মহালছড়িতে ইউপিডিএফসহ ৪ সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ
সিএইচটিনিউজ.কম
নিজস্ব প্রতিবেদক, মহালছড়ি: রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার বগাছড়িতে পাহাড়ি গ্রামে সেটলার হামলা, বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও কাপ্তাইয়ে উমাচিং মারমাকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে মহালছড়িতে ইউপিডিএফ সহ ৪ সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। বৃহস্পতিবার ১৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় মহালছড়ি’র বাবু পাড়ায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মহালছড়ি শাখার উদ্যোগে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম মহালছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি পলাশ চাকমা’র সঞ্চালনায় এবং গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সম্পাদক সর্বানন্দ চাকমা’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ মহালছড়ি উপজেলা সমন্বয়ক অলকেশ চাকমা, পার্বত্য নারী সংঘের সভানেত্রী সোনালী চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহবায়ক জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ মহালছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি তপন চাকমা প্রমূখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিজয় দিবসের দিন বগাছড়িতে পাহাড়ি গ্রামে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, বাঙালিরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের ৩টি গ্রামে ৫০টি বসতবাড়ি ও ৭টি দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বাঙ্গালীরা একটি বৌদ্ধ বিহারে হামলা, ধর্মীয় গুরুকে মারধর ও বুদ্ধমূর্তি লুট করেছে।
বক্তারা বলেন, সেটলার কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারী ধর্ষণ, খুন ও সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। কাপ্তাইয়ে উমাসিং মারমা(ছবি)-কে ধর্ষণের পর গলাকেটে নির্মমভাবে হত্যা ও বগাছড়িতে পাহাড়ি গ্রামের হামলার ঘটনা পাহাড়ি জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
বক্তারা সরকারের দোষারোপ করে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এই বাংলাদেশে নানা সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু কোন সরকারই পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের মঙ্গলের জন্য এগিয়ে আসেনি। এই দেশের শাসকশ্রেণী পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগণসহ দেশের সাধারণ জনগণকে বিভিন্নভাবে শোষণ-নির্যাতন চালিয়ে দেশ শাসন করছে। এই শাসকচক্র পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ি জনগণকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য কখনো ভূমি বেদখল, কখনো পাহাড়ি নারী নির্যাতন-হত্যা, কখনো সাম্প্রদায়িক হামলা কিংবা কখনো কখনো পাহাড়ি দালালদের দিয়ে আন্তঃজাতিগত বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, অবিলম্বে কাপ্তাইয়ে উমাচিং মারমা’র হত্যাকারী ও পাহাড়ি বসতিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত সেটলারদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও হামলা বন্ধ করার দাবি জানান।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বাবুপাড়া থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে মহালছড়ি বাজারের পেপারবোর্ড পর্যন্ত গিয়ে ঘুরে এসে বাবুপাড়ায় এসে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন সকালে নান্যাচর উপজেলার বগাছড়িতে আনারস বাগান ও সেগুন গাছ কেটে ফেলার অভিযোগে সেটলাররা পাহাড়িদের গ্রামে হামলা চালিয়ে বসতবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করে।
—————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।