মহালছড়িতে বেড়েই চলেছে নারী নির্যাতন

0

সিএইচটিনিউজ.কম ডেস্ক:
Narinirjationমহালছড়িতে নারী অপহরণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মতো অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরাধীরা কোনো না কোনো উপায়ে অথবা এলাকার প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস পাচ্ছে বলে অভিজ্ঞমহরের ধারণা।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার শান্তিনগর গ্রামের মো. জাফরের কন্যা মোছাম্মৎ বিলকিস আক্তার (১৮) কে বাড়ি থেকে তিন সন্তানের জনক মো. রঞ্জু হামিদ (২৮) জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করার ৫ দিন পর স্বামীর বাড়িতে শারীরিক নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ করেছে মেয়েটির পরিবার। গত ২৬ জানুয়ারি রোববার বিকাল ২টার সময় চৌংড়াছড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। থানায় মামলা হওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত কোনো আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন মেয়েটির পরিবার।

বিলকিস আক্তার হত্যাঘটনার এক মাস পেরুতে না পেরুতে জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নের ক্যায়াংঘাট এলাকায় ২৯ মার্চ শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ভারতী চাকমা (৩০) নামে বিবস্ত্র ও অর্ধগলিত অবস্থায় এক মহিলার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ক্যায়াংঘাট ইউনিয়নের করল্যাছড়ি হেডম্যান পাড়ার মৃত অজয় কুমার চাকমার মেয়ে।
ভারতী চাকমার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ভারতী চাকমা সেদিন চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি পৌঁছে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি যাবার পথে পশ্চিম ক্যায়াংঘাট এলাকায় পৌঁছলে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী তাকে একটি সেগুন বাগানে নিয়ে গণধর্ষণের পর হত্যা করে। এরপর তারা লাশটি টেনে নিয়ে গিয়ে পশ্চিম ক্যায়াংঘাটের পাহাড়ি গ্রামের পাশের একটি আমবাগানে ফেলে রেখে যায়। সেখানে লাশটি পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দিলে গত ২৯ মার্চ বিকালে পুলিশ গিয়ে বিবস্ত্র ও অর্ধগলিত অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ভারতী চাকমার ছোটভাই সঞ্চয় চাকমা বাদি হয়ে সন্দেহজনক ৫ জনের বিরুদ্ধে মহালছড়ি থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত সন্দেহজনক আসামি জহুর আলী, পিতা- ফয়সালকে পুলিশ আটক করলেও অপরাপর আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার একমাস পর মহালছড়িতে গত ৭ মে এক কিশোরী অপহৃত হয়। ১২ বছরের ওই কিশোরীকে অপহরণ করার পর দুসপ্তাহের অধিক সময় ধরে আটক রেখে দুর্বৃত্তরা পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হয়। গত ২১ মে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সন্দেহজনকভাবে এলাকায় ঘোরাফেরা করার সময় মেয়েটির বড়ভাই স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় মহালছড়ির মানিক ডাক্তার পাড়ার মৃত মতিউর রহমানের পুত্র মো. আব্দুস ছালাম (২৬) ও নার্সারি পাড়ার মৃত-বেলায়েত গাজীর পুত্র মো. মাইনউদ্দিন (৩৬) নামের দুই অপহরণকারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। অপহরণকারীদের তথ্যের ভিত্তিতে কাটিং টিলা নামক গভীর জঙ্গল থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার মাত্র দুদিনের ব্যবধানে আবারো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো উপজেলার চোংড়াছড়ি হেডম্যান পাড়া গ্রামে। ওই পাড়ার বাসিন্দা ও মহালছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ১৫ বছর বয়সী এক মারমা কিশোরীকে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন প্রলোভনে আকৃষ্ট করে ২৩ মে শুক্রবার সারারাতব্যাপী গভীর জঙ্গলে আটক করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে অভিযুক্তদের দাবি, কিশোরীর সম্মতিতে তারা মেয়েটিকে নিয়ে গেছে। ২৪ মে শনিবার সকালে কাটিংটিলা নামক গভীর জঙ্গল থেকে মেয়েটিকে এলাকাবাসী উদ্ধার করে। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শনিবার সকালে চোংড়াছড়ি গ্রামের বাসিন্দা মো. আলমের পুত্র মো. শাহাজান (২২) ও মো. আরফান গোয়ালের পুত্র মো. সারোয়ার (৩২) কে গ্রেফতার করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার লাবনী চাকমা ইভটিজিং আইনে দুজনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেন।
এলাকায় কয়েকদিনের ব্যবধানে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটায় শংকিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে ভবিষ্যতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা প্রকাশ করছেন তারা।

সৌজন্যে: সুপ্রভাত বাংলাদেশ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More