মহান মে দিবস আজ
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকেরা যুক্তিযুক্ত শ্রমঘণ্টা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ ও মানবিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। তারপর ১২৭ বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র নিরাপদ হয়নি। একের পর এক দুর্ঘটনায় তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা প্রাণ হারাচ্ছেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে জীবিকাহীন হয়ে পড়ছেন। এ মুহুর্তে সাভারের বিধ্বস্ত ভবনটির চারপাশে শত শত মানুষকে চিৎকার করে বলতে হচ্ছে, তাঁরা স্বজনের লাশ চান। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় বড় মর্মান্তিকভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে একটি বিষয়: বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের জীবন কর্মক্ষেত্রে এতটাই নিরাপত্তাহীন যে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর পরও তাঁদের লাশ স্বজনদের কাছে পৌঁছার নিশ্চয়তাটুকুও নেই।প্রতিবছর আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস আসে, কিন্তু এ দেশের শ্রমিকেরা থেকে যায় মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। ন্যায্য মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, মানুষের মতো সদাচরণ পাওয়া-শ্রমিকদের এসব দাবির প্রতি বস্তুত কর্ণপাত করা হয় না। এ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী খাত হিসেবে যতটা উজ্জ্বল, এ শিল্পের শ্রমিকেরা ততটাই নিষ্প্রভ। অথচ এ শিল্পের মুনাফার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান এই শ্রমিকদের সস্তা শ্রম। তৈরি পোশাকশিল্পে ব্যবহূত সব যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের থেকে সস্তা এই শ্রমিকদের প্রাণ! এই শিল্পের মালিকদের ক্ষমতা, প্রভাব ও প্রতিপত্তি এত প্রবল যে দেশের কোনো আইনকানুনই তাঁদের বেলায় কার্যকর হয় না। নইলে গত নভেম্বরে তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিকের মৃত্যুর পর গঠিত টাস্কফোর্স কেন নিষ্ফল, অকার্যকর প্রমাণিত হলো? এখন, রানা প্লাজার বিরাট ট্র্যাজেডির পর বিজিএমইএ আবারও নিজেদের রক্ষা করতে লোক দেখানো নানা পদক্ষেপের কথা বলছে। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলেই তারা এসব ভুলে আপন স্বভাবে ফিরে যাবে-শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা তাদের মনে থাকবে না, আবার একটি দুর্ঘটনায় শত শত প্রাণহানির আগ পর্যন্ত।