ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না করা পার্বত্য চট্টগ্রামে সহিংসতার কারণ : অ্যামনেস্টি
গতকাল মঙ্গলবার অ্যামনেস্টির প্রকাশিত “পুশড টু দ্য এজ” বা “কিনারায় ঠেলে দেওয়া” শীর্ষক নতুন প্রতিবেদনে এ জন্য বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করা হয়। অ্যামনেস্টি বলেছে, ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেই বর্তমান সরকার এখনো পদক্ষেপ নিতে পারে। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য অ্যামনেস্টি আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোকে তাদের ইশতেহারে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অঙ্গীকার ঘোষণারও আহ্বান জানিয়েছে।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, পাহাড়ি ও বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের সবাই ভূমি বিষয়ক সমস্যাকেই ওই অঞ্চলের এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এতে বলা হয়, পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে ভূমি বিরোধের পাশাপাশি সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল সম্প্রসারণ এবং সেনা ছাউনি নির্মাণ ও সেনানিবাস সম্প্রসারণের কারণেও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রথাগত চাষাবাদের জমির সংকোচন অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্বত্য তিন জেলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকাকে সরকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেখানকার পাহাড়ি বাসিন্দাদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। সেনানিবাস সম্প্রসারণের বিষয়ে বলা হয় যে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সেনানিবাসের সম্প্রসারণ ঘটাতে যে নয় হাজার ৫৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, তা সম্পন্ন হলে প্রায় পাঁচ হাজার পাহাড়ি পরিবার উচ্ছেদের শিকার হবে।
পাহাড়িদের অধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ২০১১ সালে ওই অঞ্চল সফরের পর যে প্রতিবেদন দেন, তার উদ্ধৃতি দিয়ে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনো বাংলাদেশের সবচেয়ে সামরিকীকৃত অঞ্চল। জাতিসংঘের র্যাপোর্টিয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের সেনাবাহিনীর এক-তৃতীয়াংশই মোতায়েন রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে।
রাঙামাটিতে পাহাড়ি ও বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের ভূমি বিরোধ সহিংস রূপ নেওয়ার একাধিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে অ্যামনেস্টির গবেষকেরা পাহাড়ি বাসিন্দাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন, পাহাড়ি গোষ্ঠীগুলো সেনাবাহিনীকে বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করে।
অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, দীর্ঘ সংঘাতকালে শরণার্থী এবং দেশের ভেতরে বাস্তুচ্যুত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের কাজে এখনো স্থবিরতা রয়েছে। সংস্থার হিসাবে এখনো পুনর্বাসনের অপেক্ষায় আছে প্রায় ৯০ হাজারের মতো অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত পাহাড়ি পরিবার।
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ে অ্যামনেস্টির গবেষক এন্ড্রু অ্যারুটি বলেন, ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বর্তমানে যে নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে, তার কারণে সরকারের সেখানে দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। (সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো # অ্যামনেস্টির মূল প্রতিবেদন)