মহান সাধক বনভান্তের প্রথম মহাপ্রয়াণ বার্ষিকী আজ
রাঙামাটি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙামাটির রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ পরম পূজ্য আর্য শ্রাবক মহান সাধক অর্হৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের প্রথম মহাপ্রয়াণ বার্ষিকী আজ। গত বছর ৩০ জানুয়ারী রাজধানী ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে।
এ উপলক্ষ্যে রাঙামাটি রাজবন বিহারে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজবনবিহারে বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে বলে রাজবন বিহার সূত্রে জানা গেছে।
আজ বুধবার সকাল ৬টায় বুদ্ধ পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়। অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে বনভান্তের পবিত্র দেহে পুস্পাঞ্জলিঅর্পণ, ভিক্ষুসংঘের প্রাত:রাশ, বুদ্ধপূজা, পূজনীয় ভিক্ষুসংঘের মঞ্চে আগমণ, ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশন, পঞ্চশীল প্রার্থনা, বুদ্ধমূর্তি দান, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান, উৎসর্গ, ধর্মসভা, পূজ্য বনভান্তের ধর্মীয় দেশনা, বিশেষপ্রার্থনা, আকাশ প্রদীপ উত্তোলনসহ বিস্তারিত কর্মসূচি।
মহান সাধক বনভান্তে ১৯৪৯ সালে ২৯ বছর বয়সে চট্টগ্রামের নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন। সেখানে কিছু সময় ধ্যান সাধনার পদ্ধতি শেখার পর তিনি রাঙামাটির ধনপাদার গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি মছা-মাছির উপদ্রব সহ্য করে, বাঘ ভালুক, সাপ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণীর ভয় উপো করে, রোদ-শীত-ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে একাকী বেশ কয়েক বছর কঠোর তপশ্চ্যাচরণ করেন। পরে কাপ্তাই বাঁধের পানিতে উক্ত জনপদ পানিতে তলিয়ে গেলে এক উপাসক তাকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় আমন্ত্রণ করে নিয়ে যান। সেখানেও তিনি লোকালয় থেকে দূরে গহীন বনে তার ধ্যান সাধনা অব্যাহত রাখেন। এখানে থাকার সময়ই তিনি বনভান্তে নামে পরিচিতি পান।
১৯৭১ সালে কিছু উপাসক তাকে লংগুদু আমন্ত্রণ করে নিয়ে যান। ১৯৭৬ সালে তিনি রাঙামাটিতে রাজবন বিহারে চলে আসেন। চাকমা রাজমাতা বিনীতা রায় ও ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ করে সেখানে নিয়ে যান এবং কয়েক শত একর জমি দান করে রাজ বন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বুদ্ধ ধর্মের পুনর্জাগরণে ও প্রচার-প্রসারে মহান সাধক বনভান্তের অবদান অপরিসীম। তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে গৌতম বুদ্ধ সময়ের পুণ্যাশীলা বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দানোৎসব চালু করেন। সেই পর থেকে প্রতি বছর রাজ বনবিহারে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
বনভান্তে কঠোর ধ্যানের মাধ্যমে নির্বাণ সাক্ষাত করে অর্হত্ত্ব লাভ করেছেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এছাড়া তিনি ঋদ্ধি শক্তির অধিকারী বলেও মনে করা হয়। তার মতো অর্হৎদের আবির্ভাব পৃথিবীতে দুর্লভ। তিনি আজীবন গৌতম বুদ্ধের অহিংসা, মৈত্রী ও করুণার বাণী প্রচার করে গেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরকে সদ্ধর্মে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট অবদান রেখেছেন। এজন্য তিনি অনাগত শত শত হাজার হাজার বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন এবং বুদ্ধনীতি পালনে ও নির্বাণ লাভেচ্ছুদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।