ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক, তবে বিভ্রান্তিমুক্ত নয়: ইউপিডিএফ
ডেস্ক রিপোর্ট
সিএইচটিনিউজ.কম
ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সভাপতি প্রসিত খীসা আজ ৩১ জুলাই মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে গতকাল আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ এর সংশোধনী চূড়ান্তকরণকে ইতিবাচক আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘তবে এই আইনে এখনো কিছু অস্বচ্ছতা, অসঙ্গতি ও অগণতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতিফলন রয়ে গেছে, যার ফলে প্রকৃত ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির সময় তা চরম জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।‘
ইউপিডিএফ নেতা বলেন, ‘ভূমি কমিশন আইনের ১৩টি সংশোধনী প্রস্তাব পত্রিকায় প্রকশিত রিপোর্ট মোতাবেক চূড়ান্ত করা হলেও, এসব সংশোধনীর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২(ছ) ধারা সংশোধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি‘র কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এর ফলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত ভূমি সংক্রান্ত রীতি ও পদ্ধতিকে যথার্থভাবে সংজ্ঞায়িত করা হলে তার ভিত্তিতে সম্প্রদায়গত যৌথ মালিকানা পুনঃস্থাপিত হয়, অথচ বাংলাদেশ সংবিধানে তার কোন স্বীকৃতি নেই। ফলে সংবিধানের ১৩ নং অনুচ্ছেদের সাথে কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।
‘দ্বিতীয়ত, কমিশন আইনের ৭(৫) ধারায় বিধৃত চেয়ারম্যানের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা গৃহীত সংশোধনী প্রস্তাবে খর্ব করা হলেও, এই ধারাটি পুরোপুরি গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠেনি। কারণ গৃহীত সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে “তবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব না হলে চেয়ারম্যানসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের গৃহীত সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে।” অর্থাৎ কোন সিদ্ধান্ত কমিশনের সিদ্ধান্ত হতে হলে তাতে অবশ্যই চেয়ারম্যানের সম্মতি থাকতে হবে, অন্য কথায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সিদ্ধান্ত কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে না, যদি তাতে কমিশন চেয়ারম্যানের সম্মতি না থাকে। কাজেই এটা পরিস্কার যে, কমিশনে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কমিশন চেয়ারম্যানের সম্মতি আগের মতোই বাধ্যতামূলক থেকে যাচ্ছে। এর ফলে কার্যেক্ষেত্রে অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে বাধ্য। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, এ ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে তা নিরসনের পন্থা কী হবে তা ভূমি কমিশন আইনে কোথাও উল্লেখ নেই। এক কথায়, কমিশন আইনের ৭(৫) ধারা সংশোধনের পরও তা যেই লাউ সেই কদু‘র মতো থেকে যাবে।‘
ইউপিডিএফ নেতা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ঐতিহ্যগতভাবে ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত হলেন হেডম্যান ও কার্বারীরা। অথচ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কমিশন আইনে তাদের জন্য কোন ভূমিকা রাখা হয়নি।
প্রসিত খীসা পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধানের স্বার্থে সংবিধানে প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি প্রদান, ভূমি কমিশন আইনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি‘র যথাযথ ব্যাখ্যা, ৭(৫) ধারাকে পুরোপুরি গণতান্ত্রিক করা এবং ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির শুনানীতে হেডম্যান ও কার্বারীদের লিখিত মতামত গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান।