ভাইবোনছড়ার মুনীগ্রামে বিনাধান-১৬ এর প্রচার ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মাঠ দিবস পালিত
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাদ্য নিরাপত্তা বিশ্বব্যাপী একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। ক্রমবর্ধমান বেশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন আজ হুমকির পথে। এসব কিছু বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীরা আমন মৌসুমে চাষ উপযোগী উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান বিনাধান-১৬ উদ্ভাবন করেছেন। গত ১৭ অক্টোবর খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের মুনীগ্রাম পাড়ায় উক্ত জাতের প্রচার ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিনা উপকেন্দ্র, খাগড়াছড়ি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর যৌথ উদ্যেগে মাঠ দিবস ও শস্য কর্তণের আয়োজন করা হয়। এতে অর্থায়ন করেছে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড।
বিনাধান-১৬ এর চাষী সুরভী চাকমা বলেন, মাত্র ২০ দিন বয়সে চারা রোপণ করে ধান এত আগাম পেকে যাবে তিনি ভাবেন নি; অথচ ফলনও বেশী হয়েছে। তিনি আগামীতেও এটি আবাদ করবেন বলে জানান।
ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পরিমল ত্রিপুরা বলেন, কৃষি বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টার ফলে কৃষকেরা নিত্য নতুন ফসলের জাত ও প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হচ্ছেন। এতে করে এক দিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে অন্য দিকে কৃষি পরিবারগুলির আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটছে। তিনি ভব্যিষতেও এমন নতুন ও উন্নত প্রযুক্তি কৃষকদের হাতে তুলে দিতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা বলেন, দেশে কৃষিক্ষেত্রের আজ এ আমুল পরিবর্তন কৃষক, কৃষি বিজ্ঞানী ও মাঠ পর্যায়ের সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলেই সম্ভব হয়েছে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ। তিনি ফসলের উন্নত জাতের আবাদের পাশাপাশি যান্ত্রীকরণের উন্নত প্রযুক্তির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো: আবুল কাশেম বলেন, ফসলের নিবিড়তা বাড়ানোর জন্য জাতটি খুবই উপযোগী। তাছাড়া চিকন চাল হওয়াতে কৃষকেরা জাতটির চাষ করে অধিক লাভবান হবেন।
উপ-পরিচালক তরুন ভট্রাচার্য বলেন, বিনাধান-১৬ জাতটির জীবনকাল স্বল্প হওয়ায় এটি কাটার পর আগাম শীত সব্জি, ডাল বা তেল ফসল করার সুযোগ রয়েছে। মুনীপাড়ার বিনাধান-১৬ এর প্রদর্শনী প্লটে ১১০ দিনে বিঘা প্রতি ২২ মণ ফলন হয়েছে বলে তিনি জানান। কিন্তু যথোপযুক্ত পরিচর্যায় জাতটি বিঘা প্রতি ২২ মণের অধিক এবং আরো ৫ থেকে ৭ দিন আগাম ফলন দিতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কৃষকদের অনিয়ন্ত্রিত বালাইনাশক ও সার ব্যবহারের প্রতি তিনি সতর্ক হবার আহ্বান করেন এবং জৈব বালাইনাশক ও সার ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
বিনা’র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুশান চৌহান জানান, দিন দিন দেশে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে কিস্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এত বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির যোগান নিশ্চত করতে সীমিত জমিতে স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল কৃষকদেরকেই নির্বাচন করতে হবে। বিনাধান-১৬ অনেক কম জীবনকাল সম্পন্ন ও আলোক অসংবেদনশীল; এ জাতের গাছ খাটো ও শক্ত বলে হেলে পড়ে না।
তিনি আরো জানান, খাগড়াছড়িতে ফসলের নিবিড়তা মাত্র ১.৫% যেখানে সমতল জেলা সমূহে তা ২% এর অধিক। ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি এবং উন্নত শস্য বিন্যাস সম্প্রসারণে বিনা কাজ করছে। খাগড়াছড়িতে চলতি আমন মৌসুমে বিনাধান-১৬ এর পরীক্ষামূলক এমন ৯ টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়। এছাড়াও ১০ জন কৃষককে ১০ কেজি করে শুধুমাত্র বীজ সহায়তা হিসেবে জাতটি চাষের জন্য বিতরণ করা হয়।
বিকাল ৩.০০ ঘটিকায় আয়োজিত এ মাঠ দিবসে মুনীগ্রাম ও তার আশেপাশের এলাকার প্রায় ১৫০ জন কৃষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
——————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।