বোরকা পার্টির রিং লিডার অনিল চাকমা ওরফে খেলারামের ডায়েরী: সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে

0
নিজস্ব প্রতিবেদক, লক্ষীছড়ি
সিএইচটিনিউজ.কম

সেনাবাহিনীর সৃষ্ট ও মদদপুষ্ট বোরকা পার্টির রিং লিডার অনিল চাকমা ওরফে খেলারামের ডায়েরীর কিছু অংশ সিএইচটি নিউজ বাংলার হাতে এসেছেএতে তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও ইউপিডিএফ নেতা রুইখই মারমার হত্যার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে
খেলারাম গত ১৯ মে খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে এক হামলায় নিহত হয়এ ঘটনার বহু আগে ২০১০ সালের আগষ্ট মাসে তার নিজের হাতে লেখা এই ডায়েরী ইউপিডিএফের হস্তগত হয়
খেলারাম তার ডায়েরীতে তিনটি সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পরিকল্পনা লিখেছে (ভুল ইংরেজীতে)এ সব অপারেশনের কোড নেম, তারিখ, টার্গেট পয়েন্ট, হামলায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা, তাদের নাম, ব্যবহৃত অস্ত্রের সংখ্যা, পাসওয়ার্ড, আহত ও নিহত হলে সংকেত শব্দ, উইড্র হওয়ার নির্দেশের সংকেত শব্দ ইত্যাদি এতে লেখা রয়েছে
প্রথম পরিকল্পনাটি ছিল ইউপিডিএফ নেতা রুইখই মারমাকে খুন করা, যা ১০০% সফলহয়েছে বলে ডায়েরীতে উল্লেখ করা হয়েছেএই সন্ত্রাসী এ্যকশনের কোড নেম দেয়া হয়েছে অপারেশন কোবরাটার্গেট পয়েন্ট লেখা হয়েছে ফিনিশিং এ্যকশনএ্যকশন শুরুর তারিখ ১/১০/২০০৯ ও শেষ হওয়ার তারিখ ২/১০/২০০৯

 

উল্লেখ্য, ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা ওই দিন অর্থাৎ ২ অক্টোবর ২০০৯ লক্ষ্মীছড়ির বর্মাছড়িতে বোরকা পার্টির সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় শহীদ হন
ডায়েরীতে উল্লেখিত তথ্য মতে, রুইখই মারমার খুনের অপারেশনে সজলের নেতৃত্বে ৪ জন অংশ নেয়এদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী নামে একজন বাঙালির নামও উল্লেখ রয়েছেঅস্ত্র ব্যবহার করা হয় ৪টি
দ্বিতীয় সন্ত্রাসী পরিকল্পনা
খেলারামের দ্বিতীয় সন্ত্রাসী পরিকল্পনার নাম দেয়া হয়েছে অপারেশন সীতাকুণ্ডটার্গেট পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে ফর ফ্রি এরিয়াঅর্থাৎ এলাকা সম্প্রসারণ করাএই পরিকল্পনা মোতাবেক ৭টি অস্ত্র নিয়ে বোরকারা ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ মানিকছড়ির দিকে যায়কিন্তু এলাকাবাসী ও ইউপিডিএফের আক্রমণের মুখে তারা সকল অস্ত্র ফেলে ৬ এপ্রিল পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়
তাই ডায়েরীতে রেজাল্টকলামে লেখা হয়েছে  Ô100% zero and loss of all trees and areaÕ.Tree বলতে এখানে বন্দুক বোঝানো হয়েছে
তৃতীয় সন্ত্রাসী পরিকল্পনা
তার তৃতীয় সন্ত্রাসী পরিকল্পনার গালভরা কোড নেম হলো ‘Black Cat’টার্গেট পয়েন্ট লেখা হয়েছে For Free Areaম্যান পাওয়ার ১০ জনগৌতম নামে খেলারামই এই সন্ত্রাসী এ্যকশনে নেতৃত্ব দেয়
এই পরিকল্পনা মোতাবেক বোরকারা ২০১০ সালের ২ আগষ্ট বর্মাছড়িতে অবস্থান নেয়তখন তাদের হাতে ছিল মোট ১০টি অস্ত্রপাসওয়ার্ড ছিল রাম‘, ফায়ার ওপেন হবে ফায়ারবললে; ‘উজো উজোবললে ফায়ার বন্ধ করতে হবে; আহত হলে সংকেত শব্দ হলো পানি পানি‘; নিহত হলে বিজোন বিজোন‘; আর উইড্র হওয়ার সংকেত হলো মার মার

কিন্তু খেলারাম এই পরিকল্পনার ফলাফল প্রাপ্ত ডায়েরীতে লিখতে পারেনিকারণ তাদের তথাকথিত অপারেশন চলার সময়ই জনগণের ব্যাপক প্রতিরোধের কবলে পড়ে ডায়েরীসহ তার ব্যাকপ্যাক খোয়া যায়পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে তারা জানপ্রাণ নিয়ে কোন মতে লক্ষ্মীছড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়

ইউপিডিএফের এক নেতা সিএইচটি নিউজ বাংলাকে বলেন, ‘আজ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন বোরকা সদস্য আমাদের কাছে এসে হাত মিলিয়েছেতাদের তথ্য মতে, খেলারাম নিয়মিত লক্ষ্মীছড়ির জোন কমান্ডার ও সন্তু লারমার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতোতারা এও বলেছে যে, লক্ষ্মীছড়ির আগের জোন কমান্ডার লে: ক: শরীফুল ইসলাম বেশ কয়েকবার বোরকাদের আস্তানায় গিয়েছিল এবং বোরকাদের বন্দুকগুলো নেড়েচেড়ে দেখে বলতো “এসব দিয়ে হবে না, আরও উন্নত হাতিয়ার লাগবে তোমাদের”
ইউপিডিএফ নেতা সেনা-সৃষ্ট বোরকাদের সাথে সন্তু লারমার মাখামাখিকে জখন্য ব্যাপারবলে মন্তব্য করেছেনতিনি প্রশ্ন করে বলেন, অনিল চাকমা ওরফে খেলারামের মতো সেনাবাহিনীর চর, সন্ত্রাসী ও খুনীকে কিভাবে তিনি নিজ দলে আশ্রয় দিতে পারেন? তিনি গণশত্রু বোরকাদের সমর্থন না দেয়ার জন্য সন্তু গ্রুপের প্রতি আহ্বান জানান
অনিল চাকমার নেতৃত্বে ২০০৯ সাল থেকে  লক্ষ্মীছড়ি ও মানিকছড়ি এলাকা থেকে ২৩ জনকে অপহরণ, ২ জনকে হত্যা, লক্ষ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় ও ব্যাপক চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য, অনিল চাকমা ওরফে খেলারাম নিহত হওয়ার পর জেএসএস (সন্তু গ্রুপ) তাকে তাদের দলের লক্ষ্মীছড়ি শাখার আহ্বায়ক হিসেবে উল্লেখ করে সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়েছে

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More