বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের মানববন্ধন
খাগড়াছড়ি : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীর উপর চাকপাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ধাম্মা ওয়াসা(উঃ গাইন্দা) ভিক্ষুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ ও খাগড়াছড়ি বৌদ্ধ সম্প্রদায়। এতে বিভিন্ন বিহারের বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ শত শত নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধন থেকে খাগড়াছড়ি জেলায় আগামী বৈশাখী পূর্ণিমা অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ মে) সকাল ৮:৩০টায় খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে শ্রীমৎ মুক্তিপদ থের’র সঞ্চালনায় ও পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত অগ্রজ্যোতি মহাথের’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, পেরাছড়া ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা, মারমা ঐক্য পরিষদের সভাপতি কংচাইরী মাষ্টার, জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির নেতা সন্তোষিত চাকমা, বাংলাদেশ ভিক্ষু এসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্রীমৎ ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ মহাথের, খাগড়াছড়ি ভিক্ষু এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক শ্রীমৎ ভদন্ত ইন্দ্রবংশ ভিক্ষু ও খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি জীতেন বড়ুয়া।
মানববন্ধনে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা বলেন, বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য আমাদেরকে হতাশ করেছে। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার অচিরেই ক্ষমা চাওয়া দরকার। অন্যথায় আপনার পদত্যাগ করা উচিত।
তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, অত্যন্ত মর্মাহত। যেখানে একজন শান্তিকামী বৌদ্ধ ভিক্ষুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনার তদন্ত না করেই খুনের ঘটনায় ‘স্বজনরা জড়িত’ রয়েছে মন্তব্য করে মূল আসামীদের আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনি কি বিবাদী, না সাক্ষী? নাহলে আপনি কিভাবে জানলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু খুনের ঘটনায় স্বজনরা জড়িত? তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
ভদন্ত অগ্রজ্যোতি মহাথের বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে অনতিবিলম্বে এই বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্ম শান্তির ধর্ম। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সংসার ত্যাগ করে বিশ্ব মানব কল্যাণে সর্বদা নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু নাইক্ষ্যংছড়ির চাকপাড়ার ৭০ বছর বয়সী শান্তিকামী ধাম্মাওয়াসা (উ:গাইন্দা) ভিক্ষুকে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান আমরা এদেশে সংখ্যালঘু। প্রতিনিয়তই আমাদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তাই আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি জেলায় আগামী বৈশাখী পুর্ণিমা অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেন।
বক্তারা অবিলম্বে ভিক্ষু হত্যার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানান ।
মানববন্ধন শেষে তারা খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এতে ভদন্ত উঃগাইন্দা ভিক্ষু ওরফে উঃধাম্মা ওয়াসাকে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তিন পার্বত্য জেলায় বেদখলকৃত বৌদ্ধ মন্দির ও অনাথ আশ্রম অবিলম্বে উদ্ধার করা ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সরকারীভাবে তালিকা করে অবিলম্বে বহিষ্কার করাসহ ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন।
—————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।