুনর্বাসন।

তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সকলের। সরকারের, পুলিশ সহ সকল নিরাপত্তা বাহিনীর, বিচারিক আদালতের, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এবং নাগরিক সমাজের। এতে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More