ভূমি বেদখল, গ্রেফতার-নির্যাতনের প্রতিবাদে লক্ষ্মীছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ
সিএইচটি নিউজ ডটকম
লক্ষ্মীছড়ি : খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি মনাদং পাড়া, বক্রি পাড়া ও রামগড়ের হাফছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি বেদখল, অন্যায়ভাবে গ্রেফতার-নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ ১২ আগস্ট ২০১৫, বুধবার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় পৃথক পৃথক জায়গায় সমাবেশ করেছে লক্ষ্মীছড়ি ভূমি রক্ষা কমিটি। উপজেলার ১নং সদর ইউনিয়নের বাদী পাড়া ও দুল্যাতলী ইউনিয়নের দেওয়ান পাড়ায় এসব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার দুপুর ১২টায় বাদি পাড়ায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে লক্ষীছড়ি ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য নিবারণ চাকমার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সাথোয়াই মারমা। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য ও জনপ্রতিনিধি নিসাইপ্রু মারমা, স্থানীয় মুরুব্বী মংহ্লাপ্রু মারমা, লক্ষীছড়ি সদর ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ড এর মহিলা জনপ্রতিনিধি মেরিনা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ফটিকছড়ি থানা শাখার সভাপতি হ্লাচিংমং মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রিপন চাকমা, ইউপিডিএফ এর লক্ষীছড়ি থানার সংগঠক আপ্রুসি মারমা।
সমাবেশে ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য নিসাইপ্রু মারমা বলেন, লক্ষীছড়ি থানার ২১৭ ও ২২০ নং জারুলছড়ি, ময়ুরখিল মৌজায় প্রায় ৫০০ একরের অধিক জায়গা সেটলার বাঙালি এবং অনিস কোম্পানী ও গাজী কোম্পানীসহ বিভিন্ন কোম্পানী বেদখল করেছে। রান্যামা ছড়া ও বক্কেছড়ায় আনিস কোম্পানীসহ বিভিন্ন কোম্পানী ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র করছে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও বর্মাছড়ি মৌজার হেডম্যান সাথোইয়াই মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমির মালিক হলো হেডম্যান। এখানে সমতলের মতো ভূমি ব্যবস্থাপনা নয়, এখানকার ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ আলাদা। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথাগতভাবে বংশ পরম্পরায় ভূমি ভোগ দখল করে আসছে এখানকার জনগণ। তাই হেডম্যানদেরকে ভূমি রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রামে সম্পৃক্ত হতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত উন্নয়নের নামে-বেনামে ভূমি বেদখল করে চলেছে সরকার-সেনা-বিজিবি-সেটলাররা। নিজেদের ভুমি রক্ষার জন্য নিজেদেরকে সংগ্রাম করতে হবে।
সমাবেশ থেকে বক্তারা মানিকছড়ির মনাদং পাড়া, বক্রি পাড়া ও হাফছড়িতে ভূমি রক্ষার যে আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে অবিলম্বে এসব এলাকায় ভূমি বেদখল বন্ধের দাবি জানান। সমাবেশ শেষে সংক্ষিপ্ত মিছিল বের করা হয়।
এছাড়া পৃথক আর একটি সমাবেশ দুল্যাতলী ইউনিয়নের দেওয়ান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে দেওয়ান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কৈলাস মহাজন পাড়ার কার্বারী কুসুমতারা চাকমা। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন, দুল্যাতলী ইউপির ৭, ৮ ,৯ নং ওয়ার্ড এর মহিলা মেম্বার রত্না চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দুল্যাতলী ইউনিয়নের সদস্য সচিব দয়াধন চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য রূপেশ চাকমা।
বক্তরা মানিকছড়ির মনাদং পাড়া, বক্রি পাড়া ও রামগড়ের হাফছড়িতে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেটলার বাঙালি কর্তৃক ভূমি বেদখলের প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, ওইসব এলাকা থেকে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করেতে সেনাবাহিনী ভূমি বেদখলে সেটলারদের সহযোগিতা দিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে এলাকার কার্বারী, মেম্বার সহ সাধাণ গ্রামবাসীদের ধরপাকড় এবং প্রতিনিয়ত ঘরবাড়ি তল্লাশি ও হয়রানি করা হচ্ছে। পাহাড়িরা যাতে ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারে সেজন্য সেনারা সাধারন লোকজনকে ধরে নিয়ে হুমকি-ধামকি ও নির্যাতন চালাচ্ছে।
বক্তারা অবিলম্বে মানিকছড়ি, রামগড়সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল বন্ধ ও অন্যায় ধরপাকড়, হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
————————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।